ইট–পাথরের শহর ছাড়িয়ে নীলের পথে ডিআইইউসাস
তানজিল কাজী, ডিআইইউ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:০২
একাডেমিক পড়াশোনা, সংবাদ সংগ্রহের ব্যস্ততা, ডেডলাইন আর নিরবচ্ছিন্ন দায়িত্ব— সব মিলিয়ে সাংবাদিকতার পথচলা কখনো কখনো নিঃশ্বাস নেওয়ারও অবকাশ দেয় না। ঠিক সেই কর্ব্যস্ততার ফাঁকে প্রশান্তির ছোঁয়া হয়ে আসে বার্ষিক ভ্রমণ। এমনই এক স্বস্তির আয়োজন হয়ে উঠেছিল ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতির বার্ষিক ভ্রমণ ২০২৫।
নতুন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এই ভ্রমণ শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি ছিল সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের এক গভীর মিলনমেলা। পুরোনো স্মৃতি আর নতুন স্বপ্নের মেলবন্ধনে ভ্রমণটি পরিণত হয় ভালোবাসা ও আন্তরিকতার এক অনন্য অধ্যায়ে। ইট–পাথরের ক্লান্ত নগরজীবন থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে সমুদ্রের বুকে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস নেওয়ার এই সুযোগ যেন সবার মনে এনে দেয় নতুন প্রশান্তি।
আনন্দঘন যাত্রার শুরু
ভোরের আলো ফোটার আগেই নির্ধারিত স্থান থেকে যাত্রা শুরু করে সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা। বাসভর্তি প্রাণবন্ত আড্ডা, হাসি আর স্মৃতিচারণায় যাত্রাপথেই তৈরি হয় উৎসবের আবহ। পরিচিত শহর ধীরে ধীরে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যায় প্রকৃতির হাতছানি। ঢাকা থেকে কক্সবাজার, পরে টেকনাফ—দক্ষিণের সৌন্দর্য দেখার আগ্রহে মুখর ছিল পুরো দল।

প্রকৃতির কোলে প্রাণের জাগরণ
সবুজে ঘেরা পরিবেশ, নীল আকাশ, সাগরের ঢেউ আর নির্মল বাতাস যেন মুহূর্তেই দূর করে দেয় দীর্ঘদিনের ক্লান্তি। সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে কেউ ব্যস্ত হয়ে পড়েন ছবি তুলতে, কেউ গল্পে মেতে ওঠেন, আবার কেউ নীরবে প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে চেষ্টা করেন। এই নির্ভার সময়টুকু সবার মনেই এনে দেয় প্রশান্তির এক গভীর অনুভূতি।
আড্ডা, আনন্দ ও সহমর্মিতা
ভ্রমণের অন্যতম আকর্ষণ ছিল দলীয় আড্ডা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। সহকর্মীদের সঙ্গে এমন নির্ভেজাল সময় কাটানো পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে তোলে। এখানে নেই পড়াশোনার চাপ, নেই সংবাদ সংগ্রহের দৌড়ঝাঁপ—আছে শুধু সহমর্মিতা, বন্ধুত্ব আর একে অপরের প্রতি আন্তরিকতা।
নেতৃত্বের অনুপ্রেরণামূলক বার্তা
ভ্রমণ উপলক্ষে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সাংবাদিক সমিতির উপদেষ্টারা বলেন,এ ধরনের আয়োজন শুধু বিনোদনের জন্য নয়, ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐক্যবদ্ধ ও প্রেরণাদায়ী পরিবেশ থেকেই দায়িত্বশীল ও মানবিক সাংবাদিকতা গড়ে ওঠে। পড়াশোনার পাশাপাশি তোমাদের একজন আদর্শবান সাংবাদিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।এই বক্তব্য সদস্যদের মধ্যে নতুন করে আত্মবিশ্বাস ও অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলে।
স্মৃতিতে রয়ে যাবে ভালোবাসার দিনগুলো
কক্সবাজারের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা এবং টেকনাফ প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিচয় ভ্রমণটিকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে। দুই দিনের এই সফর ছিল শেখা, আনন্দ ও আবেগের এক সুন্দর সমন্বয়। ফেরার পথে শরীরে ক্লান্তি থাকলেও মনে ছিল পরিপূর্ণ তৃপ্তি। ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি হওয়া অসংখ্য মুহূর্ত ভবিষ্যতে আবারও হাসি ও স্মৃতির খোরাক হয়ে থাকবে।ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাংবাদিক সমিতির এই বার্ষিক ভ্রমণ তাই নিছক একটি সফর নয়—এটি ছিল বন্ধন, ভালোবাসা, অনুপ্রেরণা আর নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যাওয়ার এক হৃদয়ছোঁয়া গল্প।

