Logo

ক্যাম্পাস

ডিআইইউ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, দুর্ঘটনা নাকি অন্য কিছু?

Icon

ডিআইইউ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫, ১৫:৫২

ডিআইইউ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, দুর্ঘটনা নাকি অন্য কিছু?

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৫৩ ব্যাচের (২য় শিফটের) শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান (২৭) ফোন খুঁজতে গিয়ে নিহত হয়েছেন।

সোমবার (১৯ মে) রাত ১২টা থেকে ২টার মধ্যে রাজধানীর দিয়াবাড়ি মেট্রোরেল ১২৫ নম্বর পিলারের কাছে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দিয়াবাড়ি থেকে কয়েকজন ছাত্র তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পল্লবী থানার কাছে লাশ হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নিহত মাহমুদুল হাসান নওগাঁর সাপাহার উপজেলার আশড়ন্দ গ্রামের আইহাই উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইদ্রিস মাস্টারের ছেলে। তিনি ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ১ নম্বর হলে থাকতেন।

হোস্টেলের কেয়ারটেকার লিটন জানান, সকাল ১১টার দিকে মাহমুদুল হোস্টেল থেকে বের হলে আমি তাকে জিজ্ঞেস করি কোথায় যাচ্ছ। মাহমুদুল বলেন, তার ফোন হারিয়ে গেছে। সেই ফোন খুঁজতে বের হচ্ছি। এরপর সে হোস্টেলে ফেরেনি। তিনদিন পর জানতে পারি সে মারা গেছে। তার মৃত্যু স্বাভাবিক নাও হতে পারে বলে তিনি জানান।

হোস্টেলের সিভিল বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, এ মৃত্যু কখনোই স্বাভাবিক হতে পারে না। ফোন হারানোর পরের তিন দিন সে কোথায় ছিল-এ প্রশ্ন বারবার উঠছে।

মাহমুদুল হাসানের রুমমেট সাদিক জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমি রুমে আসি। পরে দেখি মাহমুদুল ভাই নিজের সঙ্গে একা একা কথা বলছিলেন। আমার কাছে বিষয়টি অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক। মনে হলো তার কোনো সমস্যা আছে। আমি প্রশ্ন করতেই তিনি অস্বীকার করলেন। পরে ঘুমানোর আগে তিনি ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলেন। ঘুম থেকে ওঠার পর আমাকে জানান তার ফোন হারিয়ে গেছে, খুঁজতে বের হচ্ছেন। এ মৃত্যুটি আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয় না।

তার মৃত্যুর ঘটনায় সঠিক তদন্তের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম চাঁদ বলেন, ফোন খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া এবং তার মৃত্যু কখনোই স্বাভাবিক হতে পারে না। নিখোঁজ হওয়ার পরের তিনদিন সে কোথায় ছিল, সেই প্রশ্ন বারবার উঠে আসছে। আমরা চাই, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এ মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করা হোক।

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুল বাসেত বলেন, আমি সকাল ১০টার দিকে ‘অ্যাকসিডেন্ট’-এর কথা জানতে পারি। পরে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর মাজেদুল ইসলাম ও ডিপার্টমেন্টের কো-অর্ডিনেটর আবিদ হাসানকে সেখানে যেতে বলি। তারা আমাকে তার মৃত্যুর খবরটি দুপুর ১২টায় নিশ্চিত করে। আমরা ডিপার্টমেন্ট, ভিসি ও বোর্ড অব ট্রাস্টির সঙ্গে কথা বলে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।

সহকারী প্রক্টর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর আতিকুল ইসলাম মামুন বলেন, ঘটনাটা জানতে পারি সকাল ১০টার দিকে। ‘ডক্টরস স্যার’কে বিষয়টি অবহিত করি। প্রক্টর স্যার আমাকে থানায় যেতে বলেন। থানার এসআই মনির ঘটনাটি প্রাথমিকভাবে ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ বলে নিশ্চিত করেন।

তিনি আরও বলেন, ঘটনাটির সঠিক ব্যাখ্যা জানতে হলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০ হাজার টাকা সহায়তা করা হয়েছে। পরবর্তীতে কী হবে, সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।

নিহতের বাবা ইদ্রিস আলী মাস্টার বলেন, আমার ছেলে মাহমুদুল ঢাকায় মারা গেছে। ‘অ্যাকসিডেন্ট’ নাকি খুন হয়েছে সেটা আমরা বলতে পারব না। আমরা ঢাকা যেতে পারিনি। আমার চাচাতো ভাই রবিউল মাহমুদুলের লাশ ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এসেছে। রাতেই আমরা মাহমুদুলের লাশ দাফন করি। যেহেতু আমার ছেলে দুনিয়াতে নেই, এখন আমরা বিচার চাই না।

পল্লবী থানার অফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলাম বলেন, কুর্মিটোলা হাসপাতালে একটা লাশ এসেছে-এমন সংবাদ পেয়ে দ্রুত একটা টিম সেখানে যায়। গিয়ে দেখতে পায় কিছু লোক তাকে রেখে চলে গেছে। চিকিৎসক আমাদের প্রাথমিকভাবে বলেন, এটা ‘অ্যাকসিডেন্ট’ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। পরবর্তীতে আমরা লাশের পরিচয় পাই।

তিনি আরও বলেন, পোস্টমর্টেম শেষে লাশ তার আত্মীয় রবিউলের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এখনও তার পরিবার থেকে কোনো মামলা করা হয়নি।

এইচকে/এমবি 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর