ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে জাবিতে প্রকাশ্যে ইসলামী ছাত্রী সংস্থা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:২২
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এসেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা, জাবি শাখা। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সহায়তায় তথ্যসেবা কার্যক্রম চালুর মধ্য দিয়ে সংগঠনটি ক্যাম্পাসে নিজেদের প্রকাশ্য উপস্থিতি জানান দেয়।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে ‘হেল্পডেস্ক ও তথ্যকেন্দ্র’ ব্যানারে সংগঠনটিকে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্র সংক্রান্ত তথ্য, দিকনির্দেশনা ও সাধারণ সহযোগিতা দিতে দেখা যায়। এর আগে জাবিতে ইসলামী ছাত্রীসংস্থাকে নিজস্ব ব্যানারে কোনো প্রকাশ্য কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভানেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমাদের মতাদর্শের সঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কিছু আদর্শিক মিল থাকলেও সাংগঠনিকভাবে আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’
গণঅভ্যুত্থানের পর ক্যাম্পাসে সংগঠনটির কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমরা ধীরে ধীরে কাজ শুরু করি। আস্তে আস্তে সুযোগ তৈরি হয়, এরপর কাজ গোছানোর একটা পর্যায়ে আসি। যেহেতু মেয়েদের সংগঠন, কাজগুলো গোছাতে সময় লেগেছে। এখন আমরা একটি মোটামুটি সুসংগঠিত অবস্থায় পৌঁছেছি।’
কমিটি ও জনবল প্রসঙ্গে তিনি জানান, বর্তমানে সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক কোনো কমিটি নেই। জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমি এখন সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ইনশাআল্লাহ ২০২৬ সালে আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে তথ্যকেন্দ্রে ১০ থেকে ১৫ জন এবং বাইরে পরীক্ষার্থীদের সহায়তায় ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য কাজ করছেন।’
আত্মপ্রকাশের আগে সংগঠনটির কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা একেবারেই নিষ্ক্রিয় ছিলাম, এমন নয়। যেসব সামাজিক বা মানবিক কার্যক্রম আমাদের মতাদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, সেসব কার্যক্রমে আমরা অংশ নিয়েছি। তবে ভবিষ্যতে আমাদের আদর্শবিরোধী কোনো কার্যক্রমে আমরা অংশ নেব না।’
এদিকে ইসলামী ছাত্রীসংস্থা সম্পর্কে আগে থেকে অবগত ছিলেন না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আজ সাংবাদিকরা যেভাবে প্রথম তাদের দেখেছেন, আমরাও ঠিক সেভাবেই প্রথম দেখেছি। আমরা আশা করি, তারা সামনের দিনে ইসলামি মূল্যবোধের ভিত্তিতে ছাত্রী সমাজের কল্যাণে কাজ করবে এবং ক্যাম্পাসের যৌক্তিক আন্দোলনগুলোতেও শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে।’
ছাত্রীসংস্থার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের সম্পর্ক নেই— এমন বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইসলামী ছাত্রশিবির একটি স্বতন্ত্র ছাত্র সংগঠন। আমাদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দল বা অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের গঠনতান্ত্রিক সম্পর্ক নেই। ছাত্রীসংস্থার সঙ্গেও আমাদের কোনো সাংগঠনিক বা কর্মপদ্ধতিগত মিল নেই। তবে আদর্শিক দিক থেকে কিছু ক্ষেত্রে মিল থাকতে পারে।’
ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ইসলামী ছাত্রীসংস্থার প্রকাশ্য আত্মপ্রকাশকে ঘিরে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, ভবিষ্যতে সংগঠনটির কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে তা সময়ের সঙ্গে স্পষ্ট হবে।
আমানউল্লাহ খান/এসএসকে

