নীরব এলাকা ঘোষণার ৯ মাস পরও কমেনি হর্নের দৌরাত্ম্য
প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৫, ২১:৪৮

প্রতীকী ছবি (এআই দিয়ে তৈরি)
ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণার নয় মাস পরও পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং সচিবালয়, বিমানবন্দর, সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ ঘোষিত ১০টি সংবেদনশীল এলাকায় এখনও অব্যাহত রয়েছে উচ্চ শব্দের হর্নের দৌরাত্ম্য। সরকারি নির্দেশনা ও আইন থাকলেও বাস্তবে কার্যকর মনিটরিং বা আইন প্রয়োগ প্রায় নেই বললেই চলে।
‘শব্দ সন্ত্রাস’ রোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, হর্নের আমদানি বন্ধ না হলে কেবল মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। এজন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সরাসরি সহায়তা প্রয়োজন।
২০২৪ সালের শেষ দিকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ঢাকার ১০টি এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করে— হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সচিবালয়, আগারগাঁও, সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সুপ্রিম কোর্ট, বিএসএমএমইউ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, শিশু হাসপাতাল এবং ইডেন কলেজ এলাকা। ‘শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬’-এ এসব এলাকায় হর্ন নিষিদ্ধ হলেও বাস্তবে হাইড্রোলিক ও উচ্চ শব্দের হর্ন বাজানো অব্যাহত রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সচিবালয় বা বিমানবন্দর এলাকায় দিনরাত হর্ন বাজিয়ে চলছে বাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল এমনকি অ্যাম্বুলেন্সও। রাত ১০টার পর ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের শব্দদূষণও বেড়ে যায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, নীরব ঘোষণা শুরুর পর কিছুদিন পুলিশ ও বিআরটিএর তৎপরতা থাকলেও পরে আর কাউকে হর্ন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে দেখা যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিকাংশ চালক জানেই না তারা নীরব এলাকায় হর্ন বাজাচ্ছে। সচিবালয়ের ১ নম্বর গেইটের সামনেও উচ্চ শব্দে হর্ন বাজতে শোনা যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জানালা খুলে কাজ করা যায় না, মাথা ধরে যায়।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) সৈয়দ আহম্মদ কবীর বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘বিমানবন্দর বা সচিবালয় খুব ব্যস্ত এলাকা। তবুও আমরা প্রতি মাসে ৮-১০ দিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি।’
তিনি বলেন, হর্ন নিয়ন্ত্রণে হর্ন আমদানি নিষিদ্ধ করতে নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, যেখানে বিআরটিএর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ আছে।
বিআরটিএর উপ-পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ‘আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ করছি। সড়কে হর্ন নিয়ন্ত্রণে আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা রয়েছে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) এক নেতা বলেন, ‘নীরব এলাকায় হর্ন বন্ধে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর খামখেয়ালির কারণে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। নজরদারি ছাড়া কোনো পরিকল্পনা কার্যকর হয় না।’ তিনি নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, শব্দমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র স্থাপন, লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগ, হর্নবাজি নিরুৎসাহিত করতে স্টিকার ও সচেতনতামূলক ডিজিটাল বার্তা চালুর প্রস্তাব দেন।
এমএইচএস