চবিতে সংঘর্ষ : মামুনের মাথায় লেখা ‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না’

চবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:২৮

ছবি : বাংলাদেশের খবর
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট স্থানীয় জোবরা গ্রামের বাসিন্দাদের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছেন অনেকে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী মো. মামুন মিয়া। তার মাথার অপারেশনের পর স্কাল্প খুলে রেখে দেওয়া হয়েছে রেফ্রিজারেটরে। আর তার মাথার সাদা ব্যান্ডেজে লেখা, ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’।
হাসপাতালে টানা ৪ দিন জীবন সন্ধিক্ষণে থাকার পর মামুনকে নেওয়া হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় এখন কেবিনে শিফট করা হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রামের পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন মামুন।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘মামুনের অবস্থা কিছুটা ভালো। তার জ্ঞান ফিরেছে। এখন কেবিনে চিকিৎসা চলছে। মাথার মগজের অংশে অপারেশনের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করায় তার স্কাল্প খুলে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তার মাথায় এখন হাড় নেই, তবে ১-২ মাস পর অথবা অবস্থানুযায়ী আবার স্কাল্প যুক্ত করা হবে।’
কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, মামুনের মাথার পেছনের অংশে ধারালো অস্ত্রের আঘাত লেগেছে। অপারেশনের মাধ্যমে মাথা থেকে ১৩ টুকরো হাড় বের করা এবং নাকে ও মুখে আঘাত লেগে ফেটে গেছে কানের পর্দা।
মামুনের সহ-শিক্ষার্থী রাসেল রানা বলেন, ‘গত ৩১ আগস্ট সংঘর্ষের সময় মামুনের মাথায় ধারালো অস্ত্র, রামদা, চাপাতি দিয়ে গুরুতর আঘাত করা হয়। প্রশ্ন, মানুষ হয়ে আরেকজন মানুষকে কীভাবে এভাবে মারতে পারে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া চিকিৎসাধীন মামুনের ছবি শেয়ার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘যে মস্তিষ্কে ছিল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হওয়ার বুনন, যে মস্তিষ্কে সুশিক্ষায় দেশ গড়ার শপথ, আজ সে মস্তিষ্কের উপরে হাড় নেই। বিশ্ববিদ্যালয় তার হাড়ের সুরক্ষা দিতে পারেনি, রাষ্ট্র তার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে পারেনি। তাদের চরম ব্যর্থতায় আমার ভাইয়ের মস্তিষ্ক আজ হাড়শূণ্য।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আরিয়ান খান রাকিব বলেন, ‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না— এই এলাকার মানুষগুলো কতটা বর্বর হলে, এভাবে শিক্ষার্থীদের কুপিয়ে আহত করতে পারে। আমাদের একটাই দাবি এই বর্বর সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’
উল্লেখ্য, গত ৩০ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর ভাড়া বাসার গেট খোলাকে কেন্দ্র করে দারোয়ানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার জেরে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ওই রাতে শুরু হওয়া ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া আর সংঘর্ষ পরদিন রবিবারও চলে দফায়-দফায়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উপ-উপাচার্য, শিক্ষার্থী, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যসহ আহত হন পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী।
আব্দুল্লাহ আল নাঈম/এএ