Logo

ক্যাম্পাস

শহীদ সাজিদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ, শোক কাটাতে পারেনি পরিবার

Icon

জান্নাতুন নাইম, জবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৭:১২

শহীদ সাজিদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ, শোক কাটাতে পারেনি পরিবার

শহীদ সাজিদ। ছবি : সংগৃহীত

‘ও থাকলে আব্বুকে ধরার জন্য আশেপাশে মানুষ খোঁজা লাগত না। একটা ভরসার জায়গা তো থাকত। অনেক সিদ্ধান্ত একা একা নেওয়া লাগছে। আলোচনা করার মানুষ নেই। আমার সঙ্গে গল্প করারও কেউ নেই।’ কথাগুলো শহীদ সাজিদের বোন ফারজানা হকের।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) জুলাই অভ্যত্থানে শহীদ ইকরামুল হক সাজিদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গতবছর ১৪ আগস্টের এই দিনে জীবনের মায়া ত্যাগ করে, বাবা-মায়ের স্নেহ-মমতা এবং বোনের ভালোবাসা উপেক্ষা করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাজিদ। দায়িত্ব সপে দেন একমাত্র বড় বোন ফারজানাকে। 

পুরো নাম ইকরামুল হক সাজিদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন তাকে ‘শহীদ সাজিদ’ নামেই চেনেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের (১৪ ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট মিরপুর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা কর্মসূচিতে গুলিবিদ্ধ হন সাজিদ। মাথার পেছন থেকে প্রবেশ করা গুলি আটকে যায় চোখের পেছনে। সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতবছর আজকের এই দিনে শহীদের চাদর গায়ে জড়ান সাজিদ।

মা-বাবার দুই সন্তানের ছোট ছিলেন সাজিদ। তার মৃত্যুর পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন তার বাবা। তখন থেকে একা হাতে সবকিছু সামলাচ্ছেন বড় বোন ফারজানা হক। তিনি বলেন, আব্বু অনেক বেশি অসুস্থ। নড়াচড়া করতে পারেন না। তাকে উঠানোর জন্য আমরা আশেপাশে লোক খুঁজি। কে একটু ধরে উঠিয়ে দিবে। হাসপাতালে থাকলেও অনেক সময় দেখা যায় ওয়াড বয় নাই। ছেলে মানুষের প্রয়োজন। তখন মনে হয় সাজিদ থাকলে এমন আশেপাশে মানুষ খোঁজা লাগত না। 

তিনি আরও বলেন, অনেক আলট্রাস্নোগ্রাফ, এক্সরে টেস্ট করাতে গেলে বলে আপনাদের সঙ্গে ছেলে মানুষ নাই? গত বুধবার আব্বুকে ওটিতে নেওয়ার সময় বন্ড সইয়ের সময়ও ডাক্তার এটা বলেছেন। এসব জায়গাগুলোতে ওকে অনেক মিস করি। ও থাকলে একটা ভরসা তো থাকত। এখন অনেক সিদ্ধান্ত একা একা নিতে হচ্ছে। আলাপ-আলোচনা করার মতো কেউ নাই। আম্মুও একেবারে ভেঙে পড়েছেন। আম্মুর সাথেও আলোচনা করতে পারছি না। নিজে বুঝে, যেটা ভালো মনে হচ্ছে, সেটাই করছি।

আদর্শ ছেলে ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলেন সাজিদ। এ বিষয়ে তার বোন ফারাজানা বলেন, স্বাভাবিক জ্ঞানের আদর্শ ছেলে ছিল আমাদের আমার ভাই। নম্র ও ভদ্র, মানুষের উপকার করতে পারলেই যেন ও শান্তি পেত। এমনও হয়েছে যে বাসে বই বিক্রি হচ্ছে, ওর লাগবে না কিন্তু ওই মানুষটাকে সহযোগিতার জন্য বইটা কিনেছে। সর্বদা অন্যায়ের প্রতিবাদ করত সাজিদ। আর এরই ফলে অনেকের চোখে খারাপও হয়ে যায়। যেটা ওর কাছে মনে হয়েছে এমনটা হতে পারে না, উচিত না, অন্যায়। সেটা ও সহ্য করত না।

সাজিদের স্মৃতিচারণ করে ফারজানা হক বলেন, অনেক স্মৃতি রয়েছে ওকে মনে করার। তবে আমার সঙ্গে ওর একটা স্মৃতি সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে। সেটা হচ্ছে আমরা প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে কিছু না কিছু গল্প করতাম। কারণ আমি প্রতিদিন ওর ঘুম থেকে উঠার আগেই অফিসে চলে যেতাম। আমাদের একবারে রাতে দেখা হত। দেখা যাচ্ছে আমি অফিস থেকে আসলেও সাজিদ টিউশন শেষ করে বাসায় আসেনি। তারপরও প্রতিদিন রাতেই আমরা ভাই-বোন গল্প করতাম, একে অপরের খোঁজখবর নিতাম। এই ব্যাপার গুলো আসলে খুব মিস করি। কারণ এখন তো আর গল্প করার কেউ নাই।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার শহীদ ইকরামুল হক সাজিদ’র প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বাদ যোহর সাজিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এক দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

প্রসঙ্গত, গতবছর জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার, শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈষম্য দূরীকরণ ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এক দফা আন্দোলনে নামে। এ আন্দোলনে বহু শিক্ষার্থী আহত ও নিহত হন। সাজিদ ছিলেন তাদের অন্যতম।

  • এমআই

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

জুলাই অভ্যুত্থান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর