
মুসলিম জাতির শিক্ষা-দীক্ষার বিশুদ্ধতম উৎস হচ্ছে আল-কুরআন ও হাদিসে নববি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যে দু'টি সুশিক্ষা ছাড়া কোন জাতিই তাহযীব-তামাদ্দুন, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে নিজেদের মেলে ধরতে পারবে না। সে জন্য রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনা মুনাওয়ারায় মসজিদ কেন্দ্রিক একটি দ্বীন শিক্ষার মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। যেই মাদরাসার শিক্ষক স্বয়ং রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন এবং সাহাবায়ে কেরামগণ ছিলেন ছাত্র। সেই মাদরাসারই সিলসিলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আমাদের উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম বিদ্যাপীঠ ঐতিহ্যবাহী দারুল উলুম দেওবন্দ। আর দাওরুল উলুম দেওবন্দের অনুসরণেই ইসলামের তাহযীব-তামাদ্দুন, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সভ্যতার যথাযথ সংরক্ষণের মহৎ লক্ষে প্রতিষ্ঠিত এদেশের হাজারো দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। সে হাজারো প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯৭৭ ইং সনে প্রতিষ্ঠিত হয় জামিয়া কাশেফুল উলূম হাটখোলা মাদরাসা।
জামিয়ার অবস্থান : ঐতিহাসিক টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বংশাই নদীর তীরঘেঁষে সবুজের ছায়াবীথির মধ্যে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে অবস্থিত এ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির পাশের নদীতে কলকল রবে ছুটে চলা যেন সব ক্লান্তি দূর করে দিয়ে মনে নিয়ে আসে একরাশ স্নিগ্ধতা ও সজীবতা।
জামিয়ার বিভাগসমূহ
নুরানি ও আবাসিক মক্তব বিভাগ : এ বিভাগের ছাত্রদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশুদ্ধরুপে কুরআন মাজীদ শিক্ষাদানের সাথে সাথে দৈনন্দিন জীবনে জরুরী মাসআলা-মাসাইল, দোয়া-দরুদ ও আমল-আখলাক শিক্ষা দেয়া হয়। পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজী, গণিত, ভূগোল, ইতিহাস বিষয়গুলোও শিক্ষা দেয়া হয়।
হিফজ বিভাগ : এ বিভাগে মক্তব বিভাগের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মেধাবী ও যোগ্য ছাত্রদেরকে অনুর্ধ্ব ৩ বছরের মধ্যে কুরআন শরীফ হিফজ করানোর মাধ্যমে যোগ্য ও আন্তর্জাতিক মানের হাফেজ হিসেবে গড়ে তোলা হয়। যাদের অনেকেই বোর্ড পরীক্ষায় অবিশ্বাস্য সাফল্য ও সুনাম অর্জন করে থাকে।
কিতাব বিভাগ : এ বিভাগ জামি'য়ার পূর্ণাঙ্গ ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। মক্তব, হিফজ সমাপনকারী ছাত্রদেরকে মাত্র ১১ বছরের মধ্যে কুর'আন, হাদীস, ফিকাহ্, তাফসির, আক্বাইদ, উসুলে ফিকাহ্, আরবী সাহিত্য, বালাগাত, আরবী ব্যাকারণ সহ বাংলা, গণিত, ইংরেজী, ভূগোল, ইতিহাস ও যুক্তিবিদ্যাসহ ধর্মীয় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও পারদর্শী করে বিজ্ঞ আলেম হিসেবে গড়ে তোলা হয়।

জামিয়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য : এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে তৈরি করে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনই একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। (দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষে সুষ্ঠ ও যুগোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের সমাজ থেকে সর্বপ্রকার কুসংস্কার, নাস্তিক্যবাদ, শিরক, বেদ'আত ও কুফরসহ সকল অনাচারের মূলোৎপাটন করে একটি সুন্দর ইসলামি সমাজ প্রবর্তন করাও অভিষ্ট লক্ষ্য।) সর্বোপরি উম্মাহের এই দলকে আলোর দিশারি হিসেবে গড়ার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
জামিয়া বোর্ডের অন্তর্ভুক্তি : শিক্ষা কার্যক্রম সুশৃঙ্খল ধারায় পরিচালনার জন্য মাদরাসাটি বাংলাদেশ বেফাক বোর্ডের আওতাভুক্ত রয়েছে এবং অংশগ্রহণ করে প্রতি বছর অভাবনীয় সাফল্য ও সুখ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এ মাদরাসার মক্তব বিভাগ, হিফজ বিভাগ ও কিতাব বিভাগ থেকে আকাঙ্খিত ফলাফলের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বোর্ড স্ট্যান্ডও করে আসছে।
জামিয়ার বৈশিষ্ট ও কর্মধারা : এ মাদরাসাটি টাঙ্গাইলের মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর কর্মধারা শিশু শ্রেণী থেকে আরম্ভ করে সর্বোচ্চ ক্লাস দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) পর্যন্ত বিস্তৃত। উন্নত ও যুগোপযোগী শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে কুরআন, হাদিস, ফিকাহ্, তাফসির ও আকাইদসহ বাংলা, ইংরেজী, গণিত, ইতিহাস ভূগোল ইত্যাদি প্রয়োজনীয় শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।

এ ছাড়া জামিয়ার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বর্তমান সময়ের শিক্ষক স্টাফগণ একদিকে যেমন দূরদর্শী ও যোগ্যতাসম্পন্ন। অপরদিকে ঠিক তেমনি সচেতন ও মননশীল। দূরদর্শী, যোগ্যতাসম্পন্ন মননশীল ও সৃজনশীল এই মানুষগুলোই মাদরাসার মর্যাদা অক্ষন্ন রেখে জামিয়ার খাদেম হিসেবেই রয়েছেন। যাঁরা তাকওয়াবান ও পরহেযগার হওয়ার পাশাপাশি নীতি-নৈতিকতা, শিক্ষা-দীক্ষা, স্বভাব-চরিত্র, ইলম ও আমলে সম্পূর্ণ আপোষহীন। দ্বীনের ভালোবাসা ও মুহাব্বত অন্তরে ভরপুর। তাইতো সুদীর্ঘ বছরের ইতিহাসে এ মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকগণ নিজেদের মেহনত ও পড়াশোনার মাধ্যমে সুনাম ধরে রেখেছেন। আগামীতেও ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিষ্ট্যগুলো ধরে রাখবেন, সেই প্রত্যাশা ও শুভকামনা কর্তৃপক্ষ ও সকলের। আল্লাহ তাআলা ইলমের এই মারকাজকে কবুল করুন এবং উম্মাহর বেশি বেশি খেদমত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : মাদরাসা শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
আইএইচ/