Logo

শিল্প-সংস্কৃতি

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে ছোটভাই আহসান হাবীবের স্মৃতিচারণ

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৫২

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে ছোটভাই আহসান হাবীবের স্মৃতিচারণ

ছবি : আহসান হাবীবের ফেসবুক পোস্ট থেকে

আজ বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৭তম জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে তার ছোটভাই, ‘উন্মাদ’-এর সম্পাদক ও লেখক আহসান হাবীব বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ফেসবুকে একটি স্মৃতিচারণমূলক গল্প শেয়ার করেছেন।

আহসান হাবীবের স্মৃতিতে উঠে আসে ১৯৭৫ সালের মেট্রিক পরীক্ষা সময়ের একটি ঘটনা। তিনি লিখেছেন— 

“১৯৭৫ সাল। আমার মেট্রিক পরীক্ষা চলছে। বাংলা ফার্স্ট পেপার সেকেন্ড পেপার পরীক্ষা হয়ে গেছে। ইংরেজী ফার্স্ট পেপার পরীক্ষাও হয়ে গেছে। পরশু সেকেন্ড পেপার পরীক্ষা। বাবর রোডের বাসায় চিলেকোঠায় বসে পড়ছি। রাত বাজে দুটো। এর মধ্যে বড় ভাই এসে হাজির। এসেই বলল, ‘যা তো, দুটো সিগারেট নিয়ে আয়।’ আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, রাত দুটোয় সিগারেট আনতে যেতে হবে। আমার যে মেট্রিক পরীক্ষা, তার কোনো গুরুত্বই নেই। কী আর করা! বেজার মুখে সিগারেট আনতে ছুটলাম। সিগারেটের দোকান খোলা থাকে। দুটো ব্রিস্টল সিগারেট কিনলাম। ফিরে এসে দেখি সে আমার ইংরেজি গ্রামার বই হতে নিয়ে বসে আছে, মানে ঘাটাঘাটি করছে। মনে মনে ভাবলাম, সাড়ে-সর্বনাশ, এখন যদি ট্রান্সলেশন ধরে বসে তাহলে তো আমার কম্মো সাবার। ঠিক তাই হল। বলল, ‘তারা বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেলেছিল।’ এর ইংরেজী কি হবে? আমি বললাম

— hey played football under the rain.
— হয় নাই, they played football in the rain.

আরও দুটো ট্রান্সলেশন ধরল। সে দুটাও মনে হয় ভুল করলাম। আসলে ভয়ের চোটে ভুল করছিলাম। সে দেখলাম ভ্রু কুঁচকে ফেলেছে। বলল, ‘সাদা কাগজ আছে?’

— আছে।
— লেখ ‘আমি অতি অবশ্য ইংরেজিতে ফেল করিব’। লিখেছিস?
— হ্যাঁ লিখেছি।
— দেখা।

দেখালাম। সে পর পর দুই ব্রিস্টল সিগারেট ধ্বংস করে ভ্রু কুঁচকেই চলে গেল। আমি মেজাজ খারাপ করে বসে থাকলাম। তবে না ফেল করিনি। ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েই পাশ করেছিলাম মোহাম্মদপুর স্কুল থেকে। 

মজার ব্যাপার হচ্ছে, পরবর্তীতে বড় ভাইয়ের মেট্রিকের মার্কশিট দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। মনে আছে সে তখন মেট্রিকে বোর্ডে সেকেন্ড হয়ে পাশ করেছিল। পেপারে তার ছবি ছাপা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে মার্কশিটে দেখি সব সাবজেক্টে তার লেটার মার্ক শুধু ইংরেজী সেকেন্ড পেপার মাত্র ৩৪! যাকে বলে কানের পাশ দিয়ে গুলি। আর আমি পেয়েছিলাম ৫৪... তার থেকে ২০ বেশি... হা হা হা। 

তবে তার এই ৩৪ পাওয়ায় সে নাকি ভিতরে ভিতরে রেগে গিয়েছিল। রাগের চোটে আস্ত একটা ডিকশনারির সব শব্দ সে মুখস্ত করে ফেলেছিল দু-তিন মাসে! ভাবা যায়? 

আহা, আমার বড় ভাইটা নেই। বেঁচে থাকলে এই ঘটনাটা পারিবারিক কোন আড্ডায় তার সাথে শেয়ার করা যেত এখন। ‘আমি অতি অবশ্য ইংরেজিতে ফেল করব’ লেখা কাগজটা হয়ত খুঁজলে এখনো পাওয়া যাবে। দেখাতাম। সে কী বলত? কে জানে, তার কোনো হাসির নাটকের হয়ত বিষয় হয়ে যেতাম! 

ব্যাপারটা এমন না যে পরে আমি ইংরেজির জাহাজ হয়ে গেছি। এখনো ডুবো জাহাজই আছি। তবে ভুল করলে এখন আর সুধরে দেয়ার মানুষটা যে আর নেই। শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ... আমাদের দাদাভাই।”

হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে বাংলা সাহিত্যে এবং সংস্কৃতিতে অনন্য অবদান রেখেছেন। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে পরিচিত হন।

তিনি রচনা করেছেন তিন শতাধিক গ্রন্থ, যেগুলো বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে আছে ‘মধ্যাহ্ন’, ‘জোছনা ও জননী’, ‘লীলাবতী’, ‘কবি’, ‘বাদশাহ’, ‘নামদার’। চলচ্চিত্রে ‘আগুনের পরশমণি’ (১৯৯৪) তাকে এনে দেয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

আজ জন্মদিন উপলক্ষে গাজীপুরের নুহাশ পল্লীতে দিনব্যাপী বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাঁকে স্মরণ করা হচ্ছে।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

দিবস উদযাপন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর