জুলাই আয়োজনে উপেক্ষিত প্রথম পুলিশি হামলার শিকার কুবি

কুবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ২১:১১
-(64)-685ac0071bb7b.jpg)
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জুলাই স্মৃতি উদযাপন অনুষ্ঠানমালায় নেই সারাদেশে প্রথম পুলিশি হামলার শিকার কুমিল্লা জেলা বা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কোনো আয়োজন। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে জেলা ও মহানগরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ১১ জুলাই আন্দোলনের শুরুর দিকে সারাদেশে প্রথম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুলিশি হামলার শিকার হন। টিয়ারগ্যাস, লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ইত্যাদির আঘাতে সেদিন অর্ধশতাধিকের বেশি শিক্ষার্থী আহত হন। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি পুলিশের হামলায় আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীও।
পুলিশের বর্বরোচিত হামলা ও বাঁধাকে উপেক্ষা করে সেদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি বিশ্বরোড সংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রায় ৬ ঘণ্টা যাবৎ অবরোধ করে রাখে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেদিনের সাহসিকতা দেশব্যাপী আলোচিত হয়।
১১ জুলাই পুলিশি হামলায় হাত ভেঙে যায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও সমন্বয়ক মো. এমরানের।
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক আগামী ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত জুলাই স্মৃতি উদযাপন অনুষ্ঠানমালা অনুষ্ঠানিত হবে। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানমালার ক্যালেন্ডারে কই সেই ১১ জুলাই? যেদিন সর্বপ্রথম হামলা হয় কুমিল্লা তথা আমাদের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর এবং সেখানে থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। স্বৈরাচার পুলিশ বাহিনী সেদিন আমাদের উপর নির্মম হামলা চালিয়েছিল; যেটা সমগ্র বাংলাদেশ দেখেছিল। আমিসহ অসংখ্য কুবি শিক্ষার্থী সেদিন আহত হয়েছিল। হামলার পরবর্তীতে সারা বাংলাদেশে সকলের কণ্ঠে আওয়াজ ছিল, ‘কুবিতে হামলা কেন প্রশাসন জবাব চাই!আমার ভাই আহত কেন প্রশাসন জবাব চাই!" অথচ কই সেই ১১ জুলাইয়ের মত ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনটি?’
তিনি আরও বলেন, ‘১১ জুলাইকে ভুলে যাওয়া হচ্ছে নাকি বাদ দেওয়া হচ্ছে? জুলাইয়ের এই ঐতিহ্যবাহী দিনটি বাদ দেওয়া এটা আমাদের জন্য লজ্জাকর যা আমাদের মোটেও কাম্য নয়। আমরা চাই, অতি দ্রুত জুলাই ক্যালেন্ডারে এই দিনটা সংযুক্ত করা হোক।’
এ বিষয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও কুমিল্লা জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আরাফ ভূইয়া বলেন, ‘যদি এক কথায় বলি আমরা হতাশ! গত ১০ মাসে আমরা এক ডজনের বেশী প্রোগ্রাম করেছি যেখানে জুলাই এর সম্মুখ যোদ্ধা এবং বর্তমান সরকারের একাধিক উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিটা প্রোগ্রামে আমরা ১১ জুলাই এর প্রথম পুলিশি আক্রমণ, ১২ জুলাইয়ের ছাত্রলীগের প্রথম আক্রমণ এবং ১৮ জুলাইয়ের দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে লড়াই করার ইতিহাস উল্লেখযোগ্য ভাবে বলেছি। একাধিকবার আলাদা করে বলছি যেন ১১ জুলাইকে জাতীয় ভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। কিন্তু সেটা এখনো দেওয়া হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সন্দেহ করছি, তারা হয়ত জুলাইয়ের ইতিহাস ঢাকা কেন্দ্রিক রাখতে চায়। তাদের এই ইতিহাস বিকৃতি এবং ইতিহাসকে ঢাকা কেন্দ্রিক ফ্রেমিং করার অপচেষ্টা আমাদের ব্যথিত করেছে। আমরা কুমিল্লাকে অন্তর্ভুক্ত করার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।কুমিল্লার বুক চিতিয়ে লড়াই করার ইতিহাস হারিয়ে যেতে দিব না।’
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কুমিল্লা মহানগরের সদস্য সচিব মুহাম্মাদ রাশেদুল হাসান বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শুরুটা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা থেকে কিন্তু এই আন্দোলনের প্রথম হামলার শিকার হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ১১ই জুলাই। পরদিন ১২ই জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গা আমার সহযোদ্ধা ভাই-বোনেরা স্লোগান তুলেছিল-কুবিতে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই! কিন্তু দুঃখজনক বিষয়, আজকে প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে জুলাই স্মৃতি উদযাপনের অনুষ্ঠানসূচিতে ১১ জুলাইয়ে কুমিল্লার অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে জানানো হয়েছে। আশা করি এই বিষয়ে শীঘ্রই তার মতামত জানতে পারব।’
জুলাই আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কুমিল্লা জেলার আহ্বায়ক মুহাম্মদ সাকিব হুসাইন বলেন, ‘১১জুলাই বিপ্লবে যে দিনটিতে সারা বাংলাদেশে প্রথম হামলা কুমিল্লায় হয় এবং প্রথম প্রতিরোধও কুমিল্লা থেকে শুরু হয়। সেদিন আমরা রাত ১১:৪৫ পর্যন্ত ঢাকা চট্টগ্রাম ব্লকেড করেছিলাম। আমাদের উপর হামলার প্রতিবাদে সারাদেশে সেদিন এবং পরেরদিন প্রোগ্রাম ঘোষণা করে পুরো বাংলাদেশ। ‘কুমিল্লায় হামলা কেন? প্রশাসন জবাব চাই’। হামলার পর হাসনাত আব্দুল্লাহ ভাই এবং সার্জিস আলম ভাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন। ১১ তারিখ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয় এবং পরে আমরা তিনজন কুমিল্লার এসপি-এর সাথে এ বিষয়ে অভিযোগ করি এবং আলোচনা হয়। এমনকি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এ হামলার প্রতিবাদ জানায়। তাহলে কেন এ দিনটিকে বাদ দিয়ে জুলাই কেন্দ্রিক প্রোগ্রাম ঘোষণা করা হলো? জুলাই বিপ্লবের এমন তাৎপর্যপূর্ণ দিনটিকে কেন বাদ দেয়া হলো?’
ইমতিয়াজ রিফাত/এমআই