
ছবি : বাংলাদেশের খবর
- বিশেষজ্ঞ ছাড়া সেবা
- সেবা নিতে গুনতে হয় অপেক্ষার প্রহর
শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ, একাকীত্ব ও হতাশা থেকে মুক্তি দেওয়ার অঙ্গীকারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয়েছিল মানসিক কাউন্সেলিং সেন্টার। কিন্তু প্রায় চার বছর পেরিয়ে গেলেও সেই সেবার বাস্তব চিত্র আশানুরূপ নয়। অনেক শিক্ষার্থী আজও জানেন না যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একটি সেন্টার রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে সহায়তা পেতে সময়ক্ষেপণ, পরিবেশে অস্বস্তি এবং বিশেষজ্ঞ কাউন্সেলরের অভাব নিয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রবণতা রোধ, বিষণ্নতা দূরীকরণ ও পরীক্ষা-ভীতি মোকাবিলায় ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিক ভবনের নিচতলায় মানসিক কাউন্সেলিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়।
কাউন্সেলিং সেন্টারের তথ্যমতে, গত চার বছরে প্রায় ১,৪০০ শিক্ষার্থী এই সেবা নিয়েছেন। মাসে গড়ে প্রায় ৩৫ জন শিক্ষার্থী কাউন্সেলিংয়ে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকসহ একই বিভাগের ৪৬ জন শিক্ষার্থী কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। বিশ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর তুলনায় এই পরিসংখ্যান অনেক কম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, কাউন্সেলিং সেবা পেতে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সপ্তমী কর্মকার অভিযোগ করেন, ‘আমাকে প্রায় দুই–তিন মাস পর ডাকা হয়েছিল। যারা কাউন্সেলিং দেন, তারা বিশেষজ্ঞ নন। মূলত সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী। তারা সমস্যা বোঝার চেষ্টা করেন, কিন্তু তাদের দেওয়া পরামর্শ অনেক সময় খুবই সাধারণ হয়।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা কাউন্সেলিং নিতে যাই, কিন্তু সেন্টারে গিয়ে দেখি কেউ নেই। আবার যারা থাকেন, তারা ব্যস্ত। সমস্যার কথা বলতেই বলা হয় সময় শেষ। মন হালকা না হয়ে বরং আরও ভারী হয়ে ফিরে আসতে হয়।’
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সুহাইল আহমেদ বলেন, ‘মেডিকেল সেন্টারের মধ্যে যে মানসিক কাউন্সেলিং সেন্টার আছে সেটাই জানতাম না। এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারলাম। শুনেছি এখানে এটি ঠিক মতো কার্যক্রম চালাতে পারছে না। বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সীমিত লোকবল ও পেশাদার কাউন্সেলরের অভাবে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সেলিং সেন্টারের অফিস সহকারী রেশমা রহমানও সেবার দুর্বলতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘লোকবল সংকটের কারণে অনেক সময় কাউন্সেলিং বিলম্বিত হয়। যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের ক্লাস ও পরীক্ষা থাকার কারণে সেবা দিতে জটিলতা তৈরি হয়। শিক্ষার্থীদের চাপও বেড়েছে। আমরা চেষ্টা করি যতটা সম্ভব সহায়তা দিতে, কিন্তু এটি যথেষ্ট নয়।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সেলিং সেন্টারের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ফারজানা আহমেদ বলেন, ‘অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমাদের কাউন্সেলিং সেন্টারে স্থায়ী পদ নেই। এখানে পেশাদারভাবে দুইজনকে নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে কাউন্সেলিং সেন্টারে নিয়োগপ্রাপ্ত কেউ নেই। যারা ইন্টার্ন শিক্ষার্থী, তাদেরও ক্লাস থাকে। সেসময় সেখানে বসার কথা বলা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কাউন্সেলিং সেন্টারের জন্য নির্দিষ্ট কোনো পোস্ট বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তারপরও আমরা নিজেদের মতো চেষ্টা চালাচ্ছি।’
সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রতিটি বিভাগে দুজন করে শিক্ষক কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্বে রয়েছেন এবং মেডিকেল সেন্টারে মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা কাজ করছেন। প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রুতই এ কার্যক্রম আরও উন্নত করা হবে।’
এমএইচএস