সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন আওয়ামী লীগ নেতা সামসুদ্দোহা শিমুকে গ্রেপ্তারে বিশেষ টিম গঠন করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, নানা অপরাধে অভিযুক্ত ও একাধিক মামলার আসামি সামসুদ্দোহা শিমু যাতে পালিয়ে দেশের বাইরে চলে যেতে না পারেন সেজন্যে বিমানবন্দর ও সকল স্থলবন্দরে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো জানিয়েছে, শিমুর বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহ চলছে। শিগগিরই তাকে গ্রেপ্তারে দফায় দফায় সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার ইবনে মিজান।

ডিএমপি সূত্র জানায়, শনিবার (৮ মার্চ) রাতে রাজধানীর ভাটারা থানার সাইদনগর হাউজিং এলাকায় সাবেক প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক এমপি আবদুর রহমানের ঘনিষ্ঠ ও একাধিক মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা শিমুকে গ্রেপ্তারে ৩ ঘণ্টা ধরে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। শুরুতে বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীরা ঢুকতে অসহযোগিতা করলেও পুলিশ গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। অভিযানের একপর্যায়ে বাতি নিভিয়ে কৌশলে পালিয়ে যায় শিমু। এ সময় শিমুর স্ত্রী ও মেয়েরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে তীব্র বাদানুবাদে লিপ্ত হয়। 

সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়ার বিষয়টি মোটেও ভালোভাবে নেয়নি পুলিশ। ডিএমপি পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা শিমুকে গ্রেপ্তারে বিশেষ টিম গঠন করেছে বলে জানা যায়। শিগগিরই পলাতক আসামি ও আওয়ামী লীগ নেতা শিমুকে গ্রেপ্তারে যৌথ অভিযানও পরিচালিত হবে বলে ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, শিমু ও তার পক্ষ থেকে কারা গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ রাখছে তাদের বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

ডিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) তালেবুর রহমান জানান, পলাতক আসামি গ্রেপ্তার পুলিশের একটি রুটিন কাজ। পুলিশ আসামি ধরবে সে যত বড় অপরাধীই হোক না কেন । আর সামসুদ্দোহা শিমুর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অপরাধের তথ্য পুলিশের কাছে আছে। তাই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। পালিয়ে যেখানেই যাক না কেন পুলিশ তাকে খুঁজে বের করবে ।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ নেতা ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা সামসুদ্দোহা শিমু ছাত্র জীবনে অধুনা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের তোলারাম কলেজের নেতা ছিলেন। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত গডফাদার শামীম ওসমানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার কথা নিজেই সবসময় গর্বভরে প্রচার করতেন শিমু । তাকে সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার ঘনিষ্ঠভাজন হিসেবেও অনেকে জানেন। 

সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শিমু ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমানের পক্ষে অর্থায়ন করেন বলে জানা যায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতা শিমুর বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগকে আন্দোলন দমাতে অর্থায়ন করার অভিযোগ আছে । এছাড়াও ঢাকা মহানগর এলাকায় বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনরত ছাত্রদের দমন করতে যারা ষড়যন্ত্র করেছে তাদের পরামর্শদাতা হিসেবেও শিমুর নাম আছে।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব পালনকালে অনৈতিকভাবে বিভিন্ন সাপ্ল্যারের কাছ থেকে শিমু অনেক অনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন সেই অভিযোগ আছে । সেই সুবিধা নেওয়া টাকার একটি অংশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে খরচ হয়েছে কিনা এ বিষয়েও তদন্ত হচ্ছে। রাজধানীর ভাটারার সাইদনগর হাউজিংয়ের বি ব্লকের ২৪৯ নম্বর বাড়িটি আওয়ামী লীগ নেতা সামসুদ্দোহা শিমুর।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাদ আলী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে ও হত্যাযজ্ঞ সাধনে অনেক আওয়ামী লীগ নেতার সম্পৃক্ততা আছে। অপরাধী হিসেবে শিমু নামের যে আওয়ামী লীগের নেতার নাম পাওয়া গেছে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক। পালিয়ে থেকে যতই রং বদলাক লাভ হবে না। এ ধরনের অপরাধীকে যে বা যারা আশ্রয় দেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

ডিআর/ওএফ