জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ৩ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার অভিযোগ

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৫, ১১:২৯

ছবি : বাংলাদেশের খবর
২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন সক্রিয় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে সাবেক এক ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে বাঁধা প্রদানের কারণ দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ২১০ জনের সঙ্গে একত্রে মামলা করা হয়। গত ৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাংলা বিভাগের প্রথম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
মঙ্গলবার (৬ মে) বিকেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী তিন শিক্ষার্থী এই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। তারা হলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. আজিজুল ইসলাম, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী লিমন আহমেদ এবং আইন ও বিচার বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম সংগ্রাম।
অভিযোগকারী শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম সংগ্রাম বলেন, ‘আমরা আন্দোলনের সময় রাজপথে ছিলাম, গুলির মুখেও দাঁড়িয়েছি। অথচ আজ আমাদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে-এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক। আমি একসময় ছাত্রলীগ করলেও ১৮ জুলাই ২০২৪ সালে আমি পদত্যাগ করেছিলাম, যার প্রমাণও রয়েছে। আমি কোনো সহিংস কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলাম না, বরং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে আন্দোলন করেছি।’
শিক্ষার্থী মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘যিনি মামলা করেছেন তাকে আমি কখনও দেখিনি, এমনকি উনি সম্ভবত আমাকেও চেনেন না। তাই মামলায় আমার নাম ভুলভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে ক্যাম্পাসে বাধার মুখেও আমরা আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছি, যেখানে আমাদের শিক্ষক ইমদাদুল হুদা ও মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এ সংক্রান্ত প্রমাণ গণমাধ্যমেও রয়েছে। পরদিন ৫ আগস্ট ঢাকায় গিয়ে আমরা আন্দোলনে অংশ নিই এবং অনেকেই আহত হন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কোনো প্রমাণ থাকলে তা জনসমক্ষে উপস্থাপন করা হোক।’
আরেক শিক্ষার্থী লিমন আহমেদ বলেন, ‘আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে আমাকে ছাত্রলীগ থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, এখন ছাত্রদল থেকে মামলা করা হচ্ছে। ১৬ জুলাই আমি আমার মাকে ফোন করে জানিয়েছিলাম যে আন্দোলনে যাচ্ছি-কি হবে জানি না। অথচ এখন আমাদের প্রমাণ দিতে হচ্ছে যে আমরা আন্দোলনে ছিলাম, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। মো. আশিকুর রহমান নামে যে ব্যক্তি মামলা করেছেন, তার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই ভুল নামে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা করা হয়েছে।”
মামলার বাদি মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কারা ছিল, ছাত্রলীগ করেও আন্দোলন কারা করেছে নির্দিষ্টভাবে বুঝার উপায় নেই। যারা দাবি করছে নিরপরাধ, তাদের কারো সাথে লেনদেন বা সুপারিশ করার দরকার নেই। অযথা হয়রানি করার উদ্দেশ্য আমার নেই। আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করলেই হবে, তাদের নাম মামলা থেকে বাদ দেয়া হবে। সঠিক তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও সহযোগিতা চাই।’
উল্লেখ্য, ৪মে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আশিকুর রহমান ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিশিয়াল (দ্রুত বিচার) ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং ছাত্রলীগ নেতাসহ মোট ২১০ জনকে আসামি করা হয়। বেঞ্চ সহকারী মো. আজমত আলী জানিয়েছেন, বিচারক নাসিমা খাতুন অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মো. সাইফুল ইসলাম/এমআই