Logo

ক্যাম্পাস

গবিতে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই শিক্ষার্থীকে মারধর

Icon

গবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:৩০

গবিতে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই শিক্ষার্থীকে মারধর

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিং ও ধর্ষণকাণ্ডকে কেন্দ্র করে চলমান উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে মো. নাসিম (২২) নামে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। গুরুতর আহত ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

রবিবার (৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার নলাম এলাকায় গণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

নাসিম গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং গকসু নির্বাচনে ভিপি প্রার্থী ছিলেন।

হামলায় জড়িতরা হলেন- ফলিত গণিত বিভাগের রাজিব হোসেন, সোশিয়োলজির আবির হোসেন, বিবিএ বিভাগের তামিম ইকবালসহ অজ্ঞাত আরও ২-৩ জন।

মূলত ‘সন্ত্রাসী’ মন্তব্য ও ধর্ষণকাণ্ডে অবহেলার অভিযোগে শিক্ষকের পদত্যাগ চাওয়াকে কেন্দ্র করে আজকের এই মারধরের ঘটনাটি ঘটেছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, ধর্ষণের ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর ভুক্তভোগী অভিযোগ দেওয়া সত্ত্বেও প্রক্টরিয়াল বডির সভাপতিসহ যেসকল শিক্ষক বিষয়টিকে আমলে নেননি, তাদের পদত্যাগ দাবি করে গত কয়েকদিন যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলছিল, যার সাথে আমরাও যুক্ত ছিলাম। আজও আমাদের কর্মসূচি ছিল।

তিনি বলেন, আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পর রাজিবসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী আমাকে ডাক দিয়ে আন্দোলন চলাকালে ‘সন্ত্রাসী’ বলে করা আমার একটি মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চায়, তারা জিজ্ঞাসা করে যে আমি সন্ত্রাসী কেন বলেছি। পরে আমি তাদের জানাই যে আমি তাদের সন্ত্রাসী বলি নি, আমি যারা রেপিস্ট, যারা এ ধরনের কাজ করেছে তাদের সন্ত্রাসী বলেছি। এসব কথার এক পর্যায়ে তারা আমার ওপর হামলা চালায়। এছাড়াও, এসময় কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিলুফার সুলতানার ছাত্র আবিরও আমাকে মারধর করে।

এছাড়াও আজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসে হামলার পর নাসিমকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে আশুলিয়ার গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানকার জরুরি বিভাগ থেকে বাহিরে ডেকে নিয়ে অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জান আবারও নাসিমের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন নাসিম। 

এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে করা এক মন্তব্যের বিষয়ে রাজিব হোসেন নামে একজন নাসিমকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন। কথা বলার এক পর্যায়ে নাসিমকে মারধর শুরু করেন তিনি। এ সময় তার সাথে সেখানে উপস্থিত অন্যান্যরাও নাসিমকে মারধর শুরু করে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা জানান, সম্প্রতি ধর্ষণকাণ্ডে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তিন শিক্ষকের পদত্যাগ চাওয়া হয়, তাদের মধ্যে একজন হলেন কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিলুফার সুলতানা। এরমধ্যে আজ কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিলুফার সুলতানার পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিলও বের করেন কিছু শিক্ষার্থী।

অবশ্য শিক্ষার্থীদের এই মিছিলের ব্যাপারে কিছূ জানেন না দাবি করে কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিলুফার সুলতানা বলেন, কে বা কারা মিছিল করেছে এসবের কিছূই আমি জানিনা। আমরা সেসময় মিটিংয়ে ছিলাম। এসময় বাহিরে কিছু শিক্ষার্থী স্লোগান দিচ্ছিল। পরে আমি বেরিয়ে তাদের এসব করতে বারণ করি।

তিনি বলেন, ‘আমি তাদের বলি যে লোকে ভাববে যে আমি তোমাদেরকে দিয়ে এটা করাচ্ছি। আমার পদত্যাগ তো কেউ চায়নি। এখানে আমরা মিটিং করছি। আমরা শিক্ষক মিটিং করছি। মানে যে সমস্ত অন্যায় ঘটেছে বা যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে সেটা নিয়ে আমরা মিটিং করছি। এর মধ্যে আমার পদত্যাগের প্রশ্ন আসলো কেন? এসব বলো না তো তোমরা। পরে ওরা শান্ত হয়ে চলে গেছে।’

অন্যদিকে নাসিমকে মারধর করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এই ঘটনায় অনুতপ্ত দাবি করে ফলিত গণিত বিভাগের অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রাজিব হোসেন বলেন, ‘আমরা একসাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করেছি। শিক্ষার্থীদের সব যৌক্তিক আন্দোলনের পক্ষে আমি ছিলাম একেবারে শুরু থেকেই। ম্যামের পদত্যাগ চাওয়ার জন্য আজকের ঘটনা না, আজকের ঘটনা মূলত সে (নাসিম) বিভিন্ন সময় আমাকে নিয়ে ট্যাগিং করে। উল্টাপাল্টা কথা বলে, সন্ত্রাসী ট্যাগ দেয়। মূলত এটা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সে আমাকে ধাক্কা দিলে এর পরিপ্রেক্ষিতে হাতাহাতি হয়।’

এসময় রাজিব নিজেও কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিলুফার সুলতানার পদত্যাগ চান বলে দাবি করেন।

অন্যদিকে অভিযুক্ত সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অপর শিক্ষার্থী সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৩১ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবির হোসেন বলেন, মূলত আমরা আমাদের ম্যামকে নিয়ে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার প্রতিবাদ করছিলাম। এ সময় আমরা প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আসার পর পোলাপান নিয়া তারা আমাদের উপর হামলা করছে। এসময় মিছিলের পেছনে মেয়েরা ছিল, তাদের রক্ষায় আমরাও পাল্টা প্রতিরোধ করি।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আবুল হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা নিচে আন্দোলনের সময়ে তালা দিয়ে রাখে ফলে নিচে যাওয়ার উপায় ছিলো না। নিচে ঘটে যাওয়া পরিস্থিতি নিন্দনীয়। প্রশাসনিক ভাবে অভিযোগ প্রদান করলে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

গেল কয়েক সপ্তাহ ধরেই উত্তপ্ত গণ বিশ্ববিদ্যালয়। গত ২৪ নভেম্বর শের আলী নামে এক শিক্ষার্থীকে র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ ১৭ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এছাড়া এক শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণের ঘটনায় মামলার জেরে গ্রেপ্তারের পর চারজনকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। 

গত ৩০ ডিসেম্বর মেহেদী হাসান নামে এক শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে মারধরের ঘটনা ঘটে। সবশেষ আজ নাসিম নামে আরেক শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে মারধরের ঘটনা ঘটলো। এসব বিভিন্ন ঘটনায় প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের।

শরিফুল ইসলাম রিফাত/এসএসকে

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

গণ বিশ্ববিদ্যালয়

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর