‘শিক্ষা ও গবেষণাকেন্দ্রিক পরিবেশটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি’

কুবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২৫, ১৬:৫৫
---2025-08-08T164952-6895d79d4de6c.jpg)
গ্রাফিক্স : বাংলাদেশের খবর
ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক বছর পর, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা আলাপ করলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেছেন, কী কী চ্যালেঞ্জ এসেছিল এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী সার্বিক বিষয় উঠে এসেছে এই সাক্ষাৎকারে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কুবি প্রতিনিধি ইমতিয়াজ রিফাত।
প্রতিবেদক : বিগত সরকার পতনের পর আপনার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় নতুন রূপে কাজ শুরু করেছে। কর্মক্ষেত্র এবং সার্বিক বিষয় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পেরেছে? কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
উপাচার্য : বিগত সরকার পতনের পর গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর আমি দায়িত্ব গ্রহণ করি। দায়িত্ব নেওয়ার পর জানতে পারি, তৎকালীন উপাচার্যের সাথে শিক্ষক সমিতি ও জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বড় সেশনজট তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিরসনে আমরা দ্রুত শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষার পরিবেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিই। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে আগের প্রশাসনে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। যদিও সবকিছু একেবারে দূর করা সম্ভব নয়, তবে আমরা সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করেছি।
প্রতিবেদক : শিক্ষক সংকট নিরসনে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং সামনে কী কী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছেন?
উপাচার্য : বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট নিরসনে আমরা প্রথমে শিক্ষকের ভূমিকা ও প্রয়োজনীয়তা গভীরভাবে মূল্যায়ন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাজ কেবল ক্লাস নেয়া বা পরীক্ষা নেওয়া নয়। গবেষণা করা, জ্ঞান সৃষ্টি ও তা বিতরণের দায়িত্বও তার ওপর বর্তায়। গবেষণার জন্য সময় ও প্রস্তুতি প্রয়োজন। আর তার জন্য শিক্ষকের মানোন্নয়ন জরুরি। বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৮ জন শিক্ষক উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন, যা একেবারেই স্বাভাবিক। ঢাবির মতো প্রতিষ্ঠানে দেখা যায়-৪০০ শিক্ষক বাইরে থাকলেও সমপরিমাণ শিক্ষক তাদের জায়গায় নিয়োগ দিয়ে দেয়। কিন্তু, আমাদের এখানে সেই সুযোগ নেই। আমাদের নীতিমালায় বলা আছে, শিক্ষা ছুটির বিপরীতে সর্বোচ্চ ২০% শিক্ষক নেওয়ার অনুমতি রয়েছে। অর্থাৎ, ৯৮ জনের বিপরীতে মাত্র ২০ জন নেওয়া যাবে, তাও ইউজিসির অনুমতি সাপেক্ষে। এজন্য আমি নিজে ১৪ তারিখ (১৪ জুলাই) ইউজিসিতে গিয়ে জরুরি ভিত্তিতে ২০ জন শিক্ষক নিয়োগের অনুমতির জন্য আবেদন করেছি। আমার মূল চেষ্টাই ছিল যে-সব বিভাগে শিক্ষক অভাব প্রবল, সেখানে ন্যূনতম শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা। একজন শিক্ষক যদি সারা দিন ক্লাস নিয়েই ব্যস্ত থাকেন; তার পক্ষে গবেষণা তো দূরের কথা, মানসম্মত পাঠদানও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই গবেষণার সময়, প্রস্তুতির সুযোগ এবং বিশ্রামের সময় সব মিলিয়ে একটা ভারসাম্য দরকার। এই ভারসাম্য ছাড়া গুণগত শিক্ষা সম্ভব নয়।
প্রতিবেদক : সরকার পতনের পর শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে রাজনীতি ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে কী ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে? সরকার পতনের পর কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন?
উপাচার্য : আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চোখে পরেনি। আসলে প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই এটি একটি অরাজনৈতিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চিহ্নিত। সিন্ডিকেটেও সেটি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ আছে। সেই দিক থেকে এখনকার পরিবেশ বেশ স্থিতিশীল। বিগত সরকারের সময় যাঁরা বিভিন্নভাবে প্রভাবশালী ছিলেন, তারা এখন নিশ্চুপ। কেন চুপচাপ সেটা নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল, তবে এই নীরবতার কোনো নেতিবাচক প্রভাব আমরা এখন পর্যন্ত কার্যক্রমে অনুভব করিনি। বরং এটা একটা ভালো দিক যে এখন শিক্ষকরা আগের চেয়ে অনেক বেশি লেখাপড়ার দিকে মনোযোগী হয়েছেন। সত্যি বলতে, দুই একজন ব্যতিক্রম বাদ দিলে অধিকাংশ শিক্ষক এখন অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমেই মনোনিবেশ করেছেন। তার ফলেই গত এক বছরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ অনেক উন্নত হয়েছে। গবেষণার পরিমাণ বেড়েছে, পাবলিকেশন বেড়েছে। আর সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। এই শিক্ষা ও গবেষণাকেন্দ্রিক পরিবেশটাই এখন আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।
প্রতিবেদক : দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে আপনি কী কী বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
উপাচার্য : আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বড় কোনো দৃশ্যমান বড় প্রকল্প না করলেও নীতিগতভাবে শিক্ষকদের গুরুত্ব দিয়েছি। প্রতিটি অনুষ্ঠানে আমি বলেছি একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তোলে শিক্ষকরা, আবার পিছিয়ে দিতেও পারে শিক্ষকরা। আমি সবসময় শিক্ষকদের উৎসাহিত করেছি নিয়মিত ও আন্তরিক হতে। শিক্ষক যদি তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ও এগিয়ে যায়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে দ্বিতীয় শ্রেণিতে থাকলেও ভালো শিক্ষকের মাধ্যমে এটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হতে পারে। শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের আদর্শ হয়ে ওঠেন। তাদের জ্ঞান, আচরণ ও পাঠদানের ক্ষমতা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে। তাই আমি বারবার স্মরণ করিয়ে দিই, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ শিক্ষকদের হাতেই। ভালো শিক্ষক মানেই একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতিবেদক : পদোন্নতি, শিক্ষার মান ও গবেষণা কার্যক্রমে গত এক বছরে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে?
উপাচার্য : গত এক বছরে পদোন্নতি, শিক্ষার মান এবং গবেষণায় আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ অগ্রগতি অর্জনের চেষ্টা করেছি। আমি আগের প্রশাসনের মতো অতিমাত্রায় কঠোর না হলেও গুণগত মানের সঙ্গে কোনো আপস করিনি। পদোন্নতির ক্ষেত্রে এমন ব্যবস্থা করেছি যাতে শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা না তৈরি হয়, আবার মানেরও ব্যত্যয় না ঘটে। একেবারে কঠিন শর্ত দিয়ে আটকে না রেখে এমনভাবে প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করেছি যাতে শিক্ষকরা উৎসাহ পান এবং একইসঙ্গে ন্যায্যতা বজায় থাকে। ফলে একদিকে যেমন শিক্ষকদের মধ্য থেকে গবেষণার আগ্রহ বেড়েছে, অন্যদিকে সামগ্রিকভাবে শিক্ষার মানও উন্নত হয়েছে।
প্রতিবেদক : গবেষণা এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?
উপাচার্য : গবেষণা এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের ক্যাম্পাস মাত্র ৫০ একরের। যেখানে ক্লাসরুমের সংকট তীব্র। প্রায় সব বিভাগেই দিনে দুই শিফটে (সকাল-বিকাল) ক্লাস নিতে হয়। এই সংকট কাটাতে আগামী জুনের মধ্যে নতুন ক্যাম্পাসে চারটি অ্যাকাডেমিক ভবনসহ মোট আটটি ভবনের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। এতে করে শিক্ষার পরিবেশ কিছুটা স্বস্তিকর হবে। মোট ৩৫টি বিভাগ হবে এবং সবগুলোকে পূর্ণমাত্রায় চালুর লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। পাশাপাশি, দুটি গবেষণা ইনস্টিটিউট চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে। শিক্ষকদের গবেষণায় উৎসাহ দিতে প্রয়োজনীয় ল্যাব, সরঞ্জাম ও সুযোগ-সুবিধার জন্য সরকারি ও ইউজিসির সহযোগিতা কামনা করেছি। একইসঙ্গে ক্যাম্পাসে বসবাসের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে শিক্ষকদের জন্য আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যাতে তারা ক্যাম্পাসে থেকেই শিক্ষায় আরও নিবেদিত হতে পারেন।
প্রতিবেদক : দুইটি গবেষণা ইনস্টিটিউট তৈরি করবেন বললেন, সেগুলো কোন ডিসিপ্লিনের উপর হবে?
উপাচার্য : দুইটি রিসার্চ ইনস্টিটিউট গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক, অন্যটি মানবিক এবং ব্যবসা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট গবেষণার জন্য। বিজ্ঞানভিত্তিক ইনস্টিটিউটে বিজ্ঞান বিভাগের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা একটি যৌথ প্ল্যাটফর্মে উন্নত গবেষণা করতে পারবেন। অন্যদিকে মানবিক এবং ব্যবসা শিক্ষা ইনস্টিটিউট গবেষণার জন্য একটি কেন্দ্রীয় পরিবেশ তৈরি করবে, যেখানে এসব বিভাগের গবেষকরা সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারবেন। নতুন ক্যাম্পাসে এই ইনস্টিটিউটগুলো গড়ে তোলার মাধ্যমে গবেষণার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য আরও অনুকূল অ্যাকাডেমিক পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে।
প্রতিবেদক : অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষা বা আমাদের যে কারিকুলাম সংস্কার, সেটা কতটুকু হয়েছে? আপনি কেমনটা প্রত্যাশা করেছিলেন?
