Logo

শিল্প-সংস্কৃতি

‘কোরিয়ার সাংস্কৃতিক লড়াই বিশ্বে বড় ঘটনা’

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫, ২১:৩৪

‘কোরিয়ার সাংস্কৃতিক লড়াই বিশ্বে বড় ঘটনা’

দুই ভাষায় লিখে বিশ্বজুড়ে সমান খ্যাতি লাভ করেছেন—এমন লেখকের উদাহরণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষাবিদ ও অনুবাদক অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস। তিনি বলেন, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ফরাসি ভাষায়ও লিখেছেন, কিন্তু টিকে আছে তার বাংলাভাষার লেখাগুলোই। বাঙালি জাতি মূলত একভাষিক।

শুক্রবার (১৬ মে) বিকেলে ঢাকার পরিবাগে অনুষ্ঠিত কোরিয়ান সাহিত্য সন্ধ্যায় অংশ নিয়ে তিনি এসব বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে উজান প্রকাশন, সহযোগিতায় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান এলটিআই কোরিয়া।

অধ্যাপক খালিকুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরও আমাদের ভাষানীতি নেই। এটা অনেক আগেই হওয়া দরকার ছিল। সমন্বিত ভাষানীতি ছাড়া একটি রাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক ভিত্তি দৃঢ় হয় না। আমাদের এখনো বহুভাষিক জনগোষ্ঠী গড়ে ওঠেনি, যা তৈরি করতে কয়েক প্রজন্ম সময় লাগবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদ অধ্যাপক মাসউদ ইমরান মান্নু বলেন, কোরিয়ার সাংস্কৃতিক লড়াই বিশ্বজুড়ে আলোচিত। সাহিত্য, চলচ্চিত্র, এনিমেশন, ওয়েবটুন—সবকিছুর মধ্যে সমন্বয় রয়েছে তাদের। আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে সে সমন্বয় নেই।

তিনি বলেন, কোরিয়ার হিরোরা হলিউড-বলিউডের মতো পেশীবহুল নয়। সাধারণ মানুষের মধ্য থেকেই তাঁরা চরিত্র তুলে আনেন। এমনকি তাদের ‘কে-পপ’-এর নারীকেন্দ্রিক চরিত্রগুলোও বিকল্প আখ্যান তৈরি করছে।

কোরিয়ার সাম্প্রতিক সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করেন কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক কুমার চক্রবর্তী। তিনি বলেন, স্থায়ী প্রভাব অর্থনীতি ও সেনাশক্তিতে নয়, সাহিত্য, সংগীত ও সংস্কৃতির কোমল শক্তিতে নিহিত।

কোরিয়ার সাহিত্যের ইতিহাস তুলে ধরেন কবি ও প্রাবন্ধিক চঞ্চল আশরাফ এবং গৌরাঙ্গ মোহান্ত। চঞ্চল আশরাফ বলেন, কোরিয়া তার ইতিহাস ও গৃহযুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে সাহিত্যকে জনমনস্তত্ত্বে প্রোথিত করেছে। এটাই একটি রাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক স্থায়িত্বের দৃষ্টান্ত।

গৌরাঙ্গ মোহান্ত বলেন, প্রাচীন কোরীয় সাহিত্য বৌদ্ধ দর্শনে প্রভাবিত হলেও আধুনিক কোরিয়া পাশ্চাত্যের রূপকবাদ ও বস্তুবাদকে আত্মস্থ করে এক মানবতাবাদী সাহিত্যে পরিণত করেছে।

বাংলা অনুবাদে কোরীয় সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা করেন কবি ও চিত্রকর শামসেত তাবরেজী। তিনি বলেন, অনুবাদ নিজেই এক সাহিত্যকর্ম। কিন্তু অনুবাদ করার আগে নিজের ভাষা ও পরের ভাষা—দুইয়ের ওপরই গভীর দখল থাকতে হয়।

আয়োজক উজান প্রকাশনের পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য দেন লেখক ও সাংবাদিক ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদ। তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটি কোরিয়ার আটটি সাহিত্যবই অনুবাদ করে প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও কে-পপসংক্রান্ত বই।

আয়োজনের শুরুতে কবিতা আবৃত্তি করেন বিজন গুহ ও উম্মে হাবীবা। কথাসাহিত্য থেকে পাঠ করেন হালিমা নূর পাপন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংস্কৃতিকর্মী ডাক্তার শাহনাজ পারভীন।

আলোচনার পর উপস্থাপন করা হয় একটি প্রামাণ্যচিত্র, যেখানে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক, কবি ও সাধারণ পাঠকেরা কোরীয় সাহিত্য পাঠের অভিজ্ঞতা ও সংস্কৃতির ওপর তাদের মতামত তুলে ধরেন।

এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর