
পবিত্র মাহে রমজান শেষে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতর এগিয়ে আসছে। ঈদের আনন্দ প্রিয়জনদের সাথে ভাগাভাগি করতে ঢাকার বাসিন্দারা রাজধানী ছেড়ে বাড়ির দিকে রওনা হচ্ছেন। তবে, এ বছর ঈদ যাত্রায় সদরঘাটের লঞ্চ টার্মিনালে আগের মতো সেই চাপ আর নেই। আগের সেই জৌলুশও নেউ তাই। মাত্র ৯ দিন বাকি থাকলেও এখনো যাত্রী সমাগম তেমন বাড়েনি।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে সদর ঘাটে যাত্রী চাপ কমেছে। ঈদযাত্রার আগে যাত্রীর চাপে ঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা একসময় নিয়মিত হলেও এখন তা প্রায় অতীত। তবে, স্থানীয় যাত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে সদরঘাটের চাপ কমলেও গত কয়েকদিনে যাত্রীর চাপ ধীরে ধীরে বাড়ছে। ঈদের প্রস্ততির অংশ হিসেবে লঞ্চগুলোর রঙ করা হচ্ছে। যদিও আগের মতো ভিড় এবং লোকজনের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়নি।
শনিবার (২২ মার্চ) সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীসংখ্যা ছিল খুবই কম। তবে বিকেল ও ইফতারের পর যাত্রীসংখ্যা কিছুটা বাড়ছিল। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালুর পর চাঁদপুর, ভোলা, চরফ্যাশন, লালমোহন, বরগুনা অঞ্চলে তেমন প্রভাব না পড়লেও বরিশাল, ভাণ্ডারিয়া, ঝালকাঠি অঞ্চলের লঞ্চ সংখ্যা কমেছে। তবে ঈদের আগে সদরঘাটে লঞ্চের সংখ্যা বেড়ে যায়।
এদিকে এবারের ঈদকে সামনে রেখে ডেকের ভাড়া না বাড়লেও বেড়েছে কেবিনের ভাড়া। বরিশালগামী লঞ্চের সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ২০০ টাকা বাড়িয়ে ১,২০০ টাকা এবং ডাবল কেবিনের ভাড়া ৪০০ টাকা বাড়িয়ে ২,৪০০ টাকা করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরগামী যাত্রী আরমান হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু হওয়ার পর এখন আর আগের মতো ভিড় হয় না। লঞ্চে ভিড় কম হওয়ায় অনেকটা স্বস্তি লাগে। কিন্তু এতে সদরঘাটের আগের জৌলুশ হারাচ্ছে। যে লঞ্চ ঘাটের জন্য সদরঘাটের পরিচিতি সেই ঘাটে ভিড় যেন এখন স্বপ্নের মতো।’
লঞ্চ মালিক সমিতির সূত্রে জানা যায়,আগের চেয়ে লঞ্চ কমেছে। আগে ঢাকা থেকে প্রায় ৫০টি নৌ রুটে ২২৫টি লঞ্চ চলত, এখন যাত্রী কমার কারণে লঞ্চ সংখ্যা কমে ১৯০-এ দাঁড়িয়েছে। যাত্রী সংকটে কমেছে নৌপথও। প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৬৫টি লঞ্চ চলাচল করে সদরঘাট থেকে বিভিন্ন নৌপথে।
তাসরিফ-১ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. আকতার হোসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর শুধু বরিশাল, পটুয়াখালী এবং চাঁদপুরই নয়, সারাদেশের নৌপথে তার প্রভাব পড়েছে। আগের মতো যাত্রীর চাপে ঘাট বন্ধ হওয়ার ঘটনা আর ঘটছে না। ঈদের আগে আগাম টিকিটও এখন আর প্রয়োজন হয় না।
এদিকে, সুন্দরবন-৩ লঞ্চের সুপারভাইজার ইমরান আলী জানান, আগের চিত্র এখন আর নেই। একসময় যেই রুটে ৩০টি লঞ্চ চলত, সেখানে এখন ৯-১০টি লঞ্চই চলাচল করছে। তবুও ঈদের জন্য লঞ্চগুলো মেরামত করা হয়েছে।
গ্লোরি অব শ্রীনগর-৭ লঞ্চের সুপারভাইজার রাকিব হোসেন আশা করছেন, সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার পর ২৬ রোজার পর থেকে যাত্রী সংখ্যা বাড়তে পারে। তিনি জানান, যাত্রাপথে দুর্ঘটনা এড়াতে লঞ্চগুলোর কিছু মেরামতও করা হয়েছে।
এমভি অথৈ-১ লঞ্চের সুপারভাইজার সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার লঞ্চের বয়স মাত্র তিন বছর, তাই বেশি মেরামত করার প্রয়োজন পড়েনি।’ তবে ঈদ সামনে রেখে ভিড় বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ঈদযাত্রা শুরু হলেও সদরঘাটের ঐতিহ্য ও লঞ্চ যাত্রার শত বিচিত্র্য গল্পগুলো যেন ক্রমেই অতীত হয়ে উঠছে।