সেল্ফ ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম
‘এক চাপেই পারাপার’—স্বপ্নে ঠিক হলেও বাস্তবে নয়
প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫, ১৫:২৪

নিয়ম মানছেন না বেশিরভাগ পথচারী। ছবি : বাংলাদেশের খবর
ঢাকার রাস্তায় আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে বহু আগেই। সর্বশেষ সংযোজন ‘সেল্ফ ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম’—বোতাম চাপলেই গাড়ি থেমে যাবে, পথচারীরা নির্বিঘ্নে রাস্তা পার হবে। শিরোনামে উঠেছে নানা ধরনের খবর—‘বাটন চেপে পারাপার’, ‘স্মার্ট সিগন্যাল’, ‘নিরাপদ পথচলা’। বাস্তবতা কিন্তু বলছে ভিন্ন কথা, বিশেষত রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকাতে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ফুটপাথে স্থাপিত সেই আধুনিক যন্ত্রটির পাশে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, অনেক পথচারী জানেনই না যন্ত্রটি চালু হয়েছে। কেউ দৌড়ে, কেউ ইশারা দিয়ে, কেউবা গাড়ির ফাঁক গলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছেন ব্যস্ততম সড়ক। ফলে প্রশ্ন উঠছে—শুধু প্রযুক্তি বসালেই কি সচেতনতা তৈরি হয়?
লামিয়া নামের এক স্কুলশিক্ষিকা জানান, ‘আমি আসলে জানিই না এটা কী। সবাই যেভাবে যাচ্ছে, আমিও সেভাবেই গেছি। তবে হ্যাঁ, ব্যবস্থাটা ভালো, যদি সবাই ব্যবহার করতো।’
রহমান নামের এক অফিসগামী বলেন, ‘আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি নিয়ম না মেনে চলতে। আমাদের সচেতন না করলে তো চলবে না। ট্রাফিক পুলিশও দায়িত্বটা এড়িয়ে যাচ্ছে অনেক সময়।’
এক স্কুলছাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। মাঝে মাঝে দেখি, পুলিশ এসে কিছু ছবি তুলে চলে যায়। কাউকে কিছু বলে না। আমাদের যদি বুঝিয়ে বলা হতো, তাহলে বিশৃঙ্খলাটা হয়তো থাকত না।’
পাল্টা বক্তব্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত এক ট্রাফিক পুলিশ জানান, ‘আমরা সকাল থেকেই চেষ্টা করছি মানুষকে বোঝাতে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এত ভিড় আর এত পুরনো অভ্যাস একদিনে বদলানো যায় না। আমরা সচেষ্ট আছি।’
এ যেন প্রযুক্তি আর প্রবণতার এক অসম লড়াই। একদিকে স্মার্ট সিগন্যালের আধুনিকতা, অন্যদিকে সচেতনতার অভাব আর নিয়মভাঙার অভ্যাস। রামপুরা ব্রিজের পাশে দেখা মিলছে সেই চিরচেনা দৃশ্যের—আইন আছে, কিন্তু মানার লোক নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তি তখনই সফল হয় যখন মানুষ তাতে অংশ নেয়। শুধু যন্ত্র বসালেই হবে না, চাই জনসচেতনতা, চাই নিয়ম মানার সংস্কৃতি। তা না হলে ‘এক চাপেই নিরাপদ পারাপার’ থেকে যাবে কাগজের শিরোনামে, বাস্তব জীবনে রয়ে যাবে দৌড়ঝাঁপ আর অনিশ্চয়তা।
রানা/বিএইচ