Logo

ক্যাম্পাস

জাবির প্রশাসনিক ভবনে তালা

শিক্ষক ফোরামের উদ্বেগ, মধ্যরাতে জাকসুর পাল্টা সংবাদ সম্মেলন

Icon

জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:৩৯

শিক্ষক ফোরামের উদ্বেগ, মধ্যরাতে জাকসুর পাল্টা সংবাদ সম্মেলন

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিচার দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের জাবি শাখা। সংগঠনটির বিবৃতির প্রতিবাদে মধ্যরাতে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু)।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাত ১২টার দিকে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শামছুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দীনের সই করা এক বিবৃতিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ার ঘটনাকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিল শেষে জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় মদদদাতাদের দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবিতে জাকসুর নেতারা নতুন প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। তাঁরা জানান, বিচার কার্যক্রমের দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে তালা খোলা হবে না।

বিএনপিপন্থী শিক্ষক ফোরামের উদ্বেগ

জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের বিবৃতিতে বলা হয়, প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার ফলে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস যথাযথ মর্যাদায় উদ্‌যাপন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংকটে পড়বে। এটি দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় যখন পুরো ক্যাম্পাস শোকাহত, তখন সেই ন্যক্কারজনক ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাতীয় দিবস উদ্‌যাপনে বাধা সৃষ্টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এ ছাড়া তালার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কার কথাও উল্লেখ করা হয়। শিক্ষক ফোরামের মতে, বলপ্রয়োগ ও চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার এ ধরনের কর্মকাণ্ড ফ্যাসিবাদী আমলের ফরমায়েশি রায় ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

তবে বিবৃতিতে সংগঠনটি স্পষ্ট করে জানায়, অভিযুক্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের পক্ষে তারা অবস্থান করছে, কিন্তু সেই বিচার অবশ্যই আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হতে হবে।

জাকসুর পাল্টা প্রতিবাদ

শিক্ষক ফোরামের বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করে রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে জাকসু ভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন জাকসু নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে জাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের সুকৌশলে বাঁচাতেই শিক্ষক ফোরাম এই বিবৃতি দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ২৭৯ জন শিক্ষার্থী প্রাতিষ্ঠানিক বিচারের মুখোমুখি হয়েছিল। আমরা চাই, জুলাই আন্দোলনে জাবিতে যেসব শিক্ষক ও কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন, তাঁদেরও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দ্রুত প্রাতিষ্ঠানিক বিচার সম্পন্ন হোক।’

জাকসুর সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এক বছর পার হলেও অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিচারে কোনো অগ্রগতি হয়নি। প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই বিচার দীর্ঘসূত্রতায় পড়েছে। এ অবস্থায় বিচার তরান্বিত করতেই প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও অভিযোগ করেন, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাঁদের পরিচয় ফাঁস হয়ে অভিযুক্তদের কাছে পৌঁছে গেছে, যা বিচার প্রক্রিয়ার নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন তোলে।

সংবাদ সম্মেলনে সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক আহসান লাবীব বলেন, ‘আমরা বিজয় দিবস কিংবা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনে বাধা দিচ্ছি— এই বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরাও এসব দিবস যথাযথ মর্যাদায় উদ্‌যাপন করতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘বিচারের দাবিতে দৃঢ় অবস্থান নেওয়া বিচারকে বাধাগ্রস্ত করে না, বরং বিচার নিশ্চিত করার পথ সুগম করে।’

তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী আমলে আন্দোলনের সময় অনেক শিক্ষক প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ার কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন। তাই এখন তালা দেওয়াকে ‘জোরজবরদস্তি’ বলে আখ্যা দেওয়া দ্বিচারিতা।

সংবাদ সম্মেলন থেকে বিচার বাস্তবায়নের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের একাত্মতা প্রকাশের আহ্বান জানায় জাকসু।

আমানউল্লাহ খান/এসএসকে

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর