Logo

ক্যাম্পাস

কিডনি বিক্রির কথা ভাবছেন তিনদিন ভাত না খাওয়া ইউনুস

Icon

আমানউল্লাহ খান, জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:৫৬

কিডনি বিক্রির কথা ভাবছেন তিনদিন ভাত না খাওয়া ইউনুস

‘আজ তিনদিন ভাত ভাইনি কাকা। স্মৃতিসৌধ বন্ধ, রুজিও করতে পারি না। চাইলেও কিনতে পারি না। খাই, খাই না যে তা না— একটা বরা খাই, একটা সিডিবিড়ি খাই। এইভাবে জীবনযাপন করতাসি।’

কথাগুলো বলছিলেন জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভিতরে ওজন পরিমাপের মেশিন নিয়ে বসে থাকা ষাটোর্ধ বৃদ্ধ মোহাম্মদ ইউনুস আলী। বিজয় দিবসে দেশের মানুষ যখন পতাকা হাতে উৎসবে মেতেছে, তখন তার পেটের ভেতর চলছে অনাহারের যুদ্ধ।

বিজয় দিবস তার কাছে কেমন— এই প্রশ্নে ইউনুস আলী একটু থেমে বলেন, ‘বিজয় দিবসটা ভালো। সবাই আনন্দ করুক। কিন্তু আমার জন্য ভালো না। আজ তিনদিন যাবৎ একমুঠ ভাতও আমার পেটে পড়ে নাই।’

জাতীয় স্মৃতিসৌধকেন্দ্রিক মানুষের ভিড়ই ইউনুস আলীর রুজির একমাত্র ভরসা। দর্শনার্থীরা এলে কেউ ওজন মাপেন, তখনই দু’চার টাকা তিনি পান। কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে স্মৃতিসৌধ বন্ধ থাকলে তার আয় শূন্যে নেমে আসে।

‘কাকা, আমার কথা জিজ্ঞেস করিস না। যদি মাপার দরকার থাকে, মাইপা যা খুশি দিয়া থুইয়া যা। আমার অন্তর ফাইট্টা যায়।’, বললেন তিনি। 

মোহাম্মদ ইউনুস আলীর বাড়ি পাবনার ভেড়া উপজেলায়। বর্তমানে তিনি থাকেন সাভারের নবীনগর এলাকায়। সংসারে শুধু তিনি আর তার স্ত্রী। সন্তান আছে, কিন্তু তারা কেউ তাদের দেখাশোনা করে না। 

মানবেতর জীবনযাপনের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘বয়স হইছে, কাজ পাই না। যা পাই, তাই খাই। না পাইলে না খাই।’

বিজয় দিবসে রাষ্ট্রের কাছে তার চাওয়া কী— এই প্রশ্নে তিনি খুব বেশি কিছু চান না। ইউনুস আলী বলেন, ‘দেশে শান্তি ফিরুক, আমি রুজি করতে না পারলেও দুঃখ নাই। কিন্তু ভালো একটা সরকার দরকার।’

নিজের ভোটাধিকার হারানোর অভিজ্ঞতার কথাও জানালেন এই বৃদ্ধ, ‘গত উপজেলা নির্বাচনে ভোট দিতে গেছিলাম। গিয়ে কয়— কাকা, তোমার ভোট হইয়া গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি একটা ভোটের মালিক। যদি সুষ্ঠু হয়, ভোট দিমু। না হইলে দিমু না।’

খাদ্য নিরাপত্তার প্রসঙ্গে তিনি অন্য অনেক রাজনীতিবিদের সমালোচনা করলেও আলাদা করে স্মরণ করেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর কথা।ইউনুস আলী বলেন, ‘শেখ মুজিব, জিয়া, এরশাদ সবারই সমালোচনা হইছে, কিন্তু ভাসানীর কোনো সমালোচনা নাই।’

তিনি জানান, কুষ্টিয়ায় তিনি ভাসানীকে নিজের চোখে দেখেছেন, বলেন, ‘ভাসানী বলতেন— ভোটের বাক্সে লাথি মারো, আগে খাও আর থাকার ব্যবস্থা করো।’

চরম খাদ্যসংকট ইউনুস আলীকে এমন এক জায়গায় ঠেলে দিয়েছে, যেখানে তিনি নিজের শরীরকেই পুঁজি করতে চাইছেন। দিনের পর দিন একটি কিডনি বিক্রির জন্য ঘুরছেন তিনি, ‘না খাওয়া থেকে মরে যাওয়া ভালো’, বলে জানান তিনি। তিনি এক লাখ টাকার বিনিময়ে কিডনি বিক্রি করতে রাজি হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি।

মহান বিজয় দিবস আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয়। কিন্তু জাতীয় স্মৃতিসৌধের পাদদেশেই দাঁড়িয়ে থাকা মোহাম্মদ ইউনুস আলীর জীবন মনে করিয়ে দেয়— স্বাধীনতার আনন্দ তখনই পূর্ণতা পায়, যখন কেউ তিনদিন না খেয়ে থাকতে বাধ্য হয় না।

আমানউল্লাহ খান/এসএসকে

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর