ইলমের ময়দানে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র আল্লামা রফিকুল ইসলাম আল-মাদানী

মুফতি খায়রুল হাসান বিন মুজাহিদ
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২০

আকাবির ও আসলাফদের জীবন ছিল ইলম ও আমলের মিশেলে গঠিত এক আলোকিত দৃষ্টান্ত। তাঁরা জ্ঞান অর্জনকে কখনোই পেশা বা সম্মানের মাধ্যম হিসেবে দেখেননি; বরং এটিকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সোপান হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। তাঁদের রাত্রি কাটত ইলম চর্চায়, আর দিন কাটত ইসলামের প্রতি দাওয়াত, দরস ও খেদমতে। সেই ধারারই এক উজ্জ্বল নক্ষত্র প্রখ্যাত আলেম মুফতি রফিকুল ইসলাম আল-মাদানী। আল্লাহ তাআলা তাঁকে এমনভাবে ইলম, প্রজ্ঞা, পরিশ্রম ও হিম্মতের গুণে ভূষিত করেছেন যে, তাঁকে দেখলে আকাবিরদের নমুনা স্মরণ হয়। চিন্তা, ভাষা, গবেষণা ও চরিত্র—সবক্ষেত্রেই তাঁর জীবন এক অনুকরণীয় প্রেরণার উৎস।
আল্লামা রফিকুল ইসলাম আল-মাদানী বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ইসলামিক শিক্ষাবিদ ও গবেষকদের অন্যতম। তিনি উচ্চতর ইসলামিক শিক্ষা গ্রহণ করেন বিশ্ববিখ্যাত মদিনা ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে। সেখানে তিনি ‘বিএ’ সম্পন্ন করেন। এর পূর্বে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দ, ভারত এবং জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম থেকে ফাজিল ও তাকমিল ফিল হাদীস সম্পন্ন করেন।
বর্তমানে তিনি ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকার ‘তাখাস্সুস ফিল হাদীস ও তাফসির’ বিভাগের প্রধান ও তাকমিল বিভাগের নেগরান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ওয়াজ মাহফিলে যুক্তিনির্ভর, প্রাঞ্জল ও হৃদয়স্পর্শী বয়ান প্রদান করে যাচ্ছেন। তাঁর দাওয়াতি ভাষণ শুধু শ্রোতাকে আবেগাপ্লুত করে না, বরং চিন্তা, আত্মসমালোচনা ও আমলের প্রেরণা জাগিয়ে তোলে। সমাজে দ্বীনি চেতনা জাগ্রত করা ও ইসলামী সংস্কৃতি প্রচারে তাঁর ভূমিকা সত্যিই অনন্য।
তিনি একাধিক ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পরিচালক। মাধবপুর উপজেলা কওমি ঐক্য পরিষদের সভাপতি হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে কিতাব বিভাগ থেকে শুরু করে উচ্চতর তাখাস্সুস পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। ইলমি মান, আখলাকি পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক গঠনে তিনি সবসময় যত্নবান।
২০০০ সাল থেকে আল্লামা রফিকুল ইসলাম আল-মাদানী লা-মাযহাবী মতবাদ ও বিভ্রান্ত দলসমূহের বিরুদ্ধে যুক্তিনির্ভর ও গবেষণাধর্মী লেখনীতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন। তাঁর কলম বরাবরই প্রমাণভিত্তিক, শালীন ও গভীর যুক্তিনির্ভর। লেখনী, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও সামাজিক মাধ্যমে তাঁর প্রবন্ধসমূহ মুসলিম সমাজে চিন্তাশীল আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে— মাযহাব মানি কেন, আহলে হাদীসের আসল রূপ, তারাবির নামাজ ২০ রাকাত কেন, ঈদের নামাজে ছয় তাকবীর কেন ও আলবানী প্রসঙ্গে কিছু কথা সহ অসংখ্য বই।
সেসব গ্রন্থগুলো তাঁর আরবি ভাষা, সাহিত্য ও গবেষণায় গভীর দক্ষতার সাক্ষ্য বহন করে। দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি ইসলাম ও সুন্নাহর রক্ষায় কলম ও জ্ঞানের ময়দানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গবেষক, বিশিষ্ট কলামিস্ট ও খতীব হিসেবে স্বীকৃত। তরুণ আলেমসমাজের কাছে তিনি এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তাঁর যুক্তিনির্ভর, প্রাঞ্জল ও সাহিত্যসমৃদ্ধ দাওয়াতি উপস্থাপনা শিক্ষার্থীদের অন্তরে দ্বীনি চেতনা জাগিয়ে তোলে। আকাবিরদের মতো সাহস, দৃঢ়তা ও বিনয় তাঁর চরিত্রে অনন্যভাবে মিলিত হয়েছে।
আল্লামা মুফতি রফিকুল ইসলাম আল-মাদানী সৃজনশীল, স্পষ্টভাষী ও কর্মঠ একজন আলেম। বড় বড় অনুষ্ঠান ও দাওয়াতি কার্যক্রম সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে তাঁর সংগঠনী দক্ষতা প্রশংসনীয়। ওয়াজ, দরস ও তাদরিসের ব্যস্ততার মাঝেও তিনি লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় তাঁর সমাজগঠনমূলক ও চিন্তাশীল প্রবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে, যা পাঠকদের সচেতন করে তুলছে।
আচরণ, পোশাক-আশাক ও চলাফেরায় তিনি আকাবিরদের পথ অনুসরণ করেন। তিনি খ্যাতি বা প্রশংসার মোহে আবদ্ধ নন; বরং নিভৃতে থেকে মানুষের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর সাহসী লেখনী ও প্রমাণভিত্তিক যুক্তি অসংখ্য মানুষকে বিভ্রান্তির হাত থেকে রক্ষা করেছে। তিনি নিঃসন্দেহে এ যুগের এক কলম-যোদ্ধা, যিনি আকাবিরদের উত্তরসূরি হিসেবে ইলম ও দাওয়াতের ময়দানে দীপ্তভাবে অটল।
আল্লাহ তাআলা তাঁকে সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘ নেক হায়াত ও কলমে বরকত দান করুন। তাঁর দ্বীনি খেদমত যেন কেয়ামত পর্যন্ত বহমান থাকে, আমীন।