-689ece3bba254.jpg)
বাংলা সাহিত্যের সমসাময়িক কবি মনসুর আজিজ আজ ৫২ বছরে পদার্পণ করলেন। চাঁদপুর জেলার হাইমচরে ১৯৭৪ সালের ১৫ আগস্ট জন্ম নেওয়া এই কবি ছড়া, গান, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নিবন্ধ এবং অনুবাদসহ সাহিত্যের নানা শাখায় সমানতালে অবদান রেখেছেন। তিনি লিটলম্যাগ ‘আড্ডাপত্রের’ সম্পাদক এবং সাহিত্য সংগঠন রাইটার্স অব বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
মনসুর আজিজের কবিতার অন্যতম বিশেষত্ব হলো তার ভাষার ছন্দ এবং বস্তুনিষ্ঠ চিত্রকল্প। প্রেম, প্রকৃতি, দ্রোহ, ইতিহাস ও মানবিক বোধের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকতার অনুভূতিও তার কবিতায় প্রতিফলিত হয়। যেমন তার কবিতা ‘মানুষের চারাগাছ’-এ তিনি লেখেন :
‘একটি বীজ বেড়ে ওঠে; সতেজ সবুজ
সৃষ্টির পর সৃষ্টি, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ প্রান্তর
ছায়াঘন বন পাখির কলতান ফুলের সৌরভ
যার সৌন্দর্য সুষমায় মোহিত হয় ঝর্ণা; হ্রদের ধূসর ফেনা’
এই চিত্রকল্পে গ্রামীণ জীবনের প্রকৃত সৌন্দর্য এবং মানুষের শ্রম ও কল্পনার সংযোগ ফুটে ওঠে। শিশুকিশোরদের জন্য লেখা ছড়ার মধ্যেও মনসুর আজিজ গ্রামের প্রকৃতি ও দেশপ্রেমকে তুলে ধরেছেন। তাঁর ছড়ার বই ‘সবুজ পাতা আঁকতে জানি’ শিশু মনের মধ্যে দেশপ্রেম ও প্রকৃতির সৌন্দর্য পরিচয় করায়।
কবি শুধু প্রেম ও প্রকৃতিই নয়, সমসাময়িক সামাজিক বাস্তবতাকেও কবিতায় তুলে ধরেছেন। ‘আত্মার বসতি’ কবিতায় তিনি লিখেছেন :
‘আমাকে পৌঁছে দাও অনন্তের কাছে
যেখানে আত্মার সঙ্গে আত্মার বসতি
কেরামতি ভুলে গেছি বহুকাল আগে
বুকে নেই মোজেজার কারিশমা’
এতে জীবনের অস্থিরতা, মানুষের হতাশা এবং অনন্তের সন্ধানের চিত্র উঠে এসেছে। মানবিক ও রাজনৈতিক বিষয়ক ভাবনাও তাঁর কবিতায় এক গভীর ধারা হিসেবে ছড়িয়ে আছে।
মনসুর আজিজ ২৫টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে অতলান্ত নীলচোখ (২০০২), মনুষ্যত্বের ল্যাম্পপোস্ট (২০০৯), জল ও জোয়ারের কাব্য (২০১৪), আত্মধ্যানের আসন (২০২০) এবং করতলে বৃক্ষের দাগ (২০২৫)। এছাড়া শিশুসাহিত্য, কিশোর গল্প, উপন্যাস ও অনুবাদেও সমান অবদান রেখেছেন।
তার সাহিত্যকর্ম দেশ-বিদেশে সমাদৃত। পাঠক ও সমালোচকরা তার কবিতার ছন্দ, লোকজ উপাদান, ইতিহাস ও মিথের সংমিশ্রণ, এবং মানবিক ভাবনার গভীরতাকে উচ্চ প্রশংসা করেছেন। এই স্বীকৃতির অংশ হিসেবে তিনি পেয়েছেন সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র লেখক সম্মাননা (২০০৮), পদ্মরাগ সাহিত্য পুরস্কার (২০১৫), অগ্রণী ব্যাংক শিশু একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরস্কার (১৪২১), পলাশী সম্মাননা (২০১৯, ভারত), দেশজ পুরস্কার (২০১৯) এবং সৈয়দ আলী আহসান পদক (২০২০)।
তার কবিতা ও অন্যান্য লেখালেখি নিয়ে দেশ-বিদেশের স্বনামখ্যাত প্রায় অর্ধশত কবি-লেখক প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- কবি আল মাহমুদ, কথাশিল্পী জুবাইদা গুলশান আরা, শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম, কবি মতিন বৈরাগী, কবি জাফরুল আহসান, কবি মাহমুদ কামাল, কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, কবি হাসান আলীম, গবেষক ড. মাহফুজ পারভেজ, গবেষক প্রবীর বিকাশ সরকার, স.ম. শামসুল আলম, কবি ও কথাসাহিত্যক মুজতাহিদ ফারুকী, কবি জহিরুল ইসলাম, কবি আমিনুল ইসলাম, ছড়াকার জগলুল হায়দার, ড. শাহনাজ পারভীন, কবি নাসের হোসেন, শিশুসাহিত্যিক দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য, কবি ও গবেষক পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, কবি বিশ্বজিৎ মন্ডল, কবি কবিরুল ইসলাম কঙ্ক, কথাসাহিত্যিক সৌরভ হোসেন; কবি মনিরুজ্জামান পলাশ, কবি সব্যসাচী সেন গুপ্ত, কবি অব্যয় অনিন্দ্য, কবি চন্দ্রশিলা ছন্দা, কথাসাহিত্যিক পিন্টু রহমান, কবি এনামুল হক পলাশ, কবি আফসার নিজাম, কবি তাজ ইসলাম, কবি নাসিমা হক মুক্তা,ছড়াকার সেলিম এমরাজ, কবি রায়ান নূর, কথাশিল্পী সালেহ বায়েজীদ, কবি প্রদীপ ব্যানার্জী, কবি পলিয়ার ওয়াহিদ, কবি জব্বার আল নাঈম, কবি আশিক বিন রহিম, কথাসাহিত্যিক সোয়েব সাইফী; কবি ইমরান মাহফুজ, কবি মোস্তফা হায়দার, কবি শিমুল জাবালী, শিশুসাহিত্যিক বোরহান মাসুদ উল্লেখযোগ্য।
কবির রচনাগুলো বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি পাঠককে ভাবনার গভীরে পৌঁছে দেয়। তাঁর লেখা কবিতার মতোই মানুষের হৃদয়েও জন্মদিনের এই দিনে নতুন ভাবনার আলো ছড়াবে।
এমএইচএস