Logo

ক্যাম্পাস

মাত্র কয়েক সেকেন্ডের কাঁপুনি, এক অপরিমেয় আতঙ্কের সকাল

Icon

ক্যাম্পাস ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ২১:৫৩

মাত্র কয়েক সেকেন্ডের কাঁপুনি, এক অপরিমেয় আতঙ্কের সকাল

সাম্প্রতিক ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কয়েক সেকেন্ডের কাঁপুনিই অস্থির করে দিল রাজধানী। হঠাৎ কম্পনে ভবন দুলে ওঠে, দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়, আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নেমে আসে। প্রাণহানি ও আহতের খবর ছড়িয়ে পড়তেই অসহায়তা আরও গভীর হয়। টেকটোনিক প্লেটের আকস্মিক সঞ্চালন যে এমন বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, তা নতুন নয়; তবে প্রস্তুতিহীনতাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। বিশ্বের তৃতীয় জনবহুল এই শহরে মাঝারি মাত্রার কম্পনেই দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে গেছে। ভূমিকম্পের সেই আতঙ্কময় মুহূর্ত ঢাবি শিক্ষার্থী মাসুমা বিনতে মুজিবের বর্ণনায় তুলে ধরা হলো।

রিডিং রুমে গভীর মনোযোগে পড়ছিলাম। চারপাশের নিস্তব্ধতা হঠাৎই যেন ছিন্ন হয়ে গেল মৃদু এক কাঁপুনি। প্রথমে বুঝে উঠতে পারিনি কী হচ্ছে। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতেই দেখলাম সবাই আতঙ্কে ছুটাছুটি করছে। রিডিংয়ে থাকা আপুরা চিৎকার করে বলছে, ‘ভূমিকম্প! ভূমিকম্প!’ কেউ মাথা গুঁজে বসে পড়ছে টেবিলের নিচে, কেউ পিলারের আশ্রয় খুঁজছে।

পরক্ষণেই আবার তীব্র আরেকটি ঝাঁকুনি। সেই মুহূর্তে আর কিছু ভাবার সুযোগ ছিল না সবাই ছুটে চলেছি সিঁড়ির দিকে। তিন তলা থেকে নামতে নামতে মনে হচ্ছিল, এই বুঝি সব ভেঙে পড়লো। কারও হাত কাঁপছে, কারও চোখে পানি, কারও পায়ে নেই জুতা আবার কেউ কাঁপা গলায় ফোন করছে প্রিয়জনকে।

দৃশ্যটি মাত্র কয়েক সেকেন্ডের, কিন্তু সে সময়টা যেন থেমে থাকা এক অনন্ত ভয়। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা মাপা গেলেও মানুষের আতঙ্কের মাত্রা মাপার কোনো স্কেল নেই। মিডিয়াম মাত্রার এই কম্পনেই দেয়ালে ফাটল, জায়গায় জায়গায় খুলে পড়েছে সিমেন্ট বালির আস্তর। হলের করিডোরে ধুলো শিশিরের মতো ঝরে পড়ছে সিলিং থেকে।

এ শহর অপরিকল্পিত নগরায়ণের ভারে নত, যেখানে এত মানুষ, এত স্বপ্ন, এত গল্প। অথচ মাত্র কয়েক সেকেন্ডের কাঁপুনিতেই সবকিছু দাঁড়িয়ে যায় এক অদ্ভুত অনিশ্চয়তার দরজায়। আসলে ভূমিকম্পের কাঁপুনি নয় এই অনিশ্চয়তার কম্পনই সবচেয়ে গভীর, সবচেয়ে দীর্ঘ, সবচেয়ে ভয়াবহ।

সাম্প্রতিক এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের শুধু ভীত করেনি, নগরবাসীর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। কেন একটি মাঝারি মাত্রার কম্পনে এত ভাঙন? কোথায় আমাদের প্রস্তুতি? আমরা কি কেবল অপেক্ষা করছি বড় কোনো বিপর্যয়ের যা এক মুহূর্তেই শহরের মুখ থেকে হাসি মুছে দিতে পারে?

আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল আচমকা, কিন্তু তার প্রতিধ্বনি এখনো রয়ে গেছে বুকের ভেতর। আমরা বেঁচে গেছি সেদিন, কিন্তু সতর্ক হইনি এটাই সবচেয়ে বড় ভয়।

লেখক : মাসুমা বিনতে মুজিব 

শিক্ষার্থী, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকম্প

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর