Logo

শিল্প-সংস্কৃতি

তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনির : স্বপ্ন ও সৃজনের অসমাপ্ত যাত্রা

Icon

ফারজানা জিতু

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৩:৫১

তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনির : স্বপ্ন ও সৃজনের অসমাপ্ত যাত্রা

এআই দিয়ে তৈরি ছবি

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে কিছু নাম চিরকাল আলো ছড়ায়। সেই উজ্জ্বল নক্ষত্রদের মধ্যে দুজন ছিলেন তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনির। তাঁরা ছিলেন সৃজনশীলতার প্রতীক, যারা দেশের চলচ্চিত্র ও গণমাধ্যমে নতুন দিশা উন্মোচন করেছিলেন।

তারেক মাসুদ : সিনেমার কবি
১৯৫৬ সালের ৬ ডিসেম্বর ফরিদপুরের নওয়াপাড়ায় জন্ম নেওয়া তারেক মাসুদ শৈশব থেকেই শিল্প, সাহিত্য ও ইতিহাসের প্রতি গভীর অনুরাগী ছিলেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন— সিনেমা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়; বরং এটি সমাজকে সচেতন করে পরিবর্তনের পথে পরিচালিত করতে পারে।

তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জনকারী চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’ মুক্তিযুদ্ধের ব্যথা ও গ্রামীণ জীবনের বৃত্তান্ত ধারণ করে, যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে বিশ্বমঞ্চে পরিচিতি এনে দেয়। চলচ্চিত্র নিয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরে রেবিয়েছেন তিনি। তাই ‘সিনেমার ফেরিওয়ারা’ নামে পরিচিতিও পেয়েছিলেন। 

তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ছবি হলো ‘আদম সুরত’, ‘অন্তর্যাত্রা’ এবং ‘রানওয়ে’, যেগুলো বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতাকে মানবিক ও বাস্তবধর্মী উপস্থাপনার মাধ্যমে দর্শকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।

মিশুক মুনির : লেন্সের জাদুকর
মিশুক মুনির ছিলেন প্রথিতযশা চিত্রগ্রাহক ও গল্পকার, যিনি ক্যামেরার মাধ্যমে জীবনের সত্যিকারের চিত্র ফুটিয়ে তুলতেন। ১৯৫৯ সালে জন্ম নেওয়া এই প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশের পাশাপাশি বিবিসি, সিএনএনসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কাজ করেছেন।

তাঁর প্রতিটি ফ্রেমে ফুটে উঠত সত্যনিষ্ঠা ও মানবিকতা। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সত্য প্রকাশে তিনি ছিলেন এক অদম্য সৈনিক। তারেক মাসুদের সঙ্গে তাঁর সৃজনশীল বন্ধন বাংলাদেশের শিল্প জগতে এক অনন্য উদাহরণ।

১৩ আগস্ট ২০১১ : অন্ধকারতম দিন এক
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট, ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় ফেরার পথে ‘কাগজের ফুল’ ছবির লোকেশন দেখে ফেরার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনিরসহ আরও তিনজন প্রাণ হারান। মুহূর্তেই এই দুঃসংবাদ ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি অঙ্গন স্তব্ধ হয়ে যায়, শোকে ডুবে যায় গোটা জাতি।

এটি শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি ছিল না, বরং বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও গণমাধ্যমে এক অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি করে।

তাঁদের উত্তরাধিকার
তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনির প্রমাণ করেছেন— সংস্কৃতি ও শিল্প মানুষের আত্মাকে জাগ্রত করার শক্তি রাখে। তাঁদের অসমাপ্ত স্বপ্ন আজও নতুন প্রজন্মের চলচ্চিত্র নির্মাতা, সাংবাদিক ও শিল্পীদের জন্য প্রেরণার উৎস। তাঁদের কাজ আমাদের মনে করিয়ে দেয়— সত্য ও মানবিকতাকে কেন্দ্র করে শিল্প সৃষ্টি সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিবাদের মাধ্যম।

তাঁরা আজ আর নেই। কিন্তু তাঁদের জ্বালানো আলো আজও আমাদের পথ দেখায়।

লেখক : হস্তশিল্প উদ্যোক্তা; ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শিল্পপুরাণ

এমএইচএস

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর