মগবাজারে আবাসিক হোটেলে মিলল মা-বাবা ও ছেলের লাশ, নেপথ্যে কী?

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ২১:১০

রাজধানীর মগবাজারের একটি আবাসিক হোটেল থেকে একই পরিবারের তিন সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে খাবারের বিষক্রিয়াই কারণ বলে ধারণা করা হলেও পুলিশ বলছে, সব ধরনের সন্দেহ মাথায় রেখে তদন্ত চলছে। স্বাভাবিক মৃত্যু, আত্মহত্যা না কি পরিকল্পিত হত্যা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নিহতরা হলেন মনির হোসেন (৪৫), তার স্ত্রী স্বপ্না আক্তার (৩৫) ও তাদের ১৭ বছরের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলে নাইম হোসেন। পরিবারটি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার দেহলা গ্রামের বাসিন্দা। মনির হোসেন সৌদি প্রবাসী ছিলেন।
রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আলম জানান, মনির হোসেন তার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে ছেলের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসেছিলেন। শনিবার বিকেলে তারা মগবাজারের ‘হোটেল সুইট স্লিপ’-এ ওঠেন।
রোববার সকালে এক আত্মীয় হোটেলে গিয়ে দেখেন স্বপ্না বমি করছেন। সঙ্গে সঙ্গে তাদের আদ-দ্বীন হাসপাতালে নেওয়া হলে স্বপ্না ও ছেলে নাইমকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। কিছুক্ষণ পর মনির হোসেনও অসুস্থ হয়ে পড়লে আইসিইউতে নেওয়া হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনিও মারা যান।
রমনা থানার ওসি গোলাম ফারুক বলেন, আমরা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। হোটেল এবং আশপাশের এলাকায় কারো সন্দেহজনক আনাগোনা ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
হোটেল সুইট স্লিপের সহকারী ম্যানেজার জানান, তাদের সঙ্গে এক কেয়ারটেকার ছিলেন, যিনি বাইরে থেকে খাবার এনে দিতেন। হোটেল থেকে কোনো খাবার খাওয়া হয়নি। হোটেলের কেউ অসুস্থতার খবর আগেই জানত না।
পুলিশ বলছে, সেই কেয়ারটেকার এখন নজরদারিতে আছেন। তদন্তকারীরা দেখছেন খাবার কোথা থেকে আনা হয়েছিল, কেউ কিছু মিশিয়ে দিয়েছিল কি না, সেটা কীভাবে পরিবেশন করা হয়েছিল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রমনা থানার এসআই জালাল উদ্দিন জানিয়েছেন, তিনটি মরদেহ এখন আদ-দ্বীন হাসপাতালে রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে ময়নাতদন্তের জন্য। চিকিৎসকদের প্রাথমিক ধারণা খাবারের বিষক্রিয়া হলেও সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশ সূত্র বলছে, একসঙ্গে তিনজনের মৃত্যু স্বাভাবিক বিষক্রিয়ার ঘটনা হলেও এর পেছনে পরিকল্পিত কিছু থাকতে পারে কি না, তা খুঁজে দেখা হচ্ছে। কেউ হয়তো পারিবারিক কোনো দ্বন্দ্ব বা অন্য কোনো কারণে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে — আবার আত্মহত্যার বিষয়টিও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। তবে এখন পর্যন্ত আত্মহত্যার স্পষ্ট কোনো আলামত মেলেনি।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হোটেল কক্ষের সিসিটিভি ফুটেজ, কেয়ারটেকারের বয়ান, খাবারের উৎস ও ল্যাব রিপোর্ট — সবকিছু যাচাই করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ স্পষ্ট হবে।
এনএমএম/ওএফ