সাম্প্রতিক ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কয়েক সেকেন্ডের কাঁপুনিই অস্থির করে দিল রাজধানী। হঠাৎ কম্পনে ভবন দুলে ওঠে, দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়, আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নেমে আসে। প্রাণহানি ও আহতের খবর ছড়িয়ে পড়তেই অসহায়তা আরও গভীর হয়। টেকটোনিক প্লেটের আকস্মিক সঞ্চালন যে এমন বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, তা নতুন নয়; তবে প্রস্তুতিহীনতাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। বিশ্বের তৃতীয় জনবহুল এই শহরে মাঝারি মাত্রার কম্পনেই দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে গেছে। ভূমিকম্পের সেই আতঙ্কময় মুহূর্ত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী কাজী তানজিলের বর্ণনায় তুলে ধরা হলো।
ভূমিকম্প শব্দটি উচ্চারণ করলেই মনে এক অদৃশ্য ভয়ের স্রোত বয়ে যায়। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে বড় কোনো ভূমিকম্প না হওয়ায় আমরা অনেকেই এই দুর্যোগ সম্পর্কে এখনও উদাসীন। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভূমিকম্পে হাজারো মানুষের প্রাণহানি, ঘর-বাড়ি নিশ্চিহ্ন হওয়ার ঘটনা আমাদের চোখের সামনেই ঘটে গেছে। তবুও আমরা যেন সেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারিনি।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় বাংলাদেশের জনবহুল রাজধানী ঢাকা। পরিকল্পনাহীন নগরায়ণ, নিয়মনীতি উপেক্ষা, আর সরকারি সংস্থার অব্যবস্থাপনার ফলে ঢাকা ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে এক মৃত্যুপুরীতে। যেখানে খাল দখল, সংকীর্ণ রাস্তা, অবৈধ নির্মাণ যেন বৈধতার সীলমোহর পেয়েছে।
উন্নত বিশ্বের শহরগুলোতে নাগরিক নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শতাধিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়, যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলেও ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়। কিন্তু আমাদের ঢাকায় নেই এমন কোনো প্রস্তুতি। মাত্র ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের এই ঘনবসতিপূর্ণ শহর আজ মানব বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে।
সম্প্রতি শুক্রবার ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে আমরা দেখেছি অন্তত ১০ জনের মৃত্যু ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। ভাবা যায়— মাত্র একটু বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হলে কী ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে? অগণিত ভবন মুহূর্তে ধসে পড়ে ঢাকা যেন পরিণত হবে এক বিশাল কবরস্থানে।
অগ্নিকাণ্ডের সময় ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে না পারা, সরু রাস্তা দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স আটকে যাওয়া, ভবন নির্মাণে নিয়ম না মানা এসব ঘটনা প্রতিদিনই আমাদের সামনে ঘটে। তবুও আমরা শিখি না। যেন অদৃশ্য কোনো শক্তি আমাদের বাধা দেয় পরিবর্তনের পথে।
এখনই সময় সচেতন হওয়ার। সরকারের উচিত বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে জরুরি প্রস্তুতি জোরদার করা, জনসচেতনতা বাড়ানো এবং ঢাকাকে টেকসই ও নিরাপদ নগরীতে রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া। নইলে একদিন হঠাৎ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের সবকিছু গ্রাস করে নেবে আর তখন অনুশোচনা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না।
লেখক : কাজী তানজিল
শিক্ষার্থী, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

