স্লোগানের কবি নাজমুল হক নজীরের ৭১তম জন্মবার্ষিকী

আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩০
-68d4e19ee76f5.png)
নাজমুল হক নজীর
গত শতাব্দীর সত্তর দশকে বাংলা সাহিত্যে যে কজন কবি সৃষ্টিশীলতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন, তাঁদের একজন নাজমুল হক নজীর। আজ তাঁর ৭১তম জন্মবার্ষিকী। বরেণ্য এই কবি ১৯৫৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার শিয়ালদী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
স্লোগানের কবি নাজমুল হক নজীর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি। বলা চলে, কবিতার জন্য তিনি একজীবন ব্যয় করেছেন। তাঁর কবিতায় মধ্যবিত্তের জীবনচিত্র আর সমাজচিত্র শিল্পদৃষ্টিতে দারুণভাবে পরিস্ফুটিত হয়েছে। কবিতায় মিথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে তিনি পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন। কবিতার শব্দচয়নে স্বতন্ত্রতা, সারল্য ও জীবনদর্শনের অপূর্ব সমন্বয় করেছেন এই কবি। তিনি সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে কলম চালিয়েছেন নিরন্তর। গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণের আকাঙ্ক্ষায় তিনি ছিলেন কলমযোদ্ধা।
কবির ৯টি কাব্যগ্রন্থ, ৩টি ছড়া, ১টি ইতিহাসগ্রন্থ, ১টি সম্পাদিত গ্রন্থ, নির্বাচিত কবিতা ও কবিতাসমগ্র প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ— নোনা জলের বাসিন্দা, স্বৈরিণী স্বদেশ, স্বপ্নবাড়ি অবিরাম। সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীদের মধ্যে মতুয়া মতবাদের অনুসারীদের জন্য কবি বেশ কিছু গান লিখেছেন।
তাঁর লেখা আয়নায় আপন অবয়ব, নোনা জলের বাসিন্দা, ভোর হতে আর কতোক্ষণ, প্রেমের দাবিতে বলছি, বাঙালির ছাড়পত্র, অনন্যার জন্য গীতিকাব্য আজও পাঠককে আন্দোলিত করে।
নাজমুল হকের সবচেয়ে আলোচিত কাব্যগ্রন্থ— নোনা জলের বাসিন্দা। স্বৈরিণী স্বদেশ, কালো জোছনার এক চুমুক, কার কাছে বলে যাই, ঘুরে দাঁড়াই স্বপ্নপুরুষ, স্বপ্নবাড়ি অবিরাম, এভাবে অবাধ্য রঙিন, ভিটেমাটি স্বরগ্রাম, বকুল ভেজা পথঘাট— প্রভৃতি তাঁর কাব্যগ্রন্থ। সাধনার ফসল, আবার স্লোগান, ইষ্টি কুটুম মিষ্টি কুটুম— ছড়ার বই। সম্পাদিত গ্রন্থ— গাজী খোরশেদুজ্জামানের কিশোর কবিতা। ফরিদপুর অঞ্চলের ইতিহাসবিষয়ক গবেষণাগ্রন্থ আমাদের ফরিদপুর-১ অঞ্চল।
পেশাগত পরিচয়ে নাজমুল হক নজীর সংবাদপত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে জাতীয় দৈনিকে কাজ করেছেন তিনি। দীর্ঘদিন পাক্ষিক নজীর বাংলার প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। দেশে ও দেশের বাইরে লিটল ম্যাগাজিনে নিয়মিত কবিতা লিখেছেন। তাঁর প্রথম কবিতা হাওয়া থেকে পাওয়া এবং প্রথম কাব্যগ্রন্থ স্বৈরিণী স্বদেশ।
সাহিত্যে অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন ভারতের রাহিলা সাহিত্য পুরস্কার, নজরুল পদক, কবি শামসুর রাহমান স্মৃতি পুরস্কার, কবি খান মুহাম্মদ মঈনুদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার, কবি গোবিন্দচন্দ্র দাস স্মৃতি পদক, শ্রী হরিদর্শন পুরস্কার, আমীর প্রকাশন সাহিত্য পুরস্কার, গীতিকার ক্লাব সম্মাননা, এশিয়া ছিন্নমূল মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশন সম্মাননা, মেরিট অব ডিএক্স পুরস্কার, নির্ণয় কবি বাবু ফরিদী স্মৃতি পদক, মির্জা আবুল হোসেন পদক ও পাঠক আন্দোলন বাংলাদেশ সাহিত্য পুরস্কার প্রভৃতি।
কবি ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর ঢাকায় প্রয়াত হন। পরদিন তাঁকে তাঁর চেনা জনপদ ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ঝর্ণাধারায় সমাহিত করা হয়।
রাকিবুল/এইচকে