Logo

ক্যাম্পাস

শিক্ষক সংকটে নাজেহাল নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

Icon

মো. সাইফুল ইসলাম, জাককানইবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৫, ২১:০৬

শিক্ষক সংকটে নাজেহাল নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রতিষ্ঠার দুই দশক পেরোলেও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটের সমস্যা কমেনি। প্রতিবছর শিক্ষার্থী ও বিভাগ বাড়লেও শিক্ষক সংখ্যা সেই অনুপাতে বৃদ্ধি পায়নি। ফলে শিক্ষার্থীর তুলনায় অর্ধেকেরও কম শিক্ষক নিয়েই পাঠদান চলছে। এর কারণে সেশনজট, অসম্পূর্ণ সিলেবাস, গবেষণার স্থবিরতা এবং একাডেমিক কার্যক্রমে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক প্রকাশনা অনুযায়ী, বর্তমানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ১০ হাজার ৮০৯ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতি ২০ শিক্ষার্থীর জন্য একজন পূর্ণকালীন শিক্ষক থাকা আবশ্যক। সেক্ষেত্রে প্রয়োজন ৫৪০ জন শিক্ষক। তবে বাস্তবে কর্মরত আছেন মাত্র ২২০ জন। এদের মধ্যে অনেকে শিক্ষাছুটিতে থাকায় কার্যকর শিক্ষক সংখ্যা আরও কমে গেছে।

রেজিস্ট্রার কার্যালয় জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের মধ্যে নয়টিতে শিক্ষক সংখ্যা পাঁচজন বা তারও কম। নজরুল স্টাডিজ ইনস্টিটিউটে বর্তমানে কোনো শিক্ষক নেই। পপুলেশন সায়েন্স বিভাগে অনুমোদিত আটজনের মধ্যে চারজন ছুটিতে রয়েছেন। দর্শন, মার্কেটিং, নৃবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক সংখ্যা মাত্র চারজন, ইতিহাস ও পরিসংখ্যানে তিনজন, সমাজবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে কার্যত দুইজন শিক্ষক দিয়ে পুরো পাঠদান পরিচালনা করা হচ্ছে। অথচ ইউজিসির নির্দেশনায় আউটকাম বেইজড এডুকেশন (ওবিই) বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি বিভাগে কমপক্ষে ১৫-১৬ জন শিক্ষক থাকা জরুরি।

উপাচার্য অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শিক্ষক সংকটের বিষয়টি আমরা জানি এবং বারবার ইউজিসিকে জানিয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি। ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া নতুন শিক্ষক নিয়োগ সম্ভব নয়।’

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, কয়েকজন শিক্ষক দিয়ে অসংখ্য কোর্স করানো সম্ভব নয়। অতিথি শিক্ষক আনার পরও বেশিরভাগ কোর্স অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এর ফলে পরীক্ষা বিলম্বিত হয়, ফলাফল ঝুলে যায় এবং শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছেন।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইউসুফ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। অভিযোগ করলে শিক্ষক সংকটের কথা বলা হয়।’

মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রাতুল রহমান বলেন, ‘সংকটে একজন শিক্ষককে অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হয়। এতে শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে। গবেষণা, সেমিনার বা নতুন জ্ঞান উৎপাদনের কাজ হচ্ছে না।’

শিক্ষকরাও সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. আব্দুল মোমেন বলেন, ‘মাত্র চারজন শিক্ষক দিয়ে পাঁচটি ব্যাচের ২৫টি কোর্স চালানো সম্ভব নয়। গবেষণা, কনফারেন্স বা একাডেমিক ইভেন্ট আয়োজনও করা যাচ্ছে না।’

ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ শামসুজ্জামান বলেন, ‘একজন শিক্ষককে একই সঙ্গে ক্লাস, খাতা মূল্যায়ন, প্রশ্ন তৈরি ও প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার মান নষ্ট হচ্ছে। ইউজিসির নির্দেশিত ওবিই বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, এবং উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মানও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ আরও ধসে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এমএইচএস 


Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর