Logo

ক্যাম্পাস

উৎসবমুখর আয়োজনে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দ শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলা

Icon

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:১৮

উৎসবমুখর আয়োজনে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দ শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলা

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে স্বাগত জানাতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী আয়োজনের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং স্থানীয় দর্শনার্থীরা এই উৎসবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। 

সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হওয়া এই শোভাযাত্রা ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে পুনরায় প্রশাসনিক ভবনে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা বৈশাখী সাজে সজ্জিত হয়ে বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করেন। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নৃত্য, রঙ-বেরঙের মুখোশ, চরকি, টেপা পুতুল, পাখির শিল্পকাঠামো এবং হস্তশিল্পের নানা নিদর্শন শোভাযাত্রাকে আরও জীবন্ত করে তোলে। এই বর্ণিল উপস্থিতি বাংলা নববর্ষের আনন্দকে ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে দেয়।

শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গাহি সাম্যের গান’ মঞ্চে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত সকলকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, বাংলা নববর্ষ আমাদের প্রাণের উৎসব। এটি শুধু একটি দিনের উদযাপন নয়, বরং বাঙালির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ঐক্যের প্রতীক। এই উৎসব সকল ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণির মানুষকে একত্রিত করে।

তিনি বাংলা নববর্ষের ঐতিহাসিক পটভূমি তুলে ধরে বলেন, ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে ফসলি হিজরি প্রবর্তনের মাধ্যমে বাংলা বর্ষপঞ্জির শুরু হয়। পহেলা বৈশাখ আমাদের পুরোনো দুঃখ-কষ্ট ভুলে নতুন আশা ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে।

উপাচার্য আরও বলেন, বাংলা নববর্ষ আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে। এটি আমাদের ক্ষুদ্রতা ও সংকীর্ণতার বাইরে গিয়ে বৃহত্তর জীবনচেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। নববর্ষের চেতনা আমাদের ঐক্যবদ্ধ রাখে এবং জাতীয় জীবনে নির্মল আনন্দের সঞ্চার করে।

 

তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন, ‘এল এলো রে বৈশাখী ঝড় এল এল রে, বৈশাখী ঝড় এল এল মহীয়ান সুন্দর।’

শোভাযাত্রার পর উপাচার্য বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করেন। মেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে মোট ২৬টি স্টল স্থাপন করা হয়। স্টলগুলোতে ঐতিহ্যবাহী খাবার, হস্তশিল্প, পোশাক, গহনা এবং শিল্পকর্ম প্রদর্শিত ও বিক্রি হয়। মেলা পরিদর্শনে আগত দর্শনার্থীরা বাঙালি সংস্কৃতির বৈচিত্র্য উপভোগ করেন। 

দুপুরে ‘গাহি সাম্যের গান’ মঞ্চে উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা গান, নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি ও নাট্যাংশ পরিবেশন করে দর্শকদের মুগ্ধ করেন। সন্ধ্যায় বৈশাখী গান, লোকগান ও লোকনৃত্যের আয়োজন ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ আরও বাড়িয়ে দেয়। রাতে কিচ্ছাপালার মাধ্যমে বাংলা নববর্ষ বরণের আনুষ্ঠানিকতা সমাপ্ত হয়। 

 

নববর্ষের আগের দিন, রোববার, চৈত্রসংক্রান্তি উদযাপনের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে উপাচার্যের উদ্বোধনের মাধ্যমে ঘুড়ি ও ফানুস উড়ানোর আয়োজন করা হয়। রঙিন ঘুড়ি আর ফানুসে আকাশ ভরে উঠলে ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ আরও প্রাণবন্ত হয়। এই আয়োজন শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি করে। 

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী, কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এ. এইচ. এম কামাল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. বখতিয়ার উদ্দিন, চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. তপন কুমার সরকার, আইন অনুষদের ডিন মুহাম্মদ ইরফান আজিজ, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান, প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমান, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মো. হাবিব-উল-মাওলা, চারুকলা বিভাগের প্রধান নগরবাসী বর্মনসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। 

সাইফুল ইসলাম/বিএইচ 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর