জকসু নির্বাচন : বাম শিক্ষার্থীদের জোটবদ্ধ প্যানেল ঘোষণা
জবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:২৮
ছবি : বাংলাদেশের খবর
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবারের মতো আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন; বিভিন্ন সংগঠন ঘোষণা করেছে নিজেদের প্যানেল।
এরই ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মোট নয়টি সংগঠনের সমন্বয়ে বাম শিক্ষার্থীরা ঘোষণা করেছে জোটবদ্ধ ‘মওলানা ভাসানী ব্রিগেড’ প্যানেল।
গত ১৭ নভেম্বর ঘোষিত মওলানা ভাসানী ব্রিগেড প্যানেল অনুযায়ী, সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন গৌরব ভৌমিক। তিনি সংগীত বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং উদীচী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে লড়বেন ইভান তাহসিব। তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি। সহ–সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন শামসুল আলম মারুফ। তিনি আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক।
বৈচিত্র্যময় এই জোটের ২১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ছাড়াও রয়েছে বাম মতাদর্শসমর্থিত বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ও ছাত্র ইউনিয়ন। পাশাপাশি উদীচী, জবি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, রাষ্ট্রচিন্তা, চিন্তক, ব্যান্ড মিউজিক অ্যাসোসিয়েশন এবং জবি রঙ্গভূমির মতো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দও রয়েছেন।
প্যানেল সূত্রে জানা গেছে, অসাম্প্রদায়িক চেতনার এই প্যানেলে রয়েছেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও মারমা জাতিগোষ্ঠীর নু মং প্রু মারমা। হিন্দু ধর্মাবলম্বী আছেন তিনজন-গৌরব ভৌমিক, সাগ্নিকা চক্রবর্তী ও পল্লব কুমার।
সম্পাদকীয় মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন খিজির আল সিফাত; শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে জয় ভুঁইয়া; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক রিয়াদ হোসেন আহ্বায়ক; স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক নু মং প্রু মারমা; সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক সালমান সাদ; ক্রীড়া সম্পাদক মুগ্ধ আনন এবং পরিবহন সম্পাদক মোহাম্মদ মাহীন।
সদস্য পদে রয়েছেন তাজওয়ার ইসলাম, রৌদ মুক্তাদির, শাহরিয়ার আদিব ও পল্লব কুমার।
৭ পদে নারী প্রার্থী
বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২১ সদস্যের এই ব্রিগেড প্যানেলে ৭টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন নারী শিক্ষার্থীরা, যা মোট প্রার্থীর ৩৩.৩৩ শতাংশ। প্যানেলের আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক পদে আফিকা লেবিন মৌমি, আন্তর্জাতিক সম্পাদক জোয়ান অফ আর্ক, সমাজসেবা সম্পাদক আমরিন জাহান অপি এবং পাঠাগার ও সেমিনার সম্পাদক মুবাশিরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এছাড়া সদস্য পদের তিনটিতেও নারী প্রার্থী—সুমাইয়া আবেদীন ঋতিকা, সাগ্নিকা চক্রবর্তী ও রিদি।
প্যানেলে সর্বোচ্চসংখ্যক নারী প্রার্থী থাকায় ইতিবাচক ও নেতিবাচক-দুই ধরনের মনোভাবই দেখা গেছে। তবে নারী প্রার্থীরা বলছেন, তাদের কাজের মাধ্যমেই সব ধরনের নেতিবাচক ধারণা দূর হবে। সমাজ, কর্মক্ষেত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি জায়গায় নারীরা যে নেতৃত্ব দিতে পারে তা প্রমাণ করাই তাদের লক্ষ্য।
সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী আমরিন জাহান অপি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন মেয়েরা বিভিন্ন সংগঠন, একাডেমিক কার্যক্রম ও সামাজিক উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাই তাদের নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি। সেই ভাবনা থেকেই বেশিসংখ্যক নারী প্রার্থী রাখা হয়েছে। এতে নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ ও সমতাভিত্তিক ক্যাম্পাস গড়তে নারী নেতৃত্বই সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
মওলানা ভাসানীর অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং মেহনতী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এবং তাঁর প্রয়াণ দিবস ১৭ নভেম্বরকে স্মরণ করতে প্যানেলের নাম রাখা হয়েছে ‘মওলানা ভাসানী ব্রিগেড’। প্রার্থীরা বলেন, প্যানেলের সব সদস্যই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। বৈচিত্র্যময় প্যানেল গঠনের লক্ষ্য ছিল নারী নেতৃত্বকে এগিয়ে আনা এবং শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বর তৈরি করা।
সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী ইভান তাহসিব বলেন, আমরা নারী শিক্ষার্থীদের ক্ষমতায়ন এবং নারী–পুরুষ সমতায় বিশ্বাসী। নারী শিক্ষার্থীরা যত রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হবে, ততই তারা নিজেদের অধিকার আদায়ে আওয়াজ তুলতে পারবে। শিক্ষার্থীরা আমাদের প্যানেলকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা।
সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী গৌরব ভৌমিক বলেন, মওলানা ভাসানীর প্রগতিশীলতা, মানবিকতা ও গণতান্ত্রিক চেতনা থেকেই প্যানেলের নামকরণ করা হয়েছে। তিনি যেমন আজীবন নিপীড়নের বিরুদ্ধে মানুষের পাশে ছিলেন, আমরাও শিক্ষার্থীদের অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধে কাজ করব। আমাদের কাছে ধর্ম–সম্প্রদায় বা অর্থনৈতিক অবস্থানের চেয়ে বড় পরিচয়-আমরা জবি শিক্ষার্থী।
- জেএন/এমআই

