ছাত্রলীগের দখলে জবির আইইআর ইনস্টিটিউটের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ

জবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৫, ১৫:১৭
---2025-08-08T215652-68961e5da682f-689863c6d1905.jpg)
ছবি : সংগৃহীত
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রায় ৫৪৩ সদস্যের এই প্রাইভেট গ্রুপে ইনস্টিটিউটের সব শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যুক্ত আছেন। বিভাগীয় নোটিশ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান–প্রদানের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয় গ্রুপটি।
অভিযোগ উঠেছে, শুধু গুরুত্বপূর্ণ নোটিশ এবং তথ্য দিয়েই নয়, বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন মতের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উসকে দিতে এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়। এছাড়া গ্রুপের মাধ্যমে র্যাগিং পক্ষে বিভিন্ন পোস্ট করার প্রমাণ পাওয়া যায়। পাশাপাশি ভিন্ন মতকে দমন করতে ব্যবহার করা হয় গ্রুপটি।
দেখা যায়, গ্রুপের এডমিন এবং মডারেটর প্যানেলে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং তাদের আস্থাভাজন। এদের মধ্যে রয়েছে বিভাগ ছাত্রলীগের সভাপতি শাহীন বাদশা, মো. এনামুল হক (ফাহিম), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইমরান তালুকদার (পলিন), তাসনীম আদন, পিয়ুস সাহাসহ অনেকে।
জানা গেছে, ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাকর্মীকে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে গা ঢাকা দেয়ার পর এই গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করেন তাসনীম আদন নামে ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী। বর্তমানে গ্রুপটি অনেকটাই তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানা যায়।
সম্প্রতি এক র্যাগিং এ ঘটনার ধামাচাপা দিতে এবং র্যাগিং এর বিরুদ্ধে প্রশাসিত সংবাদকে নিয়ে অসৌজন্যমূলক ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন যে, এই গ্রুপটিকে অস্ত্র হিসেবে এই ব্যবহার করছে তারা।
ইইন্সটিটিউটে ঘটে যাওয়া র্যাগিং এর বিরুদ্ধে প্রকাশিত বাংলাদেশের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিউজ রিপোর্ট স্ক্রিনশট শেয়ার করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন তাসনীম আদন। সেই পোস্টে রান শাহেদ রনি নামে আরেক ছাত্রলীগ কর্মী মন্তব্য করেন, এসব হলুদ সাংঘাতিক দের জায়গা মতো বম্বে মরিচ লাগাইয়া দেওয়া দরকার।
অন্তর শর্মা নামে ইন্সটিটিউট ছাত্রলীগে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এক মন্তব্য করেন, এমন হাম্বাদিককে আমি একটু দেখতে চাই আমার নতুন নিউজ পোর্টাল (চুপথাকো.কম) এ তাকে নিয়োগ দিতে চাই।
এমন একাধিক কুরুচিপূর্ণ ও বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য দেখতে পাওয়া যায় গ্রুপের বিভিন্ন পোস্ট ও কমেন্টে।
ইন্সটিটিউটের স্নাতকোত্তর এক শিক্ষার্থী বলেন, এই গ্রুপটি নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের পোস্টেড নেতাকর্মীদের উদ্যোগে খোলা হয়েছে। তারাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের মতের বাইরে কেও কিছু লিখলে বা বললে তারা সেটা মুছে দেয়। ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের এমন তৎপরতা প্রত্যাশা করি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ৫ই আগস্ট আগে ইন্সটিটিউটে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলো ছাত্রলীগ। নবীন শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সাথে সাথে প্রথম একমাস তাদেরকে ভিন্নমত, পথ, দল অনুসরণ না করতে হুঁশিয়ারি দেয়া হতো। ক্লাসগুলো আর ক্লাস মনে হতো না, মনে হতো ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে এইসব সন্ত্রাসীদের আমরা ইন্সটিটিউটে দেখতে চাইনা। গবেষণার লেশমাত্র নেই, আছে আকাশছোঁয়া দুর্নীতি আর ফ্যাসিবাদী শক্তি।
এ বিষয়ে আইইআর’র পরিচালক অধ্যাপক ড. মনিরা জাহান বলেন, ছাত্রলীগের পোলাপান যেটা আছে, আপনারা বলছেন, ঠিক আছে, আমি দেখছি। আমাকে আরও একজন বলেছেন। গ্রুপের অ্যাডমিনের দায়িত্বে ছাত্রলীগের একজনের নাম বললে তিনি বলেন, সে ড্রপ আউট হয়ে গেছে। এখন সে আসে না। আমি মিটিংয়ে আছি। আপনি সরাসরি এসে কথা বলেন বলে ফোন কেটে দেন।
- জেএন/এমআই