জাবির হল সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে মানহানির অভিযোগ ছাত্রদল প্রার্থীর বিরুদ্ধে

জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:২৯

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ঘিরে শহীদ রফিক জব্বার হলে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রদল মনোনীত সহ–সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদপ্রার্থী তানজিম হোসেনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আরিফুর রহমানকে মানহানি ও সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রত্যক্ষ সংহতির অভিযোগও রয়েছে।
ভুক্তভোগী প্রার্থী আরিফুর রহমান বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তানজিম হোসেন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়েছে। এতে আমার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্মান মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে।’
কী ঘটেছিল
অভিযুক্ত তানজিম হোসেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী এবং শহীদ রফিক জব্বার হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদলের মনোনীত এজিএস প্রার্থী। গত ২৮ আগস্ট তিনি হল সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মো. মাহাবুবুর রহমান ভূঁইয়ার কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আরিফুর রহমান তাকে হুমকি দিয়ে পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছেন এবং গত ২০ আগস্ট রাত ১১টায় কমনরুমে উসকানিমূলক মন্তব্য করেন।
এই অভিযোগের ভিত্তিতে রিটার্নিং অফিসার ৩১ আগস্ট আরিফুর রহমানকে শোকজ করে ১ সেপ্টেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য উপস্থিত হতে বলেন। তবে রিটার্নিং অফিসার জানান, তানজিমের অভিযোগের তারিখ নিয়ে অসঙ্গতি রয়েছে। তিনি বলেন, “তিনি (তানজিম হেসেন) বলেছেন ২০ তারিখ রাতে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমাদের রেকর্ডে দেখা যায় তিনি মনোনয়ন নিয়েছেন ২১ তারিখে"।
মানহানির পাল্টা অভিযোগ
আত্মপক্ষ সমর্থনে হাজির হয়ে আরিফুর রহমান অভিযোগ করেন, তানজিম হোসেন পরিকল্পিতভাবে তার ব্যক্তিগত কথোপকথন গোপনে রেকর্ড করে কেটে–ছেঁটে নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছেন। এছাড়া ভুয়া ফেসবুক পেজ ব্যবহার করে মানহানিকর কনটেন্ট ছড়িয়েছেন এবং জাতীয় দৈনিকে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করিয়েছেন।
এছাড়াও গত ২ সেপ্টেম্বর তিনি এক লিখিত অভিযোগে বলেন, ‘এতে আমার ব্যক্তিগত মর্যাদা ও পারিবারিক সম্মান মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে প্রতিপক্ষ আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করেছে এবং আমার জীবন মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন।’
আরিফুর রহমান আরও দাবি করেন, ‘আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী সমাধান করুক। একইসাথে যে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর সংবাদ ছাপা হয়েছে, তারা যেন স্পষ্টভাবে জানায় সেই তথ্য মিথ্যা ছিল।’
ব্যাচমেটের ফেসবুক পোস্ট
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের অন্যতম রফিক জব্বার হলের ৫৩ ব্যাচের আবাসিক শিক্ষার্থী ও তানজিম হোসেনের ব্যাচমেট দিহান সাদনান হাসান ফেসবুকে লিখেছেন,
‘জাকসু কেন্দ্রিক নোংরা রাজনীতি আমাদের হল থেকেই শুরু হয়েছে। ব্যাচমেট তানজিম প্রথমে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কথা বললেও পরে ছাত্রদলের প্যানেলে যোগ দেয়। এরপর এজিএস পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতার জন্য আড্ডার আলাপ গোপনে রেকর্ড করে সেটি কাটছাঁট করে অভিযোগ আকারে কমিশনে জমা দেয়। আমরা যারা তখন উপস্থিত ছিলাম সবাই জানতাম অডিওটি এডিটেড। কিন্তু যখন প্রায় প্রমাণ হচ্ছিল অভিযোগ মিথ্যা, তখন ছাত্রদলের হস্তক্ষেপে হঠাৎ সব মীমাংসা হয়ে যায়। আমার কাছে মনে হয় এটি ছিল প্রিপ্ল্যান্ড, যা শুধু তাদের ক্ষমতার রিয়েলিটি চেক দিয়েছে।’
অভিযুক্ত প্রার্থীদের বক্তব্য
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তানজিম হোসেন বলেন, ‘আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল। এখন আমরা দু’জন অভিযোগ তুলে নেব।’ তিনি আরও দাবি করেন, দিহান সাদনান ফেসবুকে তার বিরুদ্ধে যে পোস্ট দিয়েছেন তা মিথ্যা।
তবে অন্য প্রার্থী আরিফুর রহমান জানান, ‘তানজিম হোসেন যে অভিযোগ দিয়েছে সেটা এখনো প্রক্রিয়াধীন। তবে এখানে যদি আমি সুষ্ঠু বিচার না পাই, তাহলে সাইবার বুলিং ও মানহানির বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে সমাধান চাইবো।’
রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান ভূঁইয়া জানান, দুজন প্রার্থীকে তথ্য ও সাক্ষ্য উপস্থাপনের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
আমানউল্লাহ খান/এমএইচএস