নিষেধাজ্ঞা অমান্যের অভিযোগ
কুবির নতুন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বাসভ্রমণ নিয়ে প্রশ্ন

কুবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ১৫:০৮

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নির্মাণাধীন নতুন ক্যাম্পাসে প্রবেশে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ব্যবহার করে সেখানে শিক্ষার্থী সফরের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভ্রমণের বিষয়টি তাদের জানা ছিল না।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভাগের তিন শিক্ষক প্রভাষক মো. জাহিদুর রহমান, জহিরুল ইসলাম বাবর ও মো. আতিকুর রহমান নতুন ক্যাম্পাসে ঘুরতে যান।
এর আগে, গত ১ জুলাই সিএসই’র বিভাগীয় প্রধান ড. মাহমুদুল হাসানের স্বাক্ষরে পরিবহন দপ্তরে একটি বাসের জন্য আবেদন করা হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুল থেকে জানানো হয়েছে, বিভাগীয় আবেদনের ভিত্তিতে শিডিউলে সমস্যা না থাকলে এবং গন্তব্য শহরের নিকটে হলে রেজিস্ট্রার দপ্তরের অনুমতি ছাড়াই বাস বরাদ্দ দেওয়া যায়। তবে, ভ্রমণের গন্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয় না।
পরিবহন পুলের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মোশারফ হাসান ভূঁইয়া বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী বাস দেওয়া হয়েছে। কোথায় যাচ্ছে তা আমাদের জানার বা জিজ্ঞাসা করার এখতিয়ার নেই।
এর আগে, গত ১২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনুমতি ছাড়া প্রবেশ না করতে। ওই নির্দেশনার অনুলিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ ও দপ্তরে পাঠানো হয়।
কিন্তু নিষেধাজ্ঞা জারি সত্ত্বেও ভর্তির তৃতীয় দ্বিতীয় দিনের মাথায় নতুন শিক্ষার্থীদের বাস ভ্রমণ নিয়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ প্রশ্ন তুলেছে। তাদের ভাষ্য, ‘অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং মানবিক ঘটনাগুলোতেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাস সহায়তা দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু সিএসই বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার মাত্র তৃতীয় দিনের মাথায় কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস বরাদ্দ পায়? সেটাও আবার নির্মাণাধীন নতুন ক্যাম্পাস পরিদর্শনে! যেখানে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।’
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী বায়েজিদ হোসেন বলেন, আমাদের বিভাগের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে জানাজায় যাওয়ার জন্য বাস চেয়েও পাইনি। অথচ নবীনদের জন্য বাস বরাদ্দ হয়েছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফরহাদ কাউসার বলেন, বাস সংকটে বহুবার প্রশাসনের কাছে গিয়েও বাস পাওয়া যায়নি। অথচ নবীনদের একটি ব্যাচ বাসে করে নতুন ক্যাম্পাসে যেতে পেরেছে। এটি অনেক শিক্ষার্থীর মাঝেই প্রশ্ন তৈরি করেছে।
জানা যায়, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে সিএসই বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলীর মেয়ে সদ্য ভর্তি হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অনেকের দাবি, তাকে অতিরিক্ত সুবিধা দিতেই এই ধরণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে একাধিক সূত্রে বলছে, উপাচার্যের মেয়ে এই ভ্রমণে অংশ নেননি।
এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নির্মাণাধীন ক্যাম্পাসে ভ্রমণ নিয়ে সিএসই বিভাগের ফেসবুক পেজে একটি ব্যাখ্যা পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রবেশের অনুমতি না থাকায় কোনো ভবন বা পাহাড়ে যাওয়া হয়নি। কেবল দুটি গ্রুপ ছবি তোলা হয়, এরপর ফিরে আসা হয়।
তবে বিভাগের ছাত্র পরামর্শক মো. জাহিদুর রহমান বলেন, আমরা ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে বাসে করে রাস্তা ঘুরে দেখি। নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি নতুন, সব নিয়ম সম্পর্কে অবগত ছিলাম না।
বিভাগীয় প্রধান ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, নবীনদের একটু ঘোরাঘুরি করাতে চেয়েছি যেন কেউ তাদের বিরক্ত না করে। পরিবহন দপ্তরে চিঠি দিয়েছি, শিডিউল খালি থাকায় বাস দেওয়া হয়। নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি খেয়াল হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, বাস বরাদ্দের বিষয়টি পরিবহন পুল দেখে। তবে বিভাগীয় প্রধানদের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত চিঠি আগেই পাঠানো হয়েছে।
রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বাস বরাদ্দের বিষয়ে আমাদের জানানো হয়নি। দূরত্ব কম ও শিডিউল ফাঁকা থাকায় পরিবহন পুল অনুমোদন দিয়েছে। তবে নির্মাণাধীন এলাকায় যাওয়ার বিষয়টি প্রশাসনের জানা ছিল না।
তিনি আরও বলেন, পরিবহন পুল ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
- রিফাত/এটিআর