ক্যাম্পাসে র্যাগিং নয়, সুস্থ সংস্কৃতিই হোক পরিচয়

অনিরুদ্ধ সাজ্জাদ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১৬:২৫

শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ নষ্টকারী এক সামাজিক ব্যাধির নাম র্যাগিং। দেশের প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো চালু রয়েছে এই অপসংস্কৃতি। আড়ালে পরিচয়পর্ব কিংবা শিষ্টাচার শেখানোর নামে অনুজ শিক্ষার্থীদের উপর চলে মানসিক অত্যাচার। অথচ কথা ছিল সম্মান ও সৌহার্দ্যের সঙ্গে জ্ঞানার্জনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসের সংস্কৃতি কেমন হওয়া উচিত, তা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তুলে ধরেছেন অনিরুদ্ধ সাজ্জাদ।
র্যাগিংয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়
র্যাগিংকে না বলুন। এটি একটি সামাজিক ব্যাধি, যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নবাগত শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন এবং হয়রানির মাধ্যমে ঘটে। এটি শিক্ষার পরিবেশকে নষ্ট করে, ভীতিকর ও অপমানজনক পরিস্থিতি তৈরি করে। অনেক সময় র্যাগিংয়ের ফলে ছাত্রছাত্রীদের মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়, এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে।
প্রকৃত শিক্ষা কখনো কারও আত্মসম্মান হরণ করে না, বরং সহযোগিতা, ভালোবাসা ও সম্মানের শিক্ষা দেয়। তাই র্যাগিংয়ের মতো ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রশাসন এবং সমাজকে একযোগে রুখে দাঁড়াতে হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো, কঠোর আইন প্রয়োগ এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। সবাইকে মনে রাখতে হবে, "র্যাগিং নয়, বন্ধুত্বই হোক সম্পর্কের ভিত্তি।" একমাত্র সচেতনতা ও সহানুভূতির মাধ্যমে র্যাগিং সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা সম্ভব। র্যাগিং মুক্ত ক্যাম্পাসই হোক শিক্ষার আদর্শ স্থান।
আবির হাসান : শিক্ষার্থী, মার্কেটিং বিভাগ, জাককানইবি
বিশ্ববিদ্যালয় হোক জ্ঞানচর্চার পাঠস্থান
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সূচনা হওয়া উচিত উৎসাহ ও সম্ভাবনায় ভরা, আতঙ্ক ও অপমানে নয়। দুর্ভাগ্যবশত, র্যাগিং নামক বিষবৃক্ষ অনেক ক্যাম্পাসে এই সুন্দর সময়টিকে কলুষিত করে। এটি শারীরিক-মানসিক নির্যাতন, অপমান ও চরম মানসিক আঘাতের জন্ম দেয়, যা ভবিষ্যতের উজ্জ্বল মেধাদের ভীত, আত্মবিশ্বাসহীন ও মনোবলে দুর্বল করে।
র্যাগিংয়ের নামে যে ‘সংস্কৃতি’ গড়ে ওঠে, তা প্রকৃতপক্ষে ভয়ভিত্তিক সম্পর্কের ভীত, যা সামাজিক সম্প্রীতি ও সৃজনশীলতাকে ধ্বংস করে। র্যাগিংয়ের এই কুসংস্কারের অবসান জরুরি। এর স্থলে গড়ে তুলতে হবে সুস্থ, ইতিবাচক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্যাম্পাস সংস্কৃতি। সিনিয়র-জুনিয়রের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠুক পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের বন্ধনে। পরিচিতির মাধ্যম হোক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক, ক্রীড়া, স্বেচ্ছাসেবা বা একাডেমিক আলোচনা। বিশ্ববিদ্যালয় হোক মুক্ত চিন্তা, জ্ঞানার্জন ও সৃজনশীলতার পাঠস্থান, যেখানে ভয় নয়, বন্ধুত্ব; নিপীড়ন নয়, উৎসাহ – এই হোক আমাদের ক্যাম্পাসের প্রকৃত পরিচয়। র্যাগিং নয়, গড়ে তুলুন মানবিক মূল্যবোধের সুস্থ সংস্কৃতি।
মো. ইমাম গাজ্জালী খান : শিক্ষার্থী, পপুলেশন সায়েন্স বিভাগ, জাককানইবি
সৌহার্দ্য ও সম্মানে স্বাগত জানাই নতুনদের
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন নতুন স্বপ্ন ও নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের এক অনন্য যাত্রা। কিন্তু র্যাগিং নামের অমানবিক প্রথা এই সুন্দর যাত্রার শুরুতেই ভয় ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে। কারও ব্যক্তিত্ব ভেঙে দেওয়া, অপমান করা কিংবা জোর করে কিছু করানো কখনোই মজা নয়; এটি মানসিক নির্যাতন।
নতুনদের স্বাগত জানানোর সঠিক পথ হলো সৌহার্দ্য, সম্মান ও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, আলোচনাসভা বা সহপাঠে সহযোগিতার মাধ্যমে পরিচিত হওয়া যায় অনেক ভালোভাবে। সুস্থ সংস্কৃতিই পারে আমাদের সম্পর্ককে দৃঢ়, পরিবেশকে আনন্দময় এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে নিরাপদ করে তুলতে। তাই আসুন, র্যাগিং বন্ধ করে মানবিকতা, সহমর্মিতা এবং সংস্কৃতিকে করি আমাদের পরিচয়ের প্রকৃত রূপ।
মুসতারিন রহমান স্নিগ্ধা : শিক্ষার্থী, ফোকলোর বিভাগ, জাককানইবি
শিক্ষাঙ্গন নিরাপদ হোক সবার জন্য
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, শিক্ষা হলো অবয়ব, আর তার লাবণ্য হলো সংস্কৃতি। মানুষ যত বেশি শিক্ষিত, তত বেশি সংস্কৃতিবান। তাই উচ্চতর শিক্ষা উচ্চতর সংস্কৃতি-মূল্যবোধের জন্ম দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি হওয়া উচিত।
কিন্তু র্যাগিং সেই সূচনাকে কলুষিত করে। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত র্যাগিং প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে পরিচয় ও সম্পর্ক স্থাপনের একটি প্রক্রিয়া হিসেবে চালু থাকে। এই প্রক্রিয়ায় গড়ে ওঠা সম্পর্ক আদৌ সুস্থতা বহন করে না। সিনিয়রদের উচিত র্যাগিং না করে বরং টিম স্পিরিট তৈরি করা, একে অপরের প্রতি সহযোগিতা এবং বন্ধুত্বের মাধ্যমে একটি পরিবার গঠন করা। শিক্ষাঙ্গনের প্রকৃত পরিচয় হওয়া উচিত জ্ঞান, সহমর্মিতা ও সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা, যেখানে প্রত্যেকেই নিরাপদ, সম্মানিত ও অনুপ্রাণিত বোধ করে। ভয় নয়, হাসিই হোক প্রথম অভ্যর্থনা।
সুজানা ইতি : শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, জাককানইবি
এমএইচএস