Logo

ক্যাম্পাস

মিটিমিটি আলোর সন্ধ্যাবেলা, হারিয়ে যাচ্ছে জোনাকিরা

Icon

তানজিল কাজী

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭:৪৯

মিটিমিটি আলোর সন্ধ্যাবেলা, হারিয়ে যাচ্ছে জোনাকিরা

ছবি : সংগৃহীত

একসময় দিন শেষে সন্ধ্যা নামতেই গ্রামের পথের ধারে, ঝোপ-জঙ্গলে কিংবা গাছের পাতার আড়ালে সারি সারি জোনাকির মিটিমিটি আলোর ঝলকানি দেখা যেত। এই ক্ষুদ্র পোকাগুলোর প্রাকৃতিক আলো আবার বাবুই পাখি তার বাসায় আলোকসজ্জার জন্য ব্যবহার করত। কিন্তু আজকাল সেই দৃশ্য একান্তই বিরল। কৃত্রিম আলোর বাণে বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির এই অপূর্ব ও অনন্য বিস্ময়কর উপহার।

জোনাকি বা ফায়ারফ্লাই মূলত ল্যামপিরিডি পরিবারের গুবরে পোকা। বাংলাদেশে সাধারণত সবুজ আলো বিচ্ছুরণকারী জোনাকি দেখা যায়, তবে বিশ্বজুড়ে লাল, কমলা বা নীল আলো বিচ্ছুরণকারী প্রজাতিও রয়েছে। এদের আলোর মূল রহস্য ‘বায়োলুমিনেসেন্স’ নামক এক রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া, যা শরীরে বিশেষ কোষে সংঘটিত হয়। প্রজননকালে এ আলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আকারে ক্ষুদ্র হলেও জোনাকির প্রভাব বিশাল। গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলার ক্ষমতা কেবল জোনাকিরই আছে। তবে শুধু সৌন্দর্য নয়, জোনাকি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও ভূমিকা রাখে। তাদের বাচ্চারা পচা প্রাণী ও ক্ষুদ্র পোকা খেয়ে পরিবেশকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। প্রাপ্তবয়স্ক জোনাকি মধু ও পরাগ খায়। মেয়ে জোনাকিরা মাঝে মাঝে অন্য প্রজাতির পুরুষ জোনাকিকে আলোর ফাঁদে ডেকে এনে খেয়ে ফেলে—এটিও এক ধরনের টিকে থাকার কৌশল।

কোথায় থাকে জোনাকি :

জোনাকিরা স্যাঁতসেঁতে ভেজা জায়গা পছন্দ করে। পুকুর, ডোবা, নালা, খাল, বিল কিংবা নদীর ধারেই এদের বেশি দেখা যায়। সেখানে লম্বা ঘাস ও ঝোপঝাড়ে তারা বাসা বাঁধে। দিনের বেলায় লুকিয়ে থাকে গাছের বাকলের তলায়, শুকনো পাতার নিচে বা ফাটলে। শীতে এদের দেখা পাওয়া কমে যায়। পৃথিবীর প্রতিটি মহাদেশেই জোনাকি আছে, শুধু এন্টার্কটিকা ছাড়া।

খাবারের অভ্যাস :

জোনাকির বাচ্চারা পচা প্রাণী, কেঁচো, শামুকের বাচ্চা ও অন্যান্য ক্ষুদ্র পোকা খায়। তাদের মুখে ধারালো কাঁচির মতো অঙ্গ থাকে, যা দিয়ে তারা শিকারকে অবশ করে ফেলে। বড় হয়ে জোনাকিরা মূলত ফুলের মধু ও পরাগ-রেণু খায়। মেয়ে জোনাকি অনেক সময় দুষ্টুমি করে অন্য প্রজাতির পুরুষকে ডেকে এনে খেয়ে ফেলে—এটি তাদের স্বভাবের এক বিস্ময়কর দিক।

জোনাকির আলো কমে যাওয়ার কারণ :

শহরের সৌন্দর্যায়নের নামে এখন সর্বত্র ঝলমলে বাতিস্তম্ভ, উজ্জ্বল এলইডি লাইট, হাইমাস্ট ল্যাম্প। পার্ক, সড়ক, জলাশয়ের ধারেও সারারাত আলো জ্বলতে থাকে। এতে রাত-দিনের প্রাকৃতিক ছন্দ নষ্ট হচ্ছে। অতিরিক্ত এই আলোর কারণে জোনাকিরা বিভ্রান্ত হয়, তাদের প্রজনন ব্যাহত হয়। ফলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে জোনাকিরা। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, নগরায়ন ও আলোক দূষণের ফলে ভবিষ্যতে হয়তো চিরতরে নিভে যাবে জোনাকির আলো।

/এএ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ডিআরইউ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর