নিরসন হচ্ছে জবি শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট

জান্নাতুন নাইম, জবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৫, ১৮:১৬
-687f811e5224d.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
দীর্ঘদিন হলহীন থাকার তকমা ঘুচছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি)। অবশেষে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনে এক যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের ‘মেধাবী প্রকল্প’-এর আওতায় শত শত শিক্ষার্থী পাচ্ছেন আবাসনের সুযোগ। নতুন হলে ওঠে উচ্ছ্বাসে মেতেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় প্রাথমিকভাবে ৮৮৮ জন শিক্ষার্থীকে আবাসন সুবিধা দেওয়া হবে। বর্তমানে ১৯ ব্যাচের ৩১০ জন শিক্ষার্থী কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকায় অবস্থিত অস্থায়ী আবাসনে অবস্থান করছেন। আরও অনেকেই শিগগির হলে উঠবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে আগামী ১ আগস্ট থেকে ২০ ব্যাচের (২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীরা হলে উঠবেন। আবেদনকারীদের মধ্য থেকে ২৪৫ জন শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। আবেদনকারীদের সবাই সুযোগ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হল প্রোভোস্ট-১ সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান সাদী জানান, আস-সুন্নাহ'র এই মেধাবী প্রকল্পে নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে শুরু করেছে। অসুস্থতা বা পারিবারিক কারণে কেউ কেউ বিলম্বে উঠছেন। তবে সবাই পর্যায়ক্রমে হলে উঠে যাবে বলে আশা করছি।
তিনি আরও জানান, আগস্টে ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা হলে উঠার পর সিট খালি থাকা সাপেক্ষে ১৭ ও ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বিষয়েও উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নেবে।
২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আবাসন চুক্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর আওতায় শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ আবাসন, লাইব্রেরি, কম্পিউটার ল্যাব, ভাষা শিক্ষা, আইইএলটিএস প্রস্তুতি ও সফট স্কিল প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পারিবারিক আয় ও মেধার ভিত্তিতে ১০০%, ৭৫%, ৫০% ও ২৫% স্কলারশিপ প্রদান করা হচ্ছে। আবাসনের সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করছে ফাউন্ডেশন, আর ক্যাম্পাসে যাতায়াতে পরিবহন সুবিধা দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন বলেন, আস-সুন্নাহ’র হলে উঠে আমি আলহামদুলিল্লাহ খুবই সন্তুষ্ট। পরিবেশটা আমাদের জন্য সত্যিই আশীর্বাদস্বরূপ। এখানে নামাজ, পড়াশোনা, খাবারসহ সবকিছু একটা নিয়মে চলছে। এটা শুধু আবাসন নয়, আমাদের চরিত্র ও মানবিক গুণাবলি গঠনের ক্ষেত্রেও সহায়ক।
একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মুস্তাকিম বলেন, প্রথমে কিছুটা অস্বস্তি লাগলেও এখন বেশ মানিয়ে নিয়েছি। আমাদের জন্য এটা বিশাল সুযোগ। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো হল নেই, তাই এই উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. তাজাম্মুল হক বলেন, এই আবাসন ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। আমরা সেই দাবির প্রতি সম্মান জানিয়েই উদ্যোগ নিয়েছি। শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও নৈতিক উন্নয়নে এটি বড় ভূমিকা রাখবে।
প্রসঙ্গত, কলেজ আমলের ১১টি আবাসিক হল এখনও বেদখলে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের অন্যতম অনাবাসিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচনা করা হতো। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের এই সহযোগিতা সেই ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচনা করল বলে মনে করছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
জেএন/এমএইচএস