সোহাগ হত্যা
ঘটনাস্থলে আলামতের পাথর, নাকি নতুন চক্রান্ত
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৭:৫২
-6874ef93ae4ac.jpeg)
ছবি : প্রতিবেদক
পুরান ঢাকার আলোচিত সোহাগ হত্যাকাণ্ডে নতুন করে ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য। হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত যে পাথর খণ্ডটি আলামত হিসেবে জব্দ করেছিল পুলিশ। সেটি নিয়ে যখন তদন্ত চলছে, ঠিক তখনই ঘটনাস্থলে উদয় আরেকটি নতুন পাথর খণ্ডের। বিষয়টি নিয়ে নতুন করে নানা প্রশ্নসহ তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য।
কে বা কারা রেখেছে এই পাথর? এটি কি প্রকৃত খুনের অস্ত্র, নাকি পরিকল্পিত বিভ্রান্তি? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলেও। স্থানীয়দের ধারণা, এই পাথরের আবির্ভাব অস্বাভাবিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
তবে পুলিশের দাবি, সোহাগ হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত পাথর খণ্ডটি তারা জব্দ করেছে। যেটি তদন্তের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই পাথর খণ্ডটি এখন থানার মালখানায় রয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বাংলাদেশের খবরকে বলেছেন, মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে এটি বিভ্রান্তিকর। ঘটনাস্থলে কে বা কারা নতুন করে আবার পাথর রেখেছে এবং এর পেছনে কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে আছে কিনা এমন বিষয়গুলো জোর দিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ঘটনাস্থলে নতুন করে আসা পাথর খণ্ডটি অতি উৎসাহী, ভিউ ব্যবসায়ী প্রকৃতির কন্টেন্ট ক্রিয়টেরদের রাখা। এখন পর্যন্ত অন্তত কয়েকশো কন্টেন্ট ক্রিয়েটর সেখানে বিভিন্নভাবে ভিডিও ধারণ করেছে। ভিডিওতে ভিউ বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের কেউ পাথর খণ্ডটি ঘটনাস্থলে রেখেছেন বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। অন্যথায় সেখানে পাথর খণ্ড রাখার আর কোনো যুক্তি বা কারণ নেই বলেও বলছেন স্থানীয়দের অনেকে।
এদিকে ঘটনার ভিডিও ভাইরালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ‘ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা নতুন পাথর খণ্ড’ নিয়ে সর্বোচ্চ ভিডিও বানাতে দেখা গেছে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের। বহুল প্রচারের কারণে পাথর খণ্ডটিই এখন ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। যে কারণে কেউ কেউ বলছেন, এটাই আসল খুনের অস্ত্র, আবার কেউ বলছেন, আলামতের গড়মিলেই প্রমাণ করে পুলিশের ব্যর্থতা। এদিকে ভাইরাল কনটেন্টে একের পর এক দেখা যাচ্ছে, পাথরটি হাতে নিয়ে করা হচ্ছে বিশ্লেষণ। চলছে পাথর খণ্ডের ধরন, ওজন এবং রক্তের দাগ অনুসন্ধানের নাটকীয়তাও।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াসিন সিকদার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এই পাথর খণ্ডটি আলামত নয়, এটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর। প্রকৃত পাথর খণ্ড আমরা আগেই উদ্ধার করেছি। এটি থানার মালখানায় রয়েছে। কে বা কারা নতুন করে এই বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, মামলার তদন্ত এখন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে। তাই এখনো এই গুজব নিয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে বিষয়টি নজরদারিতে রয়েছে। তবে হঠাৎ করে কীভাবে এই পাথর ঘটনাস্থলে এলো তা বলতে পারছে না পুলিশ।
জানতে চাইলে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, যে জায়গায় নতুন পাথরটা পড়ে আছে, সেটা আগে পরিষ্কার ছিল, কিছুই ছিল না সেখানে। কেউ রাতের আঁধারে এনে ফেলেছে কিনা কে জানে! সবই রহস্যময় লাগছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একজন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এটি তদন্ত ব্যাহত করতে সাজানো ষড়যন্ত্রও হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আলামতের মতো বস্তু যদি ঘটনাস্থলে পরে থাকে, তাহলে তা গুরুতর ব্যর্থতা। এখন পুলিশের ব্যর্থতা ফুটিয়ে তোলার জন্যই কেউ এটি করেছে নাকি কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে তা জানা যায়নি।
তিনি আরও বলেন, এ ধরনের বিভ্রান্তি শুধু জনমত কিংবা পুলিশের ব্যর্থতা প্রমাণের ষড়যন্ত্রই নয় কেবল আদালতের দৃষ্টিভঙ্গিও প্রভাবিত করতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকার মতো সিসিটিভি ও নিরাপত্তাকর্মী-সজাগ এলাকায় কীভাবে একাধিক ‘আলামতসদৃশ’ পাথর খণ্ড পাওয়া যাচ্ছে, তা নিয়েই সর্বোচ্চ স্তরেও উঠেছে প্রশ্ন। তদন্তে পুলিশের পাশাপাশি ডিবি ও সিআইডির সংশ্লিষ্ট ইউনিট যুক্ত হলেও, এ ধরনের বিভ্রান্তি তদন্তের স্বচ্ছতা ও সক্ষমতা নিয়েও সন্দেহ তৈরি করছে।
এনএমএম/এএ