Logo

শিল্প-সংস্কৃতি

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১৩:৩১

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের চিত্রশিল্পের পথিকৃৎ, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ (২৮ মে)। ১৯৭৬ সালের এই দিনে, দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভোগার পর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তাঁর জন্ম ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের কেন্দুয়ায়। ছেলেবেলা থেকেই তাঁর ছিল ছবি আঁকার নেশা। বাংলা চিত্রকলার আধুনিক ধারার সূচনা, প্রতিষ্ঠান গঠন এবং শিল্পচর্চার প্রাতিষ্ঠানিক বিস্তারে জয়নুল আবেদিন ছিলেন অগ্রদূত।

১৯৩৩ সালে তিনি কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলে ভর্তি হয়ে ১৯৩৮ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। একই বছর সর্বভারতীয় চিত্র প্রদর্শনীতে জলরঙে আঁকা চিত্রের জন্য স্বর্ণপদক লাভ করেন, যা তাঁকে উপমহাদেশজুড়ে পরিচিত করে তোলে।

১৯৪৩ সালের ভয়াবহ বঙ্গীয় দুর্ভিক্ষ তাঁর শিল্পজীবনের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সংবেদনশীল পর্ব। কঙ্কালসার মানুষ, মৃতদেহ, কাক ও ধ্বংসপ্রাপ্ত জীবনের করুণ চিত্র তাঁর আঁকায় ফুটে ওঠে। এই সব রেখাচিত্রই আজ ‘দুর্ভিক্ষের রেখাচিত্র’ নামে বিশ্বখ্যাত। সামাজিক দায়বদ্ধতা, মানবিক বেদনা ও নির্যাসিত বাস্তবতার মিশেলে এই ছবিগুলো আজও দর্শকের হৃদয় আন্দোলিত করে।

দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন এবং জনসন রোডে প্রতিষ্ঠা করেন ‘গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউট’—যেটি আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। প্রথমে মাত্র ১৮ জন ছাত্র ও ৬ জন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই প্রতিষ্ঠানই পরবর্তীতে দেশের শিল্প আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম প্রথমে সেগুনবাগিচা ও পরে শাহবাগে স্থানান্তর হয়।

জয়নুল আবেদিন ছিলেন ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ। তিনি শুধু প্রতিষ্ঠান গড়েননি, গড়েছেন শিল্পচর্চার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল, প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন’ এবং নিজ জেলা ময়মনসিংহে ‘জয়নুল সংগ্রহশালা’।

চারুকলার সাবেক অধ্যাপক শিল্পী রফিকুন নবী বলেন, ‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন শুধু একজন মহান শিল্পীই নন, তিনি নিজে একটি প্রতিষ্ঠান। তার ছাত্র হতে পেরে আমি গর্বিত।’

অধ্যাপক মামুন কায়সার জানান, জয়নুল আবেদিন চিন্তা করতেন, আমি একা শিল্পী হয়ে কী করবো, বরং এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ি যেখানে আমার মতো আরও অনেক শিল্পীর জন্ম হবে। 

শিল্পচর্চায় তিনি দেশীয় ঐতিহ্য, লোকজ ধারা, ইউরোপীয় বাস্তববাদ এবং এশীয় রীতি—সবকিছুর সম্মিলন ঘটান। তাঁর নির্দেশনায় শিল্পীরা বাংলাদেশের নদী, নৌকা, গ্রাম্য জীবন, লোকজ অলংকারের নকশা ও আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে চিত্র নির্মাণে উৎসাহ পেতেন। 

প্রয়াত শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী জানিয়েছিলেন, কীভাবে জয়নুল স্যার তাঁকে বলেছিলেন, ‘নৌকা আঁকতে হলে সিলেট অঞ্চলের গয়না নৌকা দেখে এসো’।

বাংলাদেশে চারুকলা শিক্ষার জনক হিসেবে জয়নুল আবেদিনের অবদান অবিস্মরণীয়। 

এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর