Logo

ক্যাম্পাস

বহিরাগতদের দৌরাত্ম্যে নিরাপত্তাহীন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

Icon

মো. সাইফুল ইসলাম, জাককানইবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:০৮

বহিরাগতদের দৌরাত্ম্যে নিরাপত্তাহীন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ছবি

ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় দুই দশক পেরিয়ে গেলেও নানা সংকটের বেড়াজালে আটকে আছে অগ্রগতি। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ও উদ্বেগজনক সমস্যা হলো ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাহীনতা।

চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল নিরাপত্তাকর্মী, পর্যাপ্ত আলোকব্যবস্থা না থাকা, সিসি ক্যামেরার সীমাবদ্ধতা, ভাঙা সীমানা প্রাচীর, অসম্পূর্ণ ফটক ও বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশের সুযোগ— সব মিলিয়ে দিন দিন অরক্ষিত হয়ে পড়ছে পুরো ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নির্মাণ শ্রমিক পর্যন্ত চুরি, ছিনতাই ও ইভটিজিংয়ের শিকার হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের বিভিন্ন স্থানে ভাঙা অংশ থাকায় এবং গেটগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা না থাকায় বহিরাগতরা সহজেই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করছে, বিশেষ করে সন্ধ্যার পর। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অন্ধকারে বাইরের লোকজন মাদক সেবন করছেন এবং হলে প্রবেশ করছেন। এর সুযোগে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে।

শিক্ষার্থীদের মোবাইল, ল্যাপটপ, সাইকেলসহ ব্যক্তিগত জিনিসপত্র প্রায়ই চুরি হচ্ছে। আবাসিক হলগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিতে। ওয়াশরুম থেকে পানির ট্যাপ, বৈদ্যুতিক বাল্ব চুরি এখন নিত্যদিনের ঘটনা।

বিদ্রোহী হলের শিক্ষার্থী আল মামুন বলেন, ‘হলে প্রায়ই চুরির ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় বহিরাগতদের চলাফেরা দেখা যায়। অথচ নিরাপত্তাকর্মীরা বেশিরভাগ সময় মোবাইলে টিকটক দেখায় ব্যস্ত থাকেন।’

সম্প্রতি রংপুর থেকে আসা নির্মাণ শ্রমিক মো. আমজাদ প্রথম দিন কাজ করতে এসে রাতেই হামলার শিকার হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গেট থেকে দুই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি তাকে ধরে নতুন কলা ভবনের ভাঙা দেয়ালের ভিতরে নিয়ে যায়। সেখানে অন্ধকারে তাকে মারধর করে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়।

এছাড়া ক্যাম্পাসে দলবেঁধে বেপরোয়া বাইক শোডাউন, নারী শিক্ষার্থীদের ইভটিজিংয়ের ঘটনা এবং সদ্য ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির ঘটনা ঘটেছে।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর সীমানা প্রাচীর সংস্কারের উদ্যোগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু একই দিন রাতেই দুষ্কৃতিকারীরা দেয়াল ভেঙে দেয়। পরে তা মেরামত করা হলেও পুনরায় ভাঙার বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে দেখা গেছে, আনসার সদস্যদের অনেকেই প্রক্টরিয়াল বডির কাউকে চিনেন না বা তাদের ফোন নম্বর জানেন না। ফলে জরুরি মুহূর্তে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২টি প্রধান ফটক, ৪টি আবাসিক হল, ২টি প্রশাসনিক ভবন, ৩টি একাডেমিক ভবন, ক্যাফেটেরিয়া, একাধিক ডরমেটরি, উপাচার্য ও ট্রেজারারের বাংলো, গেস্ট হাউস এবং নির্মাণাধীন ভবন রক্ষায় বর্তমানে নিরাপত্তাকর্মী আছেন মাত্র ৬৪ জন। ক্যাম্পাসের ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে তাদের টহলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জনপ্রতি দিনে ৮ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। ফলে প্রতি চেকপোস্টে এক থেকে সর্বোচ্চ দুইজন প্রহরী থাকেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী আনসার কমান্ডার মো. উজ্জল মিয়া বলেন, ‘অল্প সংখ্যক আনসার সদস্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পুরো ক্যাম্পাসের জন্য অন্তত ১০০ জন লোকবল প্রয়োজন। আরও ৪০ জন আনসারের জন্য আমরা চাহিদাপত্র পাঠিয়েছি।’

আনসার কমান্ডার সুজানুর রহমান জানান, ‘বিভিন্ন পোস্টে প্রায়ই মাত্র একজন নিরাপত্তাকর্মী থাকেন। দলবল নিয়ে বহিরাগতরা আসলে মোকাবিলা করা সম্ভব হয় না। ছাত্ররাও অনেক সময় পরিচয় জানতে চাইলে অসহযোগিতা করে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য আমরা কাজ করছি। বেশিরভাগ নিরাপত্তাকর্মী অভিজ্ঞ নন, তাই তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

লোকবল সংকটের কথা উল্লেখ করে সহকারী প্রক্টর ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম জনি বলেন, ‘সীমিত লোকবল দিয়ে পুরো ক্যাম্পাস টহল দেওয়া অনেক কষ্টসাধ্য। আমরা আনসারদের সংখ্যা বাড়ানোর চাহিদাপত্র জানিয়েছি, কিন্তু উল্লেখযোগ্য সাড়া পাইনি। তবুও প্রক্টরিয়াল বডি ও আনসাররা মিলে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।’

নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দ্রুত সীমানা প্রাচীর সংস্কার, গেটগুলোতে কঠোর নজরদারি, পর্যাপ্ত আলোক ব্যবস্থা, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নতুন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ ছাড়া এই সংকট সমাধান সম্ভব নয়।

এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর