নোবিপ্রবিতে সিজিপিএ দিয়ে ছাত্র পরিষদ, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

নোবিপ্রবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৫, ২৩:৫০
-684c64eb6ee7d.jpg)
ফাইল ছবি
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো সিজিপিএ’র ভিত্তিতে ছাত্র পরিষদ গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জারি করা বিজ্ঞপ্তিকে ‘ঠুনকো ও একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার তামজিদ হোছাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি হতে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তি হতে জানা যায়, তিনজন উপদেষ্টা (পদাধিকারবলে প্রক্টর, উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি হবেন ও পরিচালক, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হবেন এবং উপাচার্য কর্তৃক মনোনীত একজন প্রভোস্ট কাউন্সিলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য থাকবেন) এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে একজন আহ্বায়ক ও একজন সদস্য সচিবসহ মোট ১৮ সদস্য নিয়ে গঠিত হবে ছাত্র পরিষদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দফতরের শিক্ষা শাখা কর্তৃক প্রণীত নির্দেশনা অনুযায়ী, ‘স্টুডেন্ট কাউন্সিল আহ্বায়ক কমিটি’ গঠনে যেসব বিষয়গুলো প্রাধান্য দেয়া হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষার্থীদের YCGPA (Yearly Cumulative Grade Point Average)। শিক্ষার্থীদের মেধাভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে YCGPA-এর ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে।
সদস্য মনোনয়নের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদ অনুষদ ও ইনস্টিটিউট ভিত্তিক (প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ-০২ জন, বিজ্ঞান অনুষদ- ০২ জন, জীব বিজ্ঞান অনুষদ-০৪ জন, সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদ-০২ জন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ- ০২ জন, শিক্ষা বিজ্ঞান অনুষদ-০২ জন, আইন অনুষদ-০২ জন, আইআইএস- ০১ জন ও আইআইটি-০১ জন) স্টুডেন্ট কাউন্সিল/ছাত্র পরিষদ সদস্য মনোনয়ন দেবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, স্টুডেন্ট কাউন্সিল/ছাত্র পরিষদের মেয়াদকাল হবে দুই টার্ম বা এক বছর। নতুন কমিটির নিকট কার্যভার হস্তান্তরের পূর্ব পর্যন্ত পূর্ববর্তী কমিটি কাজ করবেন। একজন শিক্ষার্থী দুইবারের বেশি কাউন্সিলে থাকতে পারবে না। উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের সিলেকশন/আলোচনাক্রমে /ভোটাভুটি অনুযায়ী ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে চতুর্থ বর্ষ/জ্যেষ্ঠতম ব্যাচ হতে আহ্বায়ক মনোনীত করবেন। পরবর্তী দুই ব্যাচের (২য়/৩য়) সদস্যদের মধ্য হতে সদস্য-সচিব মনোনীত হবেন। সদস্য-সচিব মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাকালীন জ্যেষ্ঠতা অনুসারে পর্যায়ক্রমে মনোনীত হবেন। তবে শর্ত থাকে যে আহ্বায়ক ও সদস্য-সচিব একই বিভাগ অথবা ইনস্টিটিউটের হতে পারবে না।
প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির প্রতিক্রিয়ায় ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী বনি ইয়ামিন বলেন, নোটিশে ছাত্র পরিষদের আসলে কাজ স্পষ্ট করেনি। তারা কি শুধু শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে কাজ করবে? যদি এতটুকুই হয় তাহলে CGPA ভিত্তি কিছুটা মানা যায়। CGPA তুলনামূলক ভাবে কম এমন শিক্ষার্থী অনেকেই আছে যারা শিক্ষা ও গবেষণায় আগ্রহী তাদের বিষয়েও চিন্তা করা জরুরি। যদি তারা সার্বিকভাবে শিক্ষার্থীদের সব ধরনের সমস্যার প্রতিনিধিত্ব করে তাহলে এটা শুধুই CGPA এর ভিত্তিতে হবে কল্পনাই করা যায় না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আসলে ছাত্র পরিষদকে ছাত্র সংসদের বিকল্প হিসেবে চাচ্ছে কিনা এটা ক্লিয়ার করা জরুরি বলে মনে করছি। জুলাই অভ্যুত্থানের পরবর্তীতে এসে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত জুলাই চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান বলে মনে করছি।
সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুধা বড়ুয়া বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধ থাকা অবস্থায় ছাত্রদের সঙ্গে মতবিনিময় ছাড়াই নবগঠিত ছাত্র পরিষদ গঠন করা হয়েছে, যা প্রশ্নবিদ্ধ। নাম পাঠাতে মৌখিক সম্মতির কথা বলা হলেও ব্যাচভিত্তিক আলোচনা হয়নি বা হবে কিনা তা পরিষ্কার নয়। চলমান বেশিরভাগ বিভাগের চলমান পরীক্ষার মাঝে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া অনিশ্চিত। পরিষদের দায়িত্ব ও মানদণ্ড নিয়েও স্পষ্টতা নেই। সিজিপিএসহ আরও মানদণ্ড ঠিক করে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যেত, যা এখানে করা হয়নি।
ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব আল জুবায়ের বলেন, ছাত্রপরিষদ গঠনপ্রণালী কেমন হওয়া উচিত সেই বিষয়ে নিঃসন্দেহে সাধারণ ছাত্রদের মতামতের গুরুত্ব সব থেকে বেশি হওয়া উচিত। কিন্তু প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে উক্ত বিষয়টি অনুপস্থিত। একজন অ্যাকাডেমিক মেধাবী শিক্ষার্থী এবং একজন প্রতিনিধিত্বকারী দায়িত্বশীল শিক্ষার্থীর চিন্তাধারা, দক্ষতা ও মেধার ভিন্নতা লক্ষণীয়। তাই আমি মনে করি প্রশাসনের ছাত্র পরিষদ গঠনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখা উচিত ।
শিক্ষার্থীরা মনে এই প্রক্রিয়া আসলে ছাত্র সংসদের বিকল্প গড়ে তোলার চেষ্টা। তাদের দাবি, “শিক্ষা ও গবেষণাভিত্তিক একটি প্রতিনিধি পরিষদ সিজিপিএ অনুযায়ী হতে পারে, কিন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ ছাত্র পরিষদ — যা শিক্ষার্থীদের সার্বিক প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে — সেটির ভিত্তি কখনোই শুধুমাত্র সিজিপিএ হতে পারে না।”
এ বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের বিপরীতে ২০০৮ সালে রিজেন্ট বোর্ড কর্তৃক ‘স্টুডেন্ট কাউন্সিল/ ছাত্র পরিষদ’ গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। আমরা সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে উদ্যোগ নিয়েছি। এই পরিষদের কাজ হবে অনুষদ ভিত্তিক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও সমস্যা নিয়ে কথা বলা। মনোনয়নের ভিত্তিতে সদস্য পদ দেওয়া হবে। তবে পরবর্তীতে ‘ছাত্র সংসদ’ হলে সেক্ষেত্রে নির্বাচনের ভিত্তিতে হবে।”