
সোমবার (৯ জুন) শিক্ষকদের বিদায় ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা | ছবি : সংগৃহীত
সময় বড়ই চঞ্চল। কালের স্রোতে আমরা এগিয়ে চলি অজানার পথে, পেছনে ফেলে আসি অসংখ্য স্মৃতি আর অনুভব। তবে কিছু স্মৃতি, কিছু নাম হৃদয়ের ক্যানভাসে চির অম্লান হয়ে থাকে। তেমনই এক নাম ‘চরবাটা খাসের হাট উচ্চ বিদ্যালয়’। আমার শৈশব, কৈশোর ও স্বপ্নের প্রথম ঠিকানা।
প্রায় নয় বছর হয়ে গেছে এই প্রিয় বিদ্যাপীঠ ছেড়েছি, অথচ এখনো মনে হয় এইতো সেদিন—২০১২ সাল। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিকে পা রাখলাম নতুন এক জগতে। নতুন বন্ধু, নতুন শিক্ষক আর নতুন স্বপ্নের হাতছানি। ষষ্ঠ শ্রেণির ‘ক’ শাখায় ছিল আমার ঠাঁই। সেই পুরোনো টিনশেড ভবনের প্রথম কক্ষেই ছিল আমাদের ক্লাসরুম।
বছর পেরিয়ে সপ্তম, অষ্টম, নবম— প্রতিটি ক্লাসে বার্ষিক পরীক্ষার আগের সেই রেজাল্ট-ভীতির দিনগুলো এখনো চোখে ভাসে। যদিও প্রতিটি ক্লাসেই প্রথম হতাম, তবু রেজাল্টের দিনটায় বুক ধুকধুক করত। খেলাধুলায় খুব একটা সক্রিয় ছিলাম না, তবে আকরাম, হিমেল, অন্তর, হেলালদের সঙ্গে দাবার বোর্ডে লড়াই হতো মাঝেমধ্যে।
আমার শিক্ষা জীবনের ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন যেসব শিক্ষক, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা খুঁজে পাই না। মহিউদ্দিন স্যার, অসিত স্যারের ইংরেজি ব্যাকরণ, ভোলানাথ স্যারের ম্যাথের ট্রিক্স, বিনথ বিহারী স্যারের সাবলীল ইংরেজি, কল্পনা ম্যাডামের হৃদয়ছোঁয়া বাংলা, জাকার স্যারের টেন্স শেখানো, প্রণব স্যারের বীজগণিত আর কেফায়েত স্যারের অভিভাবকসুলভ স্নেহ—সবই ছিল আমার প্রেরণার মূলশক্তি। আর হাফিজ স্যারের হাত ধরে আমি পেয়েছিলাম জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন—বাংলাদেশ স্কাউট প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড। ২০১৭ সালে আমি ছিলাম এই বিদ্যালয়ের প্রথম শিক্ষার্থী, যে এই সর্বোচ্চ স্কাউট পুরস্কার অর্জন করেছিল।
এবার ঈদুল আজহার তৃতীয় দিনে বিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয়েছিল শিক্ষকদের বিদায় ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান। সেদিন স্কুল প্রাঙ্গণ ফিরে পেয়েছিল তার পুরোনো স্পন্দন। নবীন-প্রবীণদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল পুরো আয়োজন। হাঁটছিলাম সেই চেনা করিডোর দিয়ে, ঢুকলাম সেই টিনশেড ক্লাসরুমে—মনের ভেতর কেমন যেন কেঁপে উঠল। মনে হচ্ছিল, আবার ক্লাস শুরু হবে, স্যার খাতা হাতে প্রবেশ করবেন, রোলকল হবে!
এসএসসি ২০১৭ ব্যাচের পক্ষ থেকে আমরা আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দিই। বিদ্যালয়ও আমাকে ফিরিয়ে দেয় আরেকটি সম্মান—প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড অর্জনের জন্য সম্মাননা প্রদান করে। বিকেলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি ছিল যেন আবেগের স্রোতে ভেসে যাওয়া এক মুহূর্ত। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে গলা ছেড়ে গান গাওয়া, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছবি তোলা—সব মিলিয়ে এক অপূর্ব রোমাঞ্চকর দিন।
এই স্মৃতিগুলো মনের মণিকোঠায় তুলে রাখলাম ভালোবাসার অ্যালবামে। এই বিদ্যালয় শুধু আমাকে শিক্ষা দেয়নি, মানুষ হতে শিখিয়েছে, স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে। আমি চিরকৃতজ্ঞ সেই আঙিনার প্রতি, কৃতজ্ঞ সেই মানুষগুলোর প্রতি, যাঁদের হাতে গড়া আমি আজকের আমি। বারবার ফিরতে চাই সেই চিরচেনা উঠোনে, সেই প্রিয় মুখগুলোর কাছে। ভালো থাকুক আমার প্রিয় চরবাটা খাসের হাট উচ্চ বিদ্যালয়। ভালো থাকুন আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ। আপনাদের হাতে গড়া আমি, আপনাদের আশীর্বাদেই এগিয়ে চলছি প্রতিদিন।
- এটিআর