Logo

ক্যাম্পাস

কুবির ৭ বিভাগে নেই কোনো অধ্যাপক, ৪টিতে নেই ডক্টরেট ডিগ্রিধারী

Icon

ইমতিয়াজ রিফাত, কুবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:৩৬

কুবির ৭ বিভাগে নেই কোনো অধ্যাপক, ৪টিতে নেই ডক্টরেট ডিগ্রিধারী

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিভিন্ন বিভাগে অধ্যাপক সংকট চলছিল। সমানভাবে দেখা দিয়েছে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী শিক্ষকের অভাবও। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি বিভাগের মধ্যে মোট ৫২ জন অধ্যাপক থাকলেও সাতটি বিভাগ অধ্যাপক ছাড়া চলছে। এর মধ্যে চারটি বিভাগে একজনও ডক্টরেট ডিগ্রিধারী শিক্ষক নেই।

রেজিস্ট্রার দপ্তরের তথ্যমতে, অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক পদের সংখ্যা ৬৬০টি। এর মধ্যে অধ্যাপক ৭২টি, সহযোগী অধ্যাপক ১২৬টি, সহকারী অধ্যাপক ১৯৫টি এবং প্রভাষক ২৬৭টি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক ছাড়কৃত পদের সংখ্যা ২৭৪টি। এর মধ্যে অধ্যাপক ১৭টি, সহযোগী অধ্যাপক ৩৬টি, সহকারী অধ্যাপক ৯৩টি এবং প্রভাষক ১২৮টি। বর্তমানে কর্মরত শিক্ষক সংখ্যা ২৮৩ জন, যার মধ্যে অধ্যাপক রয়েছেন ৫২ জন, সহযোগী অধ্যাপক ৬৯ জন, সহকারী অধ্যাপক ১৩৩ জন এবং প্রভাষক ২৯ জন।

তবে এই ৫২ জন অধ্যাপকের মধ্যে দুইজন ডেপুটেশনে রয়েছেন। তারা হলেন– লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল এবং মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান। ফলে কার্যত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকের সংখ্যা ৫০ জন।

এই ৫০ জন অধ্যাপকের ভিড়েও সাতটি বিভাগ অধ্যাপক ছাড়াই চলছে। এ বিভাগগুলো হলো– নৃবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, ফার্মেসী, সিএসই, আইন এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী এই সাতটি বিভাগের মোট ১৩টি অধ্যাপক পদের মধ্যে কোনো ছাড়পত্র নেই।

ডক্টরেট ডিগ্রিধারী শিক্ষকের ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮৩ জন শিক্ষকের মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা ৮২ জন। এদের মধ্যে অধ্যাপক ৪৮ জন, সহযোগী অধ্যাপক ২৮ জন, সহকারী অধ্যাপক ৩ জন। কোনো প্রভাষক পিএইচডি ডিগ্রিধারী নন। বর্তমানে দুইজন শিক্ষক ছুটিতে রয়েছেন। ফলে কার্যত কর্মরত ডক্টরেট ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা ৮০ জন।

তবে চারটি বিভাগ– নৃবিজ্ঞান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং ও আইন– ডক্টরেট ডিগ্রিধারী শিক্ষক ছাড়া চলছে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, অধ্যাপক বা ডক্টরেট শিক্ষকের অভাবে গবেষণা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। মানসম্মত পাঠদান হচ্ছে না। আইন বিভাগের শিক্ষার্থী বায়েজিদ হোসেন বলেন, "আমাদের বিভাগে ৮ জন শিক্ষক থাকলেও সবাই প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপক। শিক্ষার্থীরা সঠিক দিকনির্দেশনা পাচ্ছে না, গবেষণার সুযোগ নেই।"

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সায়েমা হক বলেন, ‘বিভাগে শিক্ষক সংকট চরমে। ৪–৫ জন শিক্ষক দিয়ে পুরো বিভাগ চলছে। শিক্ষকদের ওপর চাপ যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, শিক্ষার্থীরাও শিক্ষার মানে পিছিয়ে যাচ্ছে।’

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮৩ জন শিক্ষকের মধ্যে ৯৮ জন ছুটিতে রয়েছেন। এ অবস্থায় কার্যত ১৮৫ জন শিক্ষক ৬,৮৮৮ শিক্ষার্থীর দায়িত্বে আছেন। অর্থাৎ ৩৭ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক। যেখানে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ২০ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকা উচিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘সিনিয়র এবং জুনিয়র শিক্ষক উভয়ের সংকট রয়েছে। আমরা ইউজিসি’র কাছে বারবার আবেদন করেছি, কিন্তু সাহায্য পাচ্ছি না। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, কিন্তু হাত-পা বাঁধা।’

ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে আমাদের একটি সিস্টেম রয়েছে। অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিপোর্ট আসতে হবে। মিটিংয়ে সব রিকোয়্যারমেন্ট নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’

এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর