জকসু নিয়ে জবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আলোচনা সভা

জবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫, ২১:০৭

ছবি : বাংলাদেশের খবর
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের উদ্যোগে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় শিক্ষার্থী সমাজের কাঙ্ক্ষিত সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত, গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাসের লক্ষ্যে 'জকসু: কী, কেন ও কীভাবে?' শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (২১ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড রইছ উদ্দিন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ সহ শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল, ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক, ডিবেটিং সোসাইটি, শিক্ষার্থী ফোরাম এবং সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় বক্তারা, জকসুর গুরুত্ব, কার্যপরিধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জকসু) নীতি নির্ধারণ ও আইন প্রণয়নে করা খসড়ার বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আলোচনা করেন তারা।
জাস্টিস ফর জুলাইয়ের সাবেক আহ্বায়ক সজিবুর রহমান বলেন, যদি ছাত্র সংসদ থাকতো তাহলে জুলাইয়ে আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসার প্রক্রিয়া আরও ভালো হতো। অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের মিডেল পয়েন্টের জন্য, একটি অরাজনৈতিক ব্যানারের জন্য ছাত্রসংসদ দরকার। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্ব গঠন করতে ছাত্র সংসদের বিকল্প নেই। এটা হলে বাংলাদেশকে একক স্টেকহোল্ডারের কাছে বিকিয়ে দিতে হবে না।
শাখা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মাসুদ রানা বলেন, প্রত্যেকটি আন্দোলন সংগ্রামে ডাকসু এবং ছাত্র সংসদ গুলোর ভূমিকা ছিল। রাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের সমস্যা গুলো তার সংগঠনের প্রতিনিধিকে জানাতে পারে। কিন্তু অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যা গুলো জানানোর কোনো প্রতিনিধি পান না। ছাত্র সংসদ সেই শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করে। রাজনৈতিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নেতৃত্ব বেড়ে উঠবে। ছাত্র সংসদের মাধ্যমে সৎ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ যেন অন্যান্য দের তুলনায় আগে হয়। সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের সদস্য সচিব সামসুল আরেফিন বলেন, ছাত্র সংসদ হলে নারীরা একটি অরাজনৈতিক প্লাটফর্ম পাবে। নেতৃত্ব গঠনের জন্য ছাত্র সংসদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সকল কিছু পুনর্গঠন চলছে। কেননা সকল জায়গায় আওয়ামী পন্থিরা বিরাজ করছে। পুনর্গঠনের মাধ্যমে তাদের সরানো দরকার। বিভিন্ন মিছিলের মাধ্যমে তাদের অস্তিত্ব জানান দিয়ে ২৪ এর রক্তাক্ত ইতিহাসকে অস্বীকার করছে।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় সংগঠক ফয়সাল মুরাদ বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব কারা করবে? ছাত্র সংসদ গঠন হলে তারা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বাজেট।হবে, ব্যয় হবে ছাত্র সংসদের মাধ্যমে হবে। এর ফলে রাষ্ট্রীয় বাজেট, ব্যয় গুলো ছাত্র অবস্থায় চর্চা হয়ে যাবে। বিভিন্ন কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস বেড়ে যাবে। সিন্ডিকেটে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করবে ছাত্র সংসদ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাজনীতির রোল মডেল। ছাত্র সংসদ হলে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি হবে না। বিগত সময়ে ছাত্রদল, ছাত্র শিবিরকে নানাভাবে নির্মূল করার প্রয়াস চলেছে।
শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রায়হান হাসান রাব্বি বলেন, শিক্ষার্থীরা ভোটের মাধ্যমে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়, সমস্যা সমাধানে ছাত্র সংসদ ভূমিকা পালন করবে। জকসু হলে স্টেকহোল্ডারের সংখ্যা কমবে, শিক্ষার্থীদের মতামত নিতে সুবিধা হবে।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব কিশোর আনজুম সাম্য বলেন, বিতর্ক, পাঠচক্র ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ছাত্র সংসদে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা জকসু নীতিমালাতে নেই। এগুলো সংযুক্ত করতে হবে।
সভায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ বলেন, জকসুর গঠনতন্ত্রে সভাপতি নির্বাচন ও তার কার্যপরিধি নিয়ে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ছাত্র সংসদ গঠনের ক্ষেত্রে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নজির তৈরি করছে।
নজির তৈরি করা বিশ্ববিদ্যালয়ের জকসু নীতিমালা এবং জকসু গঠন যাতে নজির হয়ে থাকে। কোনো অগণতান্ত্রিক প্রস্তাব যাতে এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ঠাঁই না পায়।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সচেতন হওয়ার জায়গা হচ্ছে ছাত্র সংসদ। রাষ্ট্র চায় বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। কারণ এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সরকার তার অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রের অংশ। তাই রাষ্ট্রের বাইরে গিয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যায় না। রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকে না। এটা একটা দিবা স্বপ্নের ব্যাপার।
জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড রইছ উদ্দিন বলেন, ৫ আগস্টের পর আমাদের জকসু নীতিমালা নির্ধারণে একটি কমিটি করা হয়েছে। বিশেষ সিন্ডিকেটে তা উত্থাপিত হয়। তবে শিক্ষার্থীদের মতামতের জন্য তারিখ পেছানো হয়েছে। জকসু গঠন করা হলে সকল শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করবে এমন নেতৃত্ব তৈরি হবে। তাই প্রশাসনও সেটা দ্রুত করার চেষ্টা করছে।
শাখা ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসীভের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম মারুফের সঞ্চালনায় ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি মাঈন আল মোবাশ্বিরসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।
জেএন/এমআই