কুকসু’র খসড়া গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের দাবি শিক্ষার্থীদের
কুবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:৫৮
ছবি : সংগৃহীত
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২০ বছরে এসে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রথমবারের মতো দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (কুকসু) এর কার্যক্রম।
সম্প্রতি খসড়া গঠনতন্ত্র প্রকাশ করা হয়েছে। তবে গঠনতন্ত্র প্রকাশের পরই বিভিন্ন গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কৌশলে কুকসুর সকল কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ রাখার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে সভাপতি তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের হাতে।
জানা যায়, গত ২৯ অক্টোবর কুকসুর জন্য খসড়া গঠনতন্ত্র প্রকাশ করা হয়। এতে কেন্দ্রীয় সংসদের ২১ পদের মধ্যে সভাপতি এবং কোষাধ্যক্ষ পদে সরাসরি পদাধিকারবলে নির্বাচিত হবেন যথাক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ। বাকি ১৯টি পদে নির্বাচন হবে শিক্ষার্থীদের ভোটের মাধ্যমে।
পাশাপাশি, বিশেষভাবে সভাপতি তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে রাখা হয়েছে যাবতীয় নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাতিল করার সর্বময় ক্ষমতা। কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করবেন উপাচার্য, তার অনুপস্থিতিতে কোষাধ্যক্ষ। শিক্ষার্থীদের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি সহসভাপতির দায়িত্ব হলো সংসদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সকল কার্যক্রমের সমন্বয় করা।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, পুরো গঠনতন্ত্রে কৌশলে উপাচার্য তথা সভাপতিকে অতিরিক্ত ক্ষমতায়ন করা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে কেন্দ্রীয় সংসদ স্থগিত রাখার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে দুটি ধারায় পরিবর্তনের দাবি তুলেছেন। পাশাপাশি অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা সম্পাদকীয় পদ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদকীয় পদে ক্যাফেটেরিয়া সংযুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিকৃত দুটি ধারা হলো:
১. ধারা ১১ (৫): সভাপতি সকল সভার আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করবেন। সহ-সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পরামর্শক্রমে নতুন বিষয় আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, সভায় এক-তৃতীয়াংশ সদস্য কোনো বিষয়ে মতামত দিলে সেটি আলোচনা বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২. ধারা ১৮ (৭): কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের নামে জনতা ব্যাংকের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত কোনো তফসিলী ব্যাংকে একটি ব্যাংক হিসাব থাকবে, যা যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হবে। স্বাক্ষরকারীগণ হবেন: সভাপতি, কোষাধ্যক্ষ ও সহ-সভাপতি। তবে, কোষাধ্যক্ষসহ যে কোনো দুইজনের স্বাক্ষরেই অর্থ উত্তোলন সম্ভব। শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, সহ-সভাপতির স্বাক্ষরও বাধ্যতামূলক করা হোক।
শিক্ষার্থীরা একটি উপধারায় অস্পষ্টতার কথাও উল্লেখ করেছেন। ধারা ৯(ক)-তে বলা হয়েছে, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা অন্য কোনো সম্পাদক যদি তার মেয়াদকালে এক মাসের বেশি সময় অনুপস্থিত থাকেন, তবে সভাপতি কমিটির তিন কার্যনির্বাহী সদস্যদের মধ্য থেকে অস্থায়ীভাবে ওই পদে দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ করতে পারবেন। তবে খসড়া গঠনতন্ত্রের দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৫ (দ) ধারায় চারজন নির্বাহী সদস্য থাকার কথা বলা হয়েছে। এতে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফরহাদ মিয়া কাউসার বলেন, ‘গঠনতন্ত্রে শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধি ভিপির ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট এবং কোষাধ্যক্ষের ক্ষমতা খুব বেশি। উদাহরণস্বরূপ, কুকসুর লেনদেন দুইজনের স্বাক্ষরে সম্ভব, যেখানে ভিপির স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক করা হয়নি। শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধির ক্ষমতা বাড়ানো উচিত।’
ফার্মেসি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম ভূইয়া বলেন, ‘সভার আলোচ্যসূচির ক্ষেত্রে কমিটির একটি অংশ যদি মতামত দেয়, তবে তা আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আর অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী প্রতিনিধির স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক করতে হবে। কুকসু তো শিক্ষার্থীদের জন্য।’
লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের রাসেল মিয়া বলেন, ‘একজন ভিপি হচ্ছেন শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি। অবশ্যই তার অর্থসংক্রান্ত মতামত গ্রহণযোগ্য হবে। এ ক্ষেত্রে তার স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।’
ওই শিক্ষাবর্ষের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের মোহাম্মদ রাহিম বলেন, ‘আলোচ্যসূচি নির্ধারণ ও আর্থিক লেনদেনের ধারায় সংশোধন জরুরি। এছাড়া ক্যাফেটেরিয়া পর্যবেক্ষণ এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধানের জন্য নতুন পদ তৈরি করা যেতে পারে।’
গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ড. সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও আলোচ্যসূচি সভাপতি নির্ধারণ করেন। আমরা ভারসাম্য রক্ষার জন্য সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আলোচ্যসূচি নির্ধারণে অংশগ্রহণের সুপারিশ করেছি। অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে সহসভাপতির স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক করা যায়, এটি আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা সম্ভব।’
- ইমতিয়াজ রিফাত/এমআই