উপাচার্য : শিক্ষাখাতে সারা দেশ নিয়ে মন্তব্য করতে পারব না। আমি তো এখানে ছোট পরিসরে আছি। আসলে আমাদের যারা নিয়োগ দিয়েছেন তারা আসলে আমাদেরকে নিয়োগ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছেন। খোলাখুলিভাবে বললে, আমরা তেমন সহযোগিতা কোথাও থেকে পাচ্ছি না। সংস্কারের কথা বলেন আর যে কথাই বলেন, সবকিছুর পেছনে তো রাষ্ট্রের সহযোগিতা দরকার। আমি এখানে আসার পরে দৃশ্যত কোনো সহযোগিতা পাইনি। যেকোনো পদক্ষেপ নিয়ে যে সহযোগিতা পাওয়া কথা, এখনো এরকম কিছু পাইনি।
প্রতিবেদক : সরকার পতনের পর ছাত্ররাজনীতি নিয়ে কী ভাবছেন? এদিকে ছাত্রসংসদের দাবিও রয়েছে, সবকিছু মিলিয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্তের কথা ভাবছেন কি-না?
উপাচার্য : ছাত্র সংসদ নিয়ে আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। বর্তমানে ছাত্ররাজনীতি এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ। যদিও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও ছাত্র সংসদ এক নয়, তবুও ছাত্রদের জন্য একটি নির্বাচিত প্রতিনিধি কমিটি থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একজন ছাত্র সমস্যার সম্মুখীন হলে তার কাছে যাওয়ার জন্য কোনো দায়িত্বশীল বডি থাকা প্রয়োজন। নির্বাচিত কমিটি শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা করবে, সমস্যার সমাধান করবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বজায় রাখবে। তাই এই কমিটির মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর এবং কার্যকর পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছি, যেখানে নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি থাকবে।
প্রতিবেদক : রাজনীতি এবং শিক্ষক রাজনীতি দুইটাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় ছিল। আপনি কী মনে করেন এটা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা উচিত?
উপাচার্য : গত ১৬ বছরে একটি দল ছাড়া অন্য কোনো দলকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় হতে দেওয়া হয়নি। ফলে রাজনীতির জায়গাটি একচেটিয়া ছিল। কিন্তু, সম্প্রতি যে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে এতগুলো ছাত্র রক্ত দিলো, এর পেছনে মূল শক্তিটা কী? এটি ছিল রাজনৈতিক চেতনা। বাইরের দেশের রাজনীতি যেমন আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও গাজার হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে একসাথে দাঁড়াচ্ছে এটাও রাজনৈতিক সচেতনতা। ছাত্রদের অবশ্যই রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। যখন কিছু বিবেকের বিরুদ্ধে যাবে, তখনই সে রুখে দাঁড়াবে। এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট দলের হয়ে রাজনীতির প্রয়োজন নেই। ছাত্র যেন রাজনৈতিক সচেতনতা হারিয়ে না ফেলে এই চেতনা থেকেই ২৪-এর মতো ঘটনা সম্ভব হয়েছে।
প্রতিবেদক : সরকার পরিবর্তনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট গঠনে কোনো প্রভাব পড়েছে কি-না?
উপাচার্য : আমরা এখন পর্যন্ত শুধু রেগুলার বাজেটই পেয়েছি। তবে কিছু বিষয় সত্যিই বিস্ময়কর লেগেছে। যেমন শুনেছি, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু শিক্ষক নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষকও দেওয়া হয়নি। কারণ, হিসেবে বলা হয়েছে, আমরা গুচ্ছ ভর্তি ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে এসেছি। অথচ আমার জানা মতে, শুধু আমরাই না, আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বেরিয়েছে-তাদের কিন্তু শিক্ষক দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের বৈষম্য খুব কষ্ট দেয়। ব্যক্তিগতভাবে হয়ত আমার দুর্বলতা আছে। আমাকে মন্ত্রণালয়ে তেমন কেউ চেনে না। আমি কখনো মন্ত্রণালয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট টেবিল ঘুরে ঘুরে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করিনি, করতেও চাই না।
প্রতিবেদক : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আপনার ভিশন, মিশন কী? সামনে কোথায় দেখতে চান?
উপাচার্য : জুন-জুলাইয়ের দিকেই আমরা চারটা অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং আর চারটা হল যদি রানিং পেয়ে যাই, তাহলে আমরা আমাদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম নতুন ক্যাম্পাসে শুরু করব। আমরা বলেছি সেখানে বিদ্যুৎ লাইন, ফ্যান, এসি, লিফট, পানির লাইন সবকিছু যেন থাকে। যাতে আমরা ক্লাস শুরু করতে পারি। আমি চাচ্ছি যে, পুরাতন ক্যাম্পাসে আমরা আইন এবং ব্যবসায় অনুষদ এখানে রাখব। আইন বিভাগ এখন যে বিল্ডিংটাতে আইন এবং আইসিটি ব্যবহার করছে, সম্পূর্ণ আইন বিভাগকে দিয়ে দেওয়া হবে। আর ঐদিকের বিল্ডিং তিনটা-একটা হলো বিজ্ঞান অনুষদ, কলা, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ আর হলো ব্যবসায় অনুষদ। এগুলা আমরা ব্যবসায় অনুষদকে দিয়ে দেব। কারণ, ব্যবসায় অনুষদ আটটা বিভাগে চলে যাবে, এখন চারটা আছে। এটি আমি চাচ্ছি, এখনো আমরা সিন্ডিকেটে আলোচনা করিনি। আমার পরিকল্পনা রয়েছে। ওখানে আমাদের এখন যে সকালে বিকালে দুইবার ক্লাস হচ্ছে, এই অভাবগুলো থাকবে না। পর্যাপ্ত ক্লাসরুম হবে, পর্যাপ্ত ল্যাব হবে। আশা করা যায় এক বছর পরেই আমরা একটা ভালো কিছু পাবো।
প্রতিবেদক : জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান নিয়ে যদি কিছু বলতেন…
উপাচার্য : জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান হয়েছিল, পরবর্তীতে আমরা বিভিন্ন সময় বিতর্কিত কর্মকাণ্ড দেখতে পাচ্ছি। সমন্বয়কদের নামে চাঁদাবাজি, এরকম বেশ কিছু তথ্য। এই আন্দোলনে স্বৈরাচারের মাথা বদল হয়েছে, দেহ তো বদল হয়নি। মাথা বদল হলেও দেহের অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অক্ষত আছে। অনেক সরকারি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ একদম অক্ষত আছে।
সে জন্যেই আজ থেকে এক বছর আগে যে কল্পনাগুলো মাথায় ছিল, আজকের বাস্তবতা অনেক সরে এসেছে। অনেক প্রতিবন্ধকতা চলে এসেছে। এত বড় একটা অভ্যুত্থান যা সহজে হয় না। এরকম একটা অভ্যুত্থান হতে ১০০ বছর লাগে, কারণ এইভাবে সমস্ত মানুষের সম্পৃক্ততা-এটা কম কথা না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, আমরা এত বড় কিছু করার পরেও আজকে দেশের জন্য, জনগণের জন্য একটা সুন্দর দেশ গড়ে তুলতে পারিনি। তবুও আশা করছি, একটা সুন্দর, সুস্থ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। নির্বাচিত সরকার আসুক, তারা দেশকে ভালো পথে নিয়ে যাক। আসলে নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত শক্ত হাতে এই বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। আজকে যেগুলি দেখছি এগুলা এই–শক্ত নির্বাচিত সরকার না হওয়ার কারণেই। একটা নির্বাচিত সরকার আসলে এসব থেমে যাবে।
প্রতিবেদক : আগামীতে যারা নির্বাচিত সরকারে আসবেন তাদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী থাকবে?
উপাচার্য : আমি ৭১ দেখেছি, তখন ছোট ছিলাম চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তাম। আমি ৯০-এর অভ্যুত্থান দেখেছি, তখন আমি সরাসরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আর ২৪ দেখলাম। কেন যেন সাধারণ মানুষ যা চায়, সেটা পায় না। কোথায় যেন একটা আটকে যাওয়ার জায়গা আছে। যে জায়গাতে মানুষ, মানুষের মতো করে সবকিছু পায় না। আমি চাই এবার, মানুষের মতো মানুষ। সেই ধরনের সংসদ সদস্য, সেই ধরনের সরকার পাবে; যা জনগণ চায়। দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ একটা সরকার আসুক। যেই সরকার জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে না, জবাবদিহিতা থাকবে সরকারের। তারা মানুষকে মানুষ মনে করে ও শাসন করবে। তারা প্রভু হয়ে যাবে না। এটাই আমার কথা।
প্রতিবেদক : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আগামী সরকারের কাছে কী প্রত্যাশা আপনার?
উপাচার্য : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটাই স্লোগান-কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চয়ই এগিয়ে যাবে। এখানে সরকার সহযোগিতা করলেও, না করলেও, ইনশাআল্লাহ!
প্রতিবেদক : অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে সময় দেওয়ার জন্য!
উপাচার্য : আপনাকেও ধন্যবাদ!
- ইমতিয়াজ রিফাত/এমআই