Logo

ক্যাম্পাস

ভীতিকর সকাল, প্রবল ভূমিকম্প এবং ঢাবি

Icon

ক্যাম্পাস ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ২১:৪০

ভীতিকর সকাল, প্রবল ভূমিকম্প এবং ঢাবি

সাম্প্রতিক ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কয়েক সেকেন্ডের কাঁপুনিই অস্থির করে দিল রাজধানী। হঠাৎ কম্পনে ভবন দুলে ওঠে, দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়, আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নেমে আসে। প্রাণহানি ও আহতের খবর ছড়িয়ে পড়তেই অসহায়তা আরও গভীর হয়। টেকটোনিক প্লেটের আকস্মিক সঞ্চালন যে এমন বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, তা নতুন নয়; তবে প্রস্তুতিহীনতাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। বিশ্বের তৃতীয় জনবহুল এই শহরে মাঝারি মাত্রার কম্পনেই দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে গেছে। ভূমিকম্পের সেই আতঙ্কময় মুহূর্ত ঢাবি শিক্ষার্থী সামিহা সিরাজী লাজের বর্ণনায় তুলে ধরা হলো।

সময় ঠিক সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট। হলের পাঁচতলার ছাদে বসে মিঠে রোদে গা এলিয়ে বই পড়ছিলাম। হঠাৎ অনুভব করলাম হালকা এক কম্পন প্রথমে গুরুত্ব দেইনি। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই সবকিছু বদলে গেল যখন তীব্র ঝাঁকুনি টের পেলাম। বুঝতে আর দেরি হলো না ভূমিকম্প হচ্ছে।

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে সহপাঠীদের আতঙ্কে ভরপুর মুখগুলো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। নিচে নেমে দেখি সবাই বাড়িতে ফোন করে খোঁজ নিচ্ছে। ভীতিকর এক সকাল যেদিন রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.৭।

কিছুক্ষণ পরই খবর পেলাম হলের দুই ব্লকের সংযোগস্থলে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশের বঙ্গমাতা হলের পিলারেও ফাটলের খবর ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যেই বংশালসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যুর সংবাদ উল্লেখযোগ্যভাবে মনকে আরও ভারী করে তোলে। ঢাবির কয়েকটি ছেলেদের হলে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর আতঙ্ককে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

বিশ্বের তৃতীয় জনবহুল শহর ঢাকা, যেখানে ভূমিকম্প কোনো নতুন বিষয় নয়। তবুও আমাদের প্রস্তুতিহীনতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। সরকারের এখনই উচিত সর্বোচ্চ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ঢাবির পুরোনো হলগুলো দ্রুত সংস্কার, নতুন হল নির্মাণে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ এবং সাম্প্রতিক ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচটি হলের জরুরি মেরামত নিশ্চিত করা অপরিহার্য। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে হবে।

অন্যথায়, আরেকটি বড় ভূমিকম্প ‘ঢাবির জগন্নাথ হল ট্রাজেডির’ মতো আরেকটি ইতিহাস তৈরি করতে পারে, যা আমরা কেউই দেখতে চাই না।

ভূমিকম্প-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এখনই প্রয়োজন পরিকল্পিত নগরায়ণ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং ভূমিকম্পকালীন সতর্কতা অনুশীলন। বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যেই জানিয়েছেন ঢাকায় ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ক্ষতির পরিমাণ হবে অকল্পনীয়।

সরকারের উচিত সার্বক্ষণিক রেসকিউ টিম প্রস্তুত রাখা, জরুরি সাড়া প্রদানের ব্যবস্থা শক্তিশালী করা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় নয়—সতর্কতা নিশ্চিত করা।

লেখক: সামিহা সিরাজী লাজ

শিক্ষার্থী, কুয়েত মৈত্রী হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকম্প

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর