Logo

ক্যাম্পাস

জকসু নির্বাচন মঙ্গলবার

জান্নাতুন নাইম

জান্নাতুন নাইম

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:৪৫

জকসু নির্বাচন মঙ্গলবার

নিরাপত্তায় বেষ্টিত ক্যাম্পাস। ছবি : বাংলাদেশের খবর

      • প্রস্তুত ভোটকেন্দ্র
      • নিরাপত্তায় বেষ্টিত ক্যাম্পাস
      • নারী ভোটাররা হতে পারেন গেম চেঞ্জার

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামীকাল (৩০ ডিসেম্বর)। দীর্ঘ দুই দশক পর আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত জকসুর ভোটগ্রহণ বাস্তবায়ন হতে চলেছে। এদিন ৩৯টি কেন্দ্রে ১৭৮টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এদিকে এবারের নির্বাচনে গেম চেঞ্জারের ভূমিকা রাখতে পারেন নারী ভোটাররা।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, একাডেমিক ভবন ও মিলনায়তনগুলোতে বুথ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। 

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের অধীনে শহীদ সাজিদ ভবনের বিভিন্ন তলায় একাধিক কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে। ভবনের নিচতলায় ১২টি, দ্বিতীয় তলায় ম্যানেজমেন্ট, আইন ও সাংবাদিকতা বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের জন্য ২৪টি এবং তৃতীয় তলায় কম্পিউটার সায়েন্স ও ফিন্যান্সসহ অন্যান্য বিভাগের জন্য ২৪টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে।

এ ছাড়া সামাজিক বিজ্ঞান ভবন-১ ও ২, কলা ভবন, বিজ্ঞান ভবন, মনোবিজ্ঞান ভবন এবং বজলুর রহমান মিলনায়তনে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর জন্য আলাদা আলাদা বুথ নির্ধারণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামের সামনে মার্কেটিং বিভাগের জন্য বসবে ৬টি বুথ। সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি ভোটগ্রহণ শেষে ভোট গণনার পুরো প্রক্রিয়া লাইভ সম্প্রচারের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. কানিজ ফাতিমা কাকলি বলেন, ‘ছোট ক্যাম্পাস আমাদের বাস্তবতা। নির্বাচনে ১৬ হাজার ৬৪৯ ভোটারের জায়গা দেওয়া চ্যালেঞ্জিং। তবে আশা করছি, নির্বাচন যথাযথভাবে, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।’

নিরাপত্তায় বেষ্টিত ক্যাম্পাস
২৯ ডিসেম্বর সকাল থেকে ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা দেখা গেছে। নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্যাম্পাসের ভেতরে ও বাইরে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও রেঞ্জার ইউনিট শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে।

একই সঙ্গে কেবল অনুমোদিত ব্যক্তি, ভোটার, শিক্ষক এবং নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরাই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। এ জন্য নির্ধারিত পরিচয়পত্র বহন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরিচয়পত্র সংগ্রহসংক্রান্ত তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সামগ্রিকভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর থাকবে।’

গেম চেঞ্জার হবে নারী ভোটাররা
কেন্দ্রীয় সংসদের প্রার্থী তালিকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবারের নির্বাচনে নারী প্রার্থীর সংখ্যা মাত্র ১৬ জন। সাধারণ সম্পাদক পদে ২ জন, নির্বাহী সদস্য পদে ৭ জন, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে ২ জন এবং পাঠাগার সম্পাদক, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদকসহ কয়েকটি পদে একজন করে নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলে ২ জন, ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেলে ৪ জন, ছাত্রশক্তি সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান’ প্যানেলে ২ জন এবং ছাত্রফ্রন্ট সমর্থিত ‘মওলানা ভাসানী ব্রিগেড’ প্যানেলে ৭ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন।

এদিকে নারী ভোটারের সংখ্যা ৮ হাজার ৪৭৯ জন, যা মোট ভোটারের ৫০ দশমিক ৯২ শতাংশ। নারী ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা মূলত হলের আবাসন সংকট, সুপেয় পানির অভাব, খাবারের মান এবং সার্বিক নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। ছাত্রী হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘৬০০ সিটের বিপরীতে প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী থাকেন। সুপেয় পানি ও পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা নেই। যারা এসব সমস্যা সমাধান করতে পারবে, তাদেরই আমরা ভোট দেব।’

প্রস্তুত ভোটকেন্দ্র। ছবি : বাংলাদেশের খবর

ছাত্রী হলের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া লিশা বলেন, ‘একটি ভোটই নির্ধারণ করতে পারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ। তাই যারা এই আমানত রক্ষা করতে পারবে, তাদের হাতেই নেতৃত্ব তুলে দিতে চাই।’

মীম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘পূর্ব ইতিহাস ও কর্মকাণ্ড দেখে এবং আদর্শ বিবেচনায় ভোট দেব। মেয়েদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রয়োজন। তবে ক্যাম্পাস ও হলের সমস্যা বুঝতে নারী প্রতিনিধিত্বও গুরুত্বপূর্ণ।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৯ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রার্থী যোগ্য হলে নারী বা পুরুষ— সবার জন্যই সমতার বিষয়টি তারা বিবেচনায় রাখবেন।’

কেন্দ্রীয় সংসদের ‘অদম্য জবিয়ান ঐক্য’ প্যানেলের এজিএস প্রার্থী মাসুদ রানা বলেন, ‘যেই বিজয়ী হোক, নারী ও পুরুষ উভয় শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।’

‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, ‘নারী ভোটারদের প্রভাব কতটা পড়বে, তা এখনই বলা কঠিন।’

ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান প্যানেলের ভিপি প্রার্থী কিশোয়ার আনজুম সাম্য বলেন, ‘যারা বাস্তবে নারীদের অধিকার ও নিরাপত্তার পক্ষে কাজ করেছে, নারীরা তাদেরই ভোট দেবেন।’

এমএইচএস

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর