‘প্রতারণার ফাঁদে’ ব্যবসায়ী
প্রাণনাশের হুমকিতে দেশে জিডি, মালয়েশিয়ায় মামলা

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৯:১৪

ছবি : প্রতিনিধি
দেশে-বিদেশে ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে বিনিয়োগের নামে এক ব্যবসায়ীর ৬৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কথিত এক উদ্যোক্তা। বিনিয়োগ ফেরত চাওয়ায় হুমকি, গালাগাল আর হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজধানীর নয়া পল্টনের ভুক্তোভোগী সেই ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম (পারভেজ)।
অভিযুক্ত প্রতারক উদ্যোক্তা সুলতান ইমাম মেহেদি মালয়েশিয়া-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘মঙ্গল গ্লোবাল সার্ভিসেস লিমিটেডে’র স্বত্বাধিকারী। যিনি নিজেকে ‘এসআই মেহেদি’ নামে পরিচয় দিয়ে থাকেন। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন। ইতোমধ্যে মালয়েশিয়াতেও প্রতারক এসআই মেহেদির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন তিনি।
বুধবার (১৫ জুলাই) ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতারিত হওয়ার এ চিত্র তুলে ধরেন ভুক্তোভোগী ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের নভেম্বরে মালয়েশিয়ায় তার বন্ধুর ছেলের উচ্চশিক্ষা-সংক্রান্ত খোঁজ নিতে যান জাহিদুল। সেখানে পরিচয় হয় এসআই মেহেদির সঙ্গে। নিজেকে মালয়েশিয়ায় সফল উদ্যোক্তা এবং শিক্ষার্থী প্লেসমেন্ট সংক্রান্ত কাজে জড়িত দাবি করে ভর্তি প্রক্রিয়ার জন্য জাহিদুল ইসলামের কাছে প্রথমে ৬ লাখ টাকা দাবি করেন মেহেদি। এরপর ধাপে ধাপে বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব, খামার প্রকল্প, জমির চুক্তি ইত্যাদির কথা বলে আরও ৫০ লাখের বেশি টাকা হাতিয়ে নেন। টাকা দিয়েও বারবার প্রতারণার শিকার হন জাহিদুল।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, চুক্তি করতে চাপ প্রয়োগ করে উত্তরায় একটি ব্যক্তিগত বৈঠকে তার সঙ্গে ১ কোটি ৭১ লাখ টাকার একটি বিনিয়োগ চুক্তি করে মেহেদি। পরে চেক, ব্যাংক ট্রান্সফার এবং নগদ মিলে প্রায় ৬৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেন তিনি। অবশেষে প্রতারণার প্রমাণ পেয়ে মালয়েশিয়ায় একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ এসআই মেহেদিকে গ্রেপ্তারও করে। তখন মেহেদির স্ত্রী এসে কান্নাকাটি করে টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এমনকি স্বামীকে ‘অমানুষ’ আখ্যায়িত করে ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলামের কাছে ক্ষমাও চান।
মালয়েশিয়ার পুলিশি হেফাজতে থাকাকালে এসআই মেহেদি একটি সাদা কাগজে লিখিত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, যেখানে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ায় থাকা কিছু সম্পত্তি দিয়ে আংশিক অর্থ ফেরত এবং বাকিটা প্রতি মাসে কিস্তিতে পরিশোধ করবেন বলে বলা হয়। এরপর তিনি জামিনে মুক্তি পান এবং দেশে ফিরে আসেন।
তবে দেশে ফেরার পর মেহেদির আচরণ পাল্টে যায়। চুক্তি অনুযায়ী টাকা পরিশোধ বন্ধ করে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেন তিনি। উল্টো গত ১১ জুলাই একটি ফোন কলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও প্রাণনাশের হুমকি দেন জাহিদুল ইসলামকে। একইসঙ্গে ভয় দেখান, ‘বোরখা পরে বের হবি, নইলে মামলা দেব।’
এসব ঘটনায় জাহিদুল ইসলাম ১২ জুলাই পল্টন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এ অভিযোগের পর মেহেদির হুমকি আরও বেড়েছে। এমনকি থানার দায়িত্বরত এসআই মোখলেসকেও হুমকি দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাহিদুল ইসলামের দাবি, মেহেদি শুধু তার সঙ্গেই প্রতারণা করেননি। তার আপন ছোট ভাই আবদুল কাদের মাছুমও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেহেদির প্রতারণার বহু তথ্য প্রকাশ করেছেন। এ কারণে মেহেদি নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধেও সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আমার বিনিয়োগের টাকা ফেরত চাই। এই প্রতারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে আরও অনেকেই তার ফাঁদে পড়বে। আমার পরিবার এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সংবাদ সম্মেলন শেষে একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি সুলতান ইমাম মেহেদি ওরফে এসআই মেহেদি।
এনএমএম/এএ