Logo

ক্যাম্পাস

অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত বটগাছ

Icon

অনিরুদ্ধ সাজ্জাদ

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫৪

অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত বটগাছ

ময়মনসিংহের ত্রিশালের শুকনি বিলের ধারে, নামাপাড়া-বটতলায় এক সময় বাঁশি বাজাতেন কিশোর নজরুল। সেই স্মৃতিবিজড়িত বটগাছকে ঘিরেই গড়ে ওঠে দেশের একমাত্র নজরুল-নামকরণে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু আজ সেই ইতিহাসবাহী বটবৃক্ষটি পড়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার বাইরে, অযত্ন-অবহেলায়।

১৯১৪ সালে আর্থিক অনটনের মুখে পড়া কিশোর দুখু মিয়া আসানসোলের রুটির দোকান ছেড়ে রফিজউল্লাহ দারোগার সহায়তায় এসে ভর্তি হয়েছিলেন ত্রিশালের দরিরামপুর হাইস্কুলে। এই ত্রিশালেই শুকনি বিলের পাড়ে সেই বিখ্যাত বট (অশ্বত্থ) গাছের তলায় বসে তিনি বাঁশি বাজাতেন।  প্রকৃতির মাঝে খুঁজে পেতেন তাঁর সৃষ্টিশীল কল্পনার অফুরন্ত ভাণ্ডার।

বছরের পর বছর গাছটি ‘বটতলা’ নামের এলাকা হিসেবে পরিচিত হয়। ৭০’র দশকে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার ম্যাজিস্ট্রেট পি এ নাজির নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত বটগাছের গুরুত্ব অনুভব করে প্রথমবারের মতো এর চারপাশে পাকা বেদী নির্মাণ করেন। এরপর আর এই বটবৃক্ষের দিকে ফিরে তাকায়নি কেউ। ত্রিশালে নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত সব স্থাপনা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলেও বটগাছটি বরাবরই নিগৃহীত।

পরবর্তীতে ২০০৫ সালের ১ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই গাছের পাশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। তখন থেকেই এই বটগাছ নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতীক হয়ে ওঠে।

দুই দশক পেরিয়ে ২০তম বর্ষে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, কিন্তু ৫৭ একরের সীমানা প্রাচীরের বাইরে এখনো অবহেলায় পড়ে আছে জাতীয় কবির স্মারক বটগাছটি। ২০২১ সালে নতুন প্রাচীর নির্মাণের সময় গাছটি সীমানার বাইরে পড়ে যায়। এখন গাছটির আশপাশে গড়ে উঠেছে চায়ের দোকান, টং দোকানসহ নানা অস্থায়ী স্থাপনা। নেই কোনো সংরক্ষণ বা তদারকি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হলেও নজরুলের স্মৃতিধন্য গাছটিকে মূল্যায়ন করা হয়নি। গত ৫ আগস্ট ২০২৪-এ দেশের সরকার পরিবর্তনের পর পরিবর্তন হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ডা. মো. মাহবুবুর রহমান লিটন বলেন, বিগত প্রশাসন সুপরিকল্পিতভাবে গাছটিকে বাইরে রেখেই সীমানাপ্রাচীর তৈরি করেছিল। এখন ১০০ একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা চলছে। সেটি সম্পন্ন হলে গাছটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ফিরিয়ে আনা হবে।

নজরুল গবেষক ও ইনস্টিটিউট অব নজরুল স্টাডিজের উপপরিচালক রাশেদুল আনাম বলেন, নজরুলের অনেক স্মৃতিবিজড়িত স্থান এখন বিলীন। কিন্তু এই বটগাছটি জীবন্ত কিংবদন্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত এটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বটগাছের জায়গাটি ব্যক্তিমালিকানাধীন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন জমিটি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে।

আশা করি শিগগিরই আমরা সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে আনতে পারব।

তবে নতুন প্রশাসনের দায়িত্বগ্রহণের এক বছর পার হয়ে গেলেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়নি। নজরুলপ্রেমীরা বলছেন, গাছটা শত বছরের পুরোনো। নজরুলের সঙ্গে এই গাছের নাম জড়িয়ে আছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম যে বটবৃক্ষকে ঘিরে, সেই বৃক্ষ আজ নিজের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার কোটি টাকার উন্নয়নের ভিড়ে যেন হারিয়ে যাচ্ছে কবির ছায়ামূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই পুরোনো বটগাছ। যথাযথ সংরক্ষণ ও পরিচর্যা ছাড়া শুধু উন্নয়ন দিয়ে নজরুলের ঐতিহ্য রক্ষা সম্ভব নয়। 

লেখক : নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, দৈনিক বাংলাদেশের খবর

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর