চিকিৎসার সময় নবজাতকের হাত ভাঙার অভিযোগ, ডেলটা হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৫, ২৩:২৬
-6830afd8346ef.jpg)
রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত ডেলটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফটোথেরাপি চলাকালীন সময়ে ৭ দিন বয়সী এক নবজাতকের হাত ভেঙে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও শিশুর পরিবার দাবি করছে, চিকিৎসার সময়ই এই ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ আমলে নিতে থানা পুলিশের অনীহা এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হুমকির মুখে শেষ পর্যন্ত আদালতের দ্বারস্থ হন বলে জানিয়েছেন শিশুর অভিভাবকরা। আদালতের নির্দেশে বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে দারুস সালাম থানা পুলিশ।
মামলার এজাহার পর্যালোচনা করে জানা যায়, বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি থাকায় ফটোথেরাপির জন্য গত ৩ এপ্রিল ওই নবজাতককে মিরপুরের ডেলটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পরপরই হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, দীর্ঘসময় আনইন্টারাপটেডলি থেরাপি নেওয়ার জন্য তারা দুই থেকে তিনবার ব্রেস্ট ফিডিং করতে দেবেন এবং বাকি সময় ব্রেস্ট পাম্প করে তাদের কাছে দিতে হবে। হাসপাতালের নার্সরাই বাচ্চাকে খাওয়াবে। চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে অভিভাবকদের কেউই বাচ্চার সঙ্গে থাকতে পারবেন না। ওই দিন রাত ১২টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত মা-বাবা বাচ্চার কাছাকাছিও যেতে পারবেন না।
হাসপাতালের নিয়ম মেনেই রাত ১২টার দিকে স্বাভাবিকভাবে খাবার দেন বাচ্চার মা। পরদিন (৪ এপ্রিল) সকাল ৭টায় পুনরায় বাচ্চাকে খাওয়াতে মাকে ডেকে নিয়ে যান নার্সরা। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও খাওয়ানো সম্ভব হয়নি। কারণ কোনোভাবেই বাচ্চার ঘুম ভাঙানো যায়নি। সে সময় কর্তব্যরত নার্সরা জানান, ঘুম ভাঙলে ফের ডাক দেওয়া হবে। যে কারণে পুনরায় ব্রেস্ট পাম্প করেই বাচ্চাকে খাওয়াতে হয়। সকাল ১০টায় ডিউটি ডাক্তার জানান, বাচ্চার বিলিরুবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে। হাসপাতালের সমুদয় পাওনা পরিশোধের জন্য অভিভাবকদের বলা হয়। সেসব করা হলে ১১টার দিকে নার্সরা বাচ্চাকে তার মায়ের কাছে দেন এবং বাচ্চার ডান হাতে ক্যানোলা পরানো থাকায় ব্যথা আছে জানিয়ে নাড়াচাড়া করতেও নিষেধ করেন। তখনও বাচ্চার ঘুম ভাঙেনি এবং সারা শরীর কাঁথা দিয়ে মুড়িয়ে রাখা ছিল।
বাসায় ফিরে মোড়ানো কাঁথা সরিয়ে দেখা যায়, বাচ্চার ডান হাতের কনুইয়ের ওপরে ভাঙা, সেখানে ধরতে গেলেই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে বাচ্চা। এছাড়া কোনোভাবেই ঘুম ভাঙানো যাচ্ছে না তার। হাত ভাঙা বুঝতে পেরে বাচ্চাকে নিয়ে পুনরায় ডেলটা হাসপাতালের নিওনেটাল ওয়ার্ডে যান। বিষয়টি জানালে ডিউটি ডাক্তার বলেন, ডিসচার্জ করার আগে তিনি নিজে দেখে দিয়েছেন এবং দাবি করেন, বাসায় নেওয়ার পর টানাটানির কারণেই বাচ্চার হাত ভেঙেছে। একপর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক্সরে করার পরামর্শ দিয়ে শ্যামলীর পঙ্গু হাসপাতালে নিতে বলেন। তাদের হাসপাতালে এক্সরে করার সুযোগ নেই বলে জানান। এরপর একটি অভিযোগ দিয়ে বাচ্চাকে নিয়ে শ্যামলীর হাসপাতালে চলে যান অভিভাবকরা। ওই দিন সন্ধ্যার পূর্ব পর্যন্ত বাচ্চার ঘুম ভাঙানো যায়নি এবং কোনোভাবেই খাওয়ানোও যায়নি। সন্ধ্যার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
অভিভাবকদের অভিযোগ, শিশুটির হাতে চোটের বিষয়টি গোপন করতে ঘুমের ওষুধ দিয়ে গভীর ঘুমে রাখা হয়েছিল।
নবজাতকের বাবা নূরের শাফাহ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, যেহেতু রাত ১২টায়ও বাচ্চা স্বাভাবিক ছিল এবং খাওয়াতে পেরেছে কিন্তু সকাল ৭টায় পুনরায় দেখার পর থেকে সে ঘুমিয়েই কাটিয়েছে, তাতে আমাদের ধারণা রাতের কোনো এক সময়ে তার হাত ভেঙেছে এবং সেটা স্বাভাবিক দেখানোর জন্য তাকে কোনো ধরনের সিডেটিভ ব্যবহার করে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিলো। যেন তাৎক্ষণিকভাবে আমরা বিষয়টি বুঝতে না পারি। তিনি বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলেও তারা কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। উল্টো আমাকে মানহানির মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধমিক দিচ্ছেন তারা।
এ ঘটনায় শিশুটির বাবা আদালতে মামলা করেন। মামলায় ডেলটা হাসপাতাল লিমিটেডসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি এখন দারুস সালাম থানা পুলিশ তদন্ত করছে। মামলার এজাহারে যেসব নাম রয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল হুদা, সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. একেএম খাইরুল আনাম চৌধুরী, সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. শাকিল আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা ও নার্স।
এ বিষয়ে দারুস সালাম থানার ওসি রকিবুল হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মিশুক আহমেদ জানান, তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। হাসপাতালের এমডির সঙ্গে এখনো কথা হয়নি। প্রশাসনিক কর্মকর্তার সাথে কথা হয়েছে। ঘটনার দিনের সিসিটিভি ফুটেজ তাদের সংগ্রহে আছে। আমি এখনো হাতে পাইনি।
অভিযোগের বিষয়ে ডেলটা হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘আমাদের এখানে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে নবজাতক শিশুটির বাবার লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। তদন্ত কমিটি অভিযোগের কোনো সত্যতা খুঁজে পায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন শিশুটিকে সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। হাসপাতাল থেকে বাসায় নেওয়ার পর যদি কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, সেটির দায় আমাদের নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে জেনেছি। তাই বিষয়টি আমরা আইনগতভাবে মোকাবেলা করবো।এনএমএম/এমএএস/এমএইচএস