গাইবান্ধায় অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শনে বাকৃবি বিশেষজ্ঞরা

জয় মন্ডল, বাকৃবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:১৩
-68ef73bee0bab.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল বিশেষজ্ঞ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। তারা রোগটির বিস্তার, সংক্রমণের উৎস এবং স্থানীয় জনগণের সচেতনতার মাত্রা নিরূপণের জন্য মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন তথ্য ও নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাকৃবির প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সহিদুজ্জামান।
গবেষক দলের মধ্যে ছিলেন মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আমিমুল এহসান ও অধ্যাপক ড. আজিমুন নাহার, প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহান আরা বেগম, মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন, ড. জায়েদুল হাসান (সদস্য সচিব) এবং সহকারী অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমান।
সম্প্রতি গাইবান্ধা ও রংপুরের কিছু উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স উপদ্রব দেখা দেওয়ায় এই তদন্ত কমিটি গঠন করেন বাকৃবি ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান।
গবেষক দলের অধ্যাপক ড. মো. আমিমুল এহসান বলেন, স্থানীয়ভাবে অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের মূল কারণ নির্ণয় এবং ভবিষ্যতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা প্রস্তাব করা এই তদন্তের প্রধান লক্ষ্য।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে দেখা গেছে, অনেক এলাকায় অ্যানথ্রাক্সের টিকা প্রদান হয়নি এবং মৃত পশুর যথাযথ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সচেতনতা নেই। স্থানীয়রা জানান, কিশামত সদর গ্রামের মধ্যপাড়ার এক নারী অসুস্থ গরুর মাংস নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং আক্রান্ত হন। পাশ্ববর্তী বাড়িতে মৃতপ্রায় গরু জবাই করার সময় এক ব্যক্তির চোখে রক্ত ছিটকে পড়লে চোখ মারাত্মকভাবে ফুলে যায়। এ ঘটনায় মোট ১১ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
একইভাবে পার্শ্ববর্তী গ্রামে জ্বরে আক্রান্ত একটি ছাগল জবাই করার সময় আঙুল কেটে জীবাণু প্রবেশ করে কিছুদিন পর মারা যান রোজিনা বেগম। তদন্তে দেখা গেছে, মৃত পশু ও অব্যবহৃত অংশ অল্প গভীরে পুঁতে রাখা বা খোলা জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছিল। বালুকাময় মাটিতে বৃষ্টি ও বন্যার পানির মাধ্যমে এসব মৃতদেহ থেকে জীবাণু নদীর পানিতে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গবেষকরা মনে করছেন, চরাঞ্চলের কৃষকরা ঘাস কেটে গবাদি পশু খাওয়ানোর সময় এবং নদীর পানিতে ঘাস ধোয়ার সময় অ্যানথ্রাক্স জীবাণু দ্বারা সংক্রমণ ঘটতে পারে। এছাড়া অসুস্থ বা মৃতপ্রায় পশু জবাই করে মাংস বিক্রির ফলে মানুষও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছেন।
গবেষকরা বলেছেন, আক্রান্ত এলাকা দ্রুত কোয়ারেন্টাইনে আনা, মৃত পশু সঠিকভাবে পুঁতে ফেলা, স্থানীয় পর্যায়ে টিকা কার্যক্রম চালানো এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এছাড়া ক্ষতস্থান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং গবাদিপশুর রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, যাতে টিকাপ্রাপ্ত পশুর শরীরে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কিনা জানা যায়। মাটি, পানি ও ঘাসের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে।
ড. মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘মৃত পশুর সঠিক ব্যবস্থাপনা না করা অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের অন্যতম প্রধান কারণ। আক্রান্ত এলাকায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে মাটি ও পানি দীর্ঘমেয়াদে সংক্রমণের উৎস হিসেবে কাজ করবে।’
গাইবান্ধা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব কুমার রায় বলেন, ‘আমরা টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। প্রতি বছর সকল গবাদিপশুকে টিকার আওতায় আনলে এই রোগ সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও জনবল সরবরাহ জরুরি।’
গবেষক দল স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে আক্রান্ত এলাকায় টিকাদান, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মৃত পশু ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, এই তদন্তের ফলাফল অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে জাতীয় পর্যায়ে নীতিনির্ধারণে সহায়ক হবে।
এআরএস