-683942940446e.jpg)
রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ—সাংবাদিকতা, আর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আয়নায় যার প্রতিবিম্ব—সেটিই ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা। ক্যাম্পাসের প্রতিটি প্রাচীরের ফাঁকে লুকানো থাকে না-বলা শত গল্প—তুলে আনে কারা? ক্লাস, পরীক্ষা সামলেও একদল তরুণ ছুটে চলে সত্যের খোঁজে। তাঁদের কাজ শুধু সংবাদ নয়, বরং ন্যায়, প্রতিবাদ আর প্রগতির পথে এক নিরলস যাত্রা। বাধা আসে, একা হতে হয়—তবু থেমে যান না। তাঁদের চোখেই ফুটে ওঠে নেতৃত্বের আগাম ছবি। দায়িত্ববোধ, সাহস আর ভালোবাসায় গড়া এই পথ কি নিছক অভ্যাস, না ভবিষ্যৎ বদলের সূচনা? কলম যখন হয়ে ওঠে শক্তি, তখন শুরু হয় পরিবর্তনের গল্প। ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের বাধা কীভাবে প্রতিরোধ করেন তারা তুলে ধরেছেন-তানজিল কাজী।
সাহসিকতার আরেক নাম ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা
ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা শুধু খবর লেখা নয়, এটি সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার সাহসিক এক অভিযাত্রা। ছাত্রজীবনের চাপ, প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতা ও রাজনৈতিক হুমকির মধ্যেও একাগ্রভাবে সত্যের পক্ষে কাজ করে যেতে হয় সাংবাদিকদের। নিরপেক্ষভাবে দুর্নীতি বা অনিয়ম তুলে ধরলেও অনেক সময় তাদের হুমকি, অ্যাকাডেমিক হয়রানি কিংবা ছাত্রত্ব বাতিলের ভয় দেখানো হয়।
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ক্যাম্পাসেও প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতা সাংবাদিকদের পথ কঠিন করে তোলে। এমন প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত জরুরি। সাংবাদিককে তথ্য দেয়, কিন্তু সেই তথ্যের ভিত্তিতে প্রশাসনকে জবাবদিহির মুখোমুখি দাঁড় করানোর শক্তি শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীলতা থেকেই আসে।
অতএব, ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা কেবল পেশা নয়, এটা সামাজিক দায়বদ্ধতা। প্রতিটি শব্দ হয় প্রতিবাদ, প্রতিটি প্রতিবেদন হয়ে ওঠে পরিবর্তনের বার্তা।
তৌফিকুল ইসলাম আশিক
সভাপতি, বাংলাদেশ মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতি
জলে বসে কুমিরের সঙ্গে লড়াই
সাংবাদিকতা পেশাটাই দুর্দান্ত রকমের চ্যালেঞ্জিং। সেখানে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর—যেখানে শিক্ষার্থীরা একদিকে অ্যাকাডেমিক চাপ ও ব্যক্তিগত উন্নয়নের দৌড়ে ব্যস্ত, অন্যদিকে প্রশাসনিক জটিলতা, গঠনমূলক সমালোচনার প্রতি সংবেদনশীলতা ও অভ্যন্তরীণ নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি। নানা ধরনের অদৃশ্য বাধার মধ্য দিয়ে করতে হয় সংবাদ চর্চা। এ বাস্তবতায় সাংবাদিকতা অনেকটাই ‘জলে বসে কুমিরের সঙ্গে লড়াই’-এর শামিল।
দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সংগঠনের একজন সদস্য হিসেবে কাছ থেকে দেখেছি, কীভাবে একেকটি সত্য উচ্চারণ আমাদের অপরাধীদের চোখে অপরাধী বানিয়ে ফেলে। অনেক সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেখানে নীরব, সেখানে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদেরই হয়ে উঠতে হয় তাদের মুখপাত্র। অনিয়ম, বৈষম্য, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। আবার হতে হয় নির্বান্ধব। তবুও ‘একলা চলো’ নীতিতে যাত্রা করে সত্যের পথে এগিয়ে যাওয়াই যেন হয়ে ওঠে নতুন ভোরের পাথেয়।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা না থাকায় এই লড়াই আরও কঠিন। তা সত্ত্বেও, আমরা বিশ্বাস করি—একটি দায়িত্বশীল ও ন্যায়ভিত্তিক সাংবাদিকতা চর্চার মাধ্যমেই ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব। আমাদের কাজ কেবল খবর প্রকাশ নয়; এটি একটি জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ ক্যাম্পাস সংস্কৃতি গড়ে তোলার নিরন্তর প্রচেষ্টা।
সানজিদা জান্নাত পিংকি
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি, রাইজিংবিডি.কম
সভাপতি, গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি
ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় স্বাধীনতার লড়াই
গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ, আর ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা হলেন সেই তরুণ কণ্ঠস্বর, যারা সত্য ও স্বচ্ছতার জন্য কাজ করেন। কিন্তু বাস্তবতা কঠিন। রাজনীতি ও প্রশাসনিক প্রভাবের কারণে তাঁরা নানা হয়রানি, ভীতি ও চাপের মুখোমুখি হন।
সত্য প্রকাশের সাহস দেখানো যেন আজ বড় চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক গোষ্ঠীর চাপ, মানসিক নিপীড়ন কিংবা শারীরিক হুমকি—সব মিলিয়ে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা সংকুচিত হচ্ছে। ফলে সঠিক তথ্য শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এটি শুধু সাংবাদিকদের নয়, গোটা সমাজের জন্যই এক বিপদের সংকেত। তথ্যের স্বচ্ছতা না থাকলে গণতন্ত্র দুর্বল হয়। তাই প্রশাসন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে উদ্যোগী হতে হবে যেন ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে।
স্বাধীন সাংবাদিকতা রক্ষাই জাতির কল্যাণের চাবিকাঠি—এ দায়িত্ব আমাদের সকলের।
মো. রাসেল হোসেন
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, দৈনিক সংবাদ
দপ্তর সম্পাদক, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব
সাংবাদিকের কলম কেবল সত্যের পক্ষে
সাংবাদিকতা মূলত সত্যের সন্ধান ও তা প্রকাশের একটি পবিত্র দায়িত্ব। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে যারা সাংবাদিকতা করেন, তারা এই পবিত্র দায়িত্বটি পালনের চেষ্টা করে থাকেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে এ দায়িত্ব পালনে নিজের অবস্থান নির্ধারণে বেগ পেতে হয় তাদের। এছাড়া, কারো বিপক্ষে সংবাদ প্রকাশ করলে তাদের উপর্যুপরি তীব্র মন্তব্যের ফলে তারা হীনমন্যতায় ভোগেন। তবে এই পবিত্র দায়িত্বে এসব মন্তব্যের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। সাংবাদিকদের দায়িত্ব সত্য বলা। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সত্যের পক্ষে থাকলে সাংবাদিকদের কলম তাদের পক্ষেই যাবে, অন্যথায় তাদের বিপক্ষে যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রেও সাংবাদিকদের একই অবস্থান থাকা উচিত। ফলে শিক্ষার্থী, প্রশাসন বা রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ভুল পথে চললে সাংবাদিকদের কলম তাদের সংশোধন করে দেবে। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসের কল্যাণে তাদের সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার পথপ্রদর্শক হবে সাংবাদিকদের কলম।
সাংবাদিকদের পথ শুধু একটাই, আর তা হলো সত্যের পথ।এই পথ ছাড়া অন্য কোনো পথে সাংবাদিকরা হাঁটলে তারা যেমন পথভ্রষ্ট হবে, তেমনি ক্যাম্পাস বা রাষ্ট্রও সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হতে পারে।
তাজমুল জায়িম
সভাপতি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি
প্রজন্মের কণ্ঠস্বর ও সময়ের সাংবাদিকতা
সাংবাদিকতা বিষয়টি একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জিং ও রোমাঞ্চকর। একটা ভালো খবর করার পেছনে থাকে অনেক খাটাখাটুনি। সাংবাদিকদের কাজটা শুধু লিখে যাওয়ার নয়, খবরের পেছনের সত্যটা খুঁজে বের করাই তাদের মূল দায়িত্ব। এই দায়িত্ববোধ ও দায়বদ্ধতা থেকে একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক হিসেবে সবসময় চেষ্টা করি সত্যটা তুলে ধরার জন্য।
যেমন, ক্যাম্পাসে হঠাৎ কোনো ঘটনা ঘটল—একটা আন্দোলন, নতুন কোনো নোটিশ কিংবা কারও অর্জন। একজন সাংবাদিক হিসেবে আমার প্রথম কাজ হলো খোঁজ নেওয়া, ‘আসল ঘটনা কী?’ যাকে বলে ফার্স্ট হ্যান্ড ইনফরমেশন। এর জন্য কথা বলতে হবে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে—শিক্ষক, ছাত্রনেতা, প্রত্যক্ষদর্শী বা যারা ঘটনাটা জানে।
অনেক সময় আড্ডায় বসে কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েও খবরের সূত্র মেলে। তবে কোনো তথ্য পেলেই সেটা লিখে হুটহাট প্রকাশ করা যাবে না। একাধিক মানুষের কাছে, বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে যাচাই করে নিতে হয়। ভুল তথ্য দিলে বিশ্বাস হারানোর ভয় থাকে। খবর লেখার সময় মনে রাখতে হয়, পাঠক যেন বুঝতে পারে কে, কী করেছে, কোথায়, কখন, কেন এবং কীভাবে করেছে। সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো দায়িত্ববোধ। কারণ, একজন সাংবাদিক শুধু খবর লেখেন না, সময়ের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠতে হয়—বাস্তব চিত্রটাই তুলে ধরেন জনসম্মুখে।
অনিরুদ্ধ সাজ্জাদ
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, সময়ের কণ্ঠস্বর
দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক ফোরাম
এমএইচএস